শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৫০ দুপুর
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৫০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আধাঁরে আলোর দিশারী ওরা ১১জন !

তপু সরকার হারুন : শেরপুর জেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপথ আর প্রত্যন্ত গ্রামের শারমিন, নাসিমা, জনি, বাবুল, শামীম, নুসু, নমিতা রানী, মাহমুদুল, আলী আকবর, ওয়াসিম আকরাম ও আলমগীর কবির ওরা ১১ জন এখন আঁধারে আলোর দিশারি হয়ে উঠেছে।

তারা সবাই দারিদ্র্যর কঠোর নির্মমতাকে পেছন ফেলে কেবলমাত্র নিজেদের উদ্যম, প্রচেষ্ঠা আর মেধার উপর ভর করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তবে এদের সেই ইচ্ছা শক্তি আর উদ্যোমের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন সেনা সদস্য শাহীন মিয়া।

জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী গ্রামের ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতা অর্থের অভাবে তার মেয়েকে পড়া লেখা বন্ধ করে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত সৈনিক শাহীন মিয়ার প্রচেষ্ঠায় শারমিন শিক্ষা জীবনের ফিরে এসে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়। এবার ফিসারিজ বিষয়ে ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পার্শ্ববর্তী নন্নী পশ্চিম পাড়া গ্রামের অসুস্থ ভ্যান চালকের কন্যা মেধাবী নাসিমা খাতুন বাল্যবিয়ের শিকার হতে যাচ্ছিল অষ্টম শ্রেনীতেই। অভাব যেখানে নিত্য সঙ্গী সেখানে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। তাই ভ্যান চালক বাবা এক পেটের খাবারের বোঝা কমাতে মেয়েকে বিয়ে দিতে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সৈনিক শাহীন মিয়ার কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় নাসিমা। শুরু হয় নতুন করে শিক্ষা জীবন। এসএসসি, এইচএসসি এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে নাসিমা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শ্রীবরদীর লংগরপাড়া গ্রামের পিতৃহারা শামীম বাবা মারা যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় পড়াশুনা। ঝিনাইগাতীর লয়খা গ্রামের ভাংগারি বিক্রেতা নূর হোসেন নশুর বাবা অসুস্থ হওয়ায় সেও পড়াশুনা চুকিয়ে বাধ্য হয় বাবার ভাংগারির ব্যবসা চালিয়ে নিতে কিন্তু শাহীন মিয়ার প্রচেষ্ঠায় শিক্ষামুখী হয়ে এরা একজন ফিসারিজ আরেকজন অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েছেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অদম্য এসব মেধাবীদের গল্পের শেষ নেই। সবার জীবনের গল্প প্রায় একই। দিন মজুর, ভ্যান চালক, রিক্সা চালক আর শ্রমিকের ঘরের সন্তান এরা। এক বেলা আধ বেলা খেয়ে না খেয়ে নিজে শ্রমিকের কাজ করে এবং বিভিন্ন উৎসবে উঠেনি তাদের কারোরই গায়ে নতুন জামা। বছরে এক বার বন্ধু-বান্ধর বা প্রিয়জনদের নিয়ে হয়নি কখনও দেশের দর্শনীয় স্থানে বেড়ানোর সুযোগ। এদের চোখে কেবলি ছিল পড়াশোনা করে নিজেদের অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন। সে স্বপ্নের পথেই এগুচ্ছে তারা। তবে এ পথ এখনও পুরোপুরি মসৃন নয়।

এদের যিনি স্বপ্ন দেখিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি হলেন শাহীন মিয়া। সেই শাহীন মিয়া দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় শপথ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজের পেশার পাশপাশি কেবলমাত্র ছুটি’র সময়টাকে বেছে নিয়ে তিনি শুরু করেছেন শিক্ষা নিয়ে আরেক যুদ্ধ। সেটা হলো সমাজের দারিদ্রের কষাঘাতে শিক্ষা জীবন থেকে পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের আলোর পথে নিয়ে আসা। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাষ্ট্রীয় পদকও পেয়েছেন (বিশিষ্ট সেবা পদক)

শাহীন পেশায় একজন সেনাসদস্য হওয়ায় তার মধ্যে রয়েছে মানব সেবার দৃঢ় মানসিকতা। তার প্রচেষ্টায় নিভে যাওয়া প্রদীপ গুলো আলো ছড়াচ্ছে। তিনি আলোকিত করতে চান পরিবার, সমাজ ও দেশ। তার এ প্রচেষ্টা অল্পদিনেই ডানা মেলেছে। সাড়া পড়েছে চারিদিকে। ওই ১১ জনের মতো অনেক নিভে যাওয়া প্রদীপে এখন আলো জ্বলছে।

এ যেন আধারে আলোর দিশারি তারা। এদের মতো জেলায় আরো শতশত স্বপ্নহীন ছেলে মেয়ে এখন দেখছে আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন। এই সাহসী সেনাসদস্য শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোড়জান গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষকের সন্তান। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন পরোপকারী। কোনো বাধাঁই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দরিদ্র অসহায় মেধাবীদের প্রতি বরাবরই ছিল তার হৃদয়ের টান।

চলতি সেশনে ওই ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে যেতে শহীন মিয়ার শ্রম, ঘাম, মেধার পাশপাশি নিজের বেতনের প্রায় সিংহভাগই ব্যায় হয়ে যায়। তবে সংগ্রামী ওই মেধাবীদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর শেরপুরের জেলা প্রশাসকসহ অনেক বৃত্তবান ও হৃদয়বান মানুষের সহযোগীতার হাত শাহীন মিয়াকে অনেকটা হলেও শক্তি যুগিয়েছে। তবে মূল কান্ডারির এখন স্বপ্ন ও ধ্যান আগামীতে তাদের চলার পথ মসৃন রাখতে যদি সমাজের আরো কোন সহযোগীতার হাত মিলে তবে সত্যি সত্যি ওরা ১১ জন ভবিষ্যতে দেশের কান্ডারি হয়ে উঠবে।

এবিষয়ে ডপস প্রতিষ্ঠাতা শাহীন মিয়া জানায়, এই এগারো জন সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছে মোট ২৬ জন। আরো ১৪ জন আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ৫২ জনের মতো স্কুল সহ সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন শতাদিক। তাদের সকলের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ দেওয়া সংগঠন বা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তা পেলে ওই এগার জনসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়