তাসমিয়া নুহিয়া আহমেদ : মুসলিমদের জন্য সৌদি আরবের দু’টি শহর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা, মুসলিমরা দেশটিতে শান্তি খুঁজতে যাই। শহর দু’টির একটি মক্কা যেখানে পবিত্র কাবা শরিফ রয়েছে আর অন্যটি মদিনা, যেখানে রয়েছে আমাদের মহানবী (সা:) এর রওজা মোবারক। এই দু’টি শহর আমাদের বিশ্বাস ও আধ্যাত্বিক সুখ ও সৌভাগ্যের পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হয়। তবে এই দেশের লোকেরা পবিত্র শহর দু’টিকে নরক বানানোর চেষ্টা করছে।
কারণ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গত মঙ্গলবার ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে রিয়াদ। মক্কা ও মদিনাতেও এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনই নাবালক। এছাড়া এদের মধ্যে একজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর, ক্রুশবিদ্ধ করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যাতে অন্যরা সতর্ক হতে পারে। অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, নাবালক তিনজনের একজন আব্দুল কারিম আল হাওয়াজ। ১৬ বছর বয়সে সহিংস এক বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার মৃত্যুদণ্ডে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো জাতিসংঘ। এমনকি রায় বাতিল করতে সৌদি আরবকে অনুরোধও জানিয়েছিলো সংস্থাটি।
আরেকজন মুজতাবা আল-সৈকত ১৭ বছর বয়সে এক বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য ২০১২ সালে তাকে আটক করা হয়। ওয়েস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর জন্য বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে দাম্মাম বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। আদালতকে সৈকতের বাবা নাদের আল-সৈকত জানান যে, তার ছেলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সত্য নয়। আদালতের নথি অনুযায়ী, বিচারের সময় নাদের আল-সৈকত তার ছেলের এটর্নি হিসেবে কাজ করেছিলো। ঐসময় তিনি জানান, অপরাধের সাথে জড়িত মাত্র ২৪ জন। ছেলের পক্ষে ওকালতি করার সময় বাবা নাদের আল-সৈকত জানান, তার ছেলে রাজপরিবারের প্রতি অনুগত, পরিশ্রমী ও ভদ্র। সে সৌদি আরবে তার আনুষ্ঠানিক শেষ পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ গড় নম্বর পেয়েছিলো। অথচ সেই ছেলেকে মিশিগানে তার স্বপ্ন পূরণের পরিবর্তে ২০১২ সালে গ্রেফতার করে ৯০ দিনের জন্য নির্জন কারাগারে রাখা হয় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তার বাবা। আদালতের নথি অনুযায়ী, সৈকত স্বীকার করেছে যে, নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে সে ককটেল নিক্ষেপ করেছিলো এবং সে তার ব্ল্যাকবেরি ফোন ব্যবহার করে একটি সামাজিক দল চালাতো, যা বিক্ষোভকে উসকে দিতে সাহায্য করেছে। আর তার বাবা জানিয়েছেন, তার ছেলে মাত্র দু’বার ঐ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলো তার প্রত্যেকবার পাঁচ মিনিটের জন্য। সৈকতের বাবার দাবি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার ছেলের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকারীদের নির্দশেই সে ঐসব স্বীকার করেছে যাতে তার ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়। এভাবেই অবশেষে সৈকতকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও কিছু সৌদি মানবাধিকার কর্মীর মতে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে পরিবারগুলোকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর, হঠাৎ করেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোন মন্তব্যও করতে দেখা যায়নি পরিবারগুলোকে। অন্যান্য ফৌজদারি মামলার মতো এক্ষেত্রেও বিদেশি সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারের এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মামলায় বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য ২৪ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরির অভিযোগ আনা হয়। মঙ্গলবার ৩৭ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামের তালিকায় এই ১৪ জনের নামও রয়েছে।
এখন কথা হচ্ছে, যদি এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে আমরা কোন পদক্ষেপ না নেই, তাহলে আমদের নিজেদেরকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দেয়ার কোন অধিকার নেই। মুসলিমদের এটা বোঝা উচিত যে, আমাদের পবিত্র কোরআনের আদর্শ হলো ন্যায়বিচার। আর সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে, তা সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন। সময় এসেছে আমাদের একত্রিত হওয়ার। সৌদি আরবকে পুরোপুরি বর্জন করার।
(লেখক, নির্বাহী সম্পাদক, ডেইলি আওয়ার টাইম। )
আপনার মতামত লিখুন :