সুজন কৈরী : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্যের মৃত্যুর ঘটনায় উবার মোটরসাইকেল চালক ও কাভার্ডভ্যান চালককে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন কভার্ড ভ্যান চালক আনিসুর রহমান ও উবার চালক সুমন। শনিবার বিকেলে আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকা থেকে আটক করা হয়। আর গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসা সুমনকে আটক করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার সময় লাবণ্যকে বহনকারী উবার চালক বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। তার চেয়েও বেশি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন পেছনে থাকা কাভার্ড ভ্যানের চালক। মূলত বেপরোয়া গতির কারণেই চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন লাবণ্য।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খিলজী রোডের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার।
তিনি বলেন, লাবণ্যকে বাইকে উঠিয়ে চালক বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন। বাইকটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কাছাকাছি আসলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। এসময় বাইক থেকে লাবণ্য পড়ে যান। কাভার্ডভ্যানটি তার ওপর দিয়ে চালিয়ে পালিয়ে যায়। পথচারী ও বাইকার লাবণ্যকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ডিসি বলেন, ঘটনার পর থেকে লাবণ্যকে বহনকারী মোটরসাইকেল চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইলও বন্ধ ছিল। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পুলিশ যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে তিনি পালিয়ে যান। হাসপাতালে তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেটি ভুল ছিল। এছাড়া উবারের কাছে দেয়া ঠিকানাতেও খোঁজ নিয়েও সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় মোহাম্মদপুর থেকে বাইক চালক সুমনকে আটকসহ বাইকটি উদ্ধার করা হয়। কারণ সুমনই ছিল ঘটনার প্রধান সাক্ষী। সুমনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। ডিসি বলেন, লাবণ্যের মৃত্যুর পর আমরা প্রথমে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করি। কিন্তু ক্যামেরায় কাভার্ডভ্যানটি ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছিল না। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসি টিভি ক্যামেরায় ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটির ফুটেজ পাওয়া যায়। ফুটেজে ভ্যানটির নম্বর পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে আমরা প্রথমে তেজগাঁও ইনফো ফোর্টের সাব অফিসে খোঁজ করি। এরপর হেড অফিস আশুলিয়া বাইশমাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যান চালককে গ্রেফতার করা হয়।
বাইক চালক ও কাভার্ডভ্যান চালকের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে বিপ্লব কুমার বলেন, দুইজনই বেপরোয়া গতিতে ড্রাইভ করছিলেন। বাইকের চেয়ে যেহেতু কাভার্ড ভ্যানের গতি বেশি, সেহেতু কাভার্ড ভ্যানটি বাইকটিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয়। তখনই বাইকের যাত্রী লাবণ্য রাস্তায় পড়ে যান এবং ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হন।
ডিসি বিপ্লব বলেন, দায়েরকৃত মামলায় কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিতে উবার মোটর চালক সুমনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :