নূরুজ্জামান লাবু : ওসামা বিন লাদেনের যখন ভরা যৌবন ছিলো, তখন এই দেশে অনেকেই তার নামে সন্তানের নাম রাখছে। ‘কথিত কাফের’ হত্যার নামে মানুষ খুনের পরও তাকে ইসলামিক বীর সেনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তালেবানদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকা-কেও পেট্রোনাইজ করা হতো। ঢাকার বায়তুল মোকাররমের সামনে তাদের সমর্থনে ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ বলে স্লোগানও দিতো। আফগানিস্তানে যে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধের পর এই তালেবানের জন্ম, সেই একই জায়গা থেকে বাংলাদেশেও জঙ্গি মতাদর্শ আমদানি করা হয়েছে বলা হয়। নব্বই দশকের শুরুতে খোদ ‘স্টেট স্পন্সরশিপ’ নিয়ে তারা প্রথমে অর্গানাইজড এবং পরে নানা জায়গায় হামলা শুরু করে, মানুষ খুন করতে থাকে।
তখনও এই বাংলার মুসলমানরা তাদের ‘খাঁটি মুসলমান’ মনে করতো, মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কাজের পরেও। হালে আইসিস যখন তাদের কালো পতাকা নিয়ে আসলো সারা দুনিয়ায় তাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য, তখনও তাদের গুণগান গেয়েছেন এই বাংলার অনেক মুসলিম ভাই। বাংলাদেশে এই ক’দিন আগেও যখন টার্গেটেড কিলিং চলছিলো তখনও এই জঙ্গিদের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখেছি অনেককে। ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করায় তাদের হত্যাকে জায়েজ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। বলতেন, ইসলাম রক্ষার জন্য নাকি কাজ করছে ওরা। এমনকি ইসলামকে হেফাজতের জন্য হেফাজতে ইসলাম দাঁড়িয়ে গেলো। বলা হতো... তালেবান, ওসামার আল কায়েদা, আইসিসরাই নাকি প্রকৃত মুসলমান, ইসলামের ধারক-বাহক। ওরা শিয়ারে মারে, আহমদিয়া বা কাদিয়ানী মারে, কাফের-মুরতাদ মারে। এমনকি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদকেও মারতে গিয়েছিলো।
তো হঠাৎ করে দেখি বাংলার মুসলমানদের পল্টি অবস্থান। শ্রীলঙ্কার নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর অনেকে বলছেন, আইসিস বা আল কায়েদার সদস্যরা নাকি মুসলিম নয়। এগুলা ইহুদি-নাসারা। তাদের ধর্মও ইসলাম নয়। কেন ভাই? ওরাও তো এক আল্লাহ্কেই মানেন এবং তার প্রেরিত রাসূলকেও। বরং তাদের বুকে টেনে নেন আর বোঝান তোমরা ইসলামের নামে যা করছো তা ভুল। ইসলাম কাউকে হত্যা করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে বলেনি। তোমাদের এক্সট্রিম চিন্তা বন্ধ করো। মানুষকে মানুষ ভাবতে শেখো। কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করো না। আসো আলোচনা করি। সকল ধর্ম ও মতাদর্শ পাশে রেখে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করি। আমি মনে করি ইগনোর কোনো সমাধান নয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়ে বোঝাতে হবে, যাতে আর কেউ অপব্যাখ্যা দিয়ে কারো ব্রেইনওয়াশ করতে না পারে। আসুন মানবিক হই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :