সুজন কৈরী : রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্যের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ঘাতক কাভার্ড ভ্যানের চালককে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে কাভার্ড ভ্যানটিও। তবে আটক চালকের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ভ্যান চালককে আটকের বিষয়ে রোববার শ্যামলীতে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে লাবণ্যের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন করেন তার সহপাঠীরা। মহাখালী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন লাবণ্যের সহপাঠীসহ অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল- হোয়ার ইজ মার্ডারার?, ৩০০ টাকার হেলমেট জীবন বাঁচাবে তো?, আজ নিরাপদে বাড়ি ফিরব তো?, উবার-পাঠাও চালকদের দক্ষতা পরীক্ষণের মাধ্যমে আলাদা নীতিমালা চাই, দয়া করে সকালে ঘুম থেকে উঠি, কারণ বিবেকের ঘুম এখন না ভাঙলে হয়তোবা রাস্তায় আপনার শেষ ঘুম হতে পারে, সাবধান, সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামে নাই! সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর কতো?, লাবণ্যের মতো আর কারো মৃত্যু কাম্য নয়, চলে গেল আমার বোন লাবণ্য, বাড়ি ফিরতে না পারলে মা আমাকে ক্ষমা করিস, আর কতো মেধাবী রক্ত দিবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও লাবণ্যের সহপাঠী সারতাজ ইসলাম শোভন বলেন, লাবণ্যের মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, সড়ক আমাদের জন্য মৃত্যুর ফাঁদ। সড়কে শৃঙ্খলা নেই। নেহাত দুর্ঘটনা নয়, লাবণ্যের মৃত্যু হত্যার শামিল। অথচ শুধুমাত্র উবার চালককে পুলিশ আটক করেছে। কিন্তু মূল যে কালপ্রিট সেই কাভার্ডভ্যান চালককে এখনো ট্রেস করতে পারেনি পুলিশ। তিনি বলেন, বেলা পৌনে ১১টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় তো কাভার্ড ভ্যানের মতো ভারী যানবাহন সড়কে থাকার কথা নয়। অথচ পুলিশের সামনেই ওই কাভার্ডভ্যানটি চলাচল করেছে। কেউ কোথাও আটকায়নি। যদি কাভার্ড ভ্যানটি চাপা না দিতো, তাহলে আজকে প্রাণোচ্ছ্বাস নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতো লাবণ্য।
লাবিব সাদ ওয়াহিদ নামে বিবিএ শিক্ষার্থী বলেন, ৩শ’ টাকার হেলমেট পরিয়ে উবার কিংবা পাঠাওয়ের মতো অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা গ্রহণ কতোটা যৌক্তিক? আমরাও হরহামেশা উঠছি, চলাচল করছি। সময় এসেছে বদলে যাওয়ার। আমরা চাই ট্রাফিক বিভাগ মানহীন এসব হেলমেট বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ নিক। আমরা লাবণ্যের মতো আর কোনো মৃত্যু চাই না। শাহরিয়ার নামে লাবণ্যের আরেক সহপাঠী বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ নয়, আমরা ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছি। অভিযুক্ত উবার চালকের ঠিকানা সংগ্রহ করে পুলিশকে দিয়েছি। এরপর উবার চালককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু কাভার্ডভ্যান চালককে ধরা যায়নি। পুলিশকে অনুরোধ করবো, লাবণ্যের মতো আর কোনো মৃত্যু যাতে না ঘটে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :