শিমুল মাহমুদ : জীবন ও সম্পদের ওপর যখন হুমকির সৃষ্টি হয়, তখনই মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়। সাধ করে কেউ দেশ ত্যাগ করে না।
সুলতানা কামাল বলেন, সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার হারিয়েই বিভিন্ন সময় এ দেশের সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার ২৭ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর তিন ব্যক্তি নিহতর প্রতিবাদ ও তাদের জমি ফেরতের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ওই হত্যার ঘটনার পর দুই বছরের বেশি সময় হয়ে গেল, কিন্তু আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনই পাওয়া গেল না। এই ঘটনার বিচার হচ্ছে না কেন?
এই মানবাধিকারকর্মী আরও বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে এই সমস্যা জিইয়ে রাখার কারণ কী? ভুক্তভোগী মানুষ দরিদ্র বলে, অসহায় বলে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে তো এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, সাঁওতালদের এলাকায় সরকারের স্থানীয় যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁরা কি চান এসব মানুষ দেশ ত্যাগ করে চলে যান?
সুলতানা কামাল বলেন, ‘তাঁরা যদি না চান, এর প্রমাণ তো তাঁদের দিতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই প্রমাণ আমরা পাচ্ছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। তিনি বলেন, রংপুর চিনিকল স্থাপনের জন্য আখ চাষ করতে ১৯৬২ সালে বাগদা ফার্ম এলাকার ১ হাজার ৮৪০ একর জমি রিকুইজিশন করা হয়। এসব ছিল স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি। চুক্তি অনুযায়ী, যে কাজের (আখ চাষ) জন্য জমি রিকুইজিশন করা হয়েছে, তা না করা হলে আগের মালিকদের জমি ক্ষতিপূরণসহ দিতে হবে।
ফিলিমন বাস্কে আরও বলেন, ২০০৪ সালে রংপুর চিনিকল বন্ধ হয়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাষাবাদ শুরু করেন। জমি ফেরত পেতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আন্দোলন শুরু করলে মিথ্যা মামলা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ, প্রশাসনসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা উচ্ছেদের নামে হামলা করে।
ফিলিমন বাস্কে বলেন, ওই ঘটনার পর হাইকোর্ট দুটি মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। কিন্তু আড়াই বছর হলেও তদন্তের কাজ শেষ হয়নি।
ফিলিমন বাস্কে আরও বলেন, ‘একই জেলার সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মামলা তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দিতে দেখেছিলাম। তাহলে এ মামলার তদন্ত আড়াই বছরে হচ্ছে না কেন?’
জমি ফেরত, এ জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, ওই ঘটনা নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, সাঁওতালদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সাঁওতালদের ঘরে অগ্নিসংযোগকারী চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেন ফিলিমন।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা নিজামুল হক বলেন, ‘সরকার গোবিন্দগঞ্জের এই ইস্যুতে চুপ করে আছে কেন। আমরা চাই সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করুক। কারণ, এটি মানবিক অধিকারের প্রশ্ন।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, এ ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সরকার যদি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহলে কেমন হয়?
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, বাগদা ফার্মের সাঁওতালদের জমি একরপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা করে লিজ দেওয়া হয়েছে। আর সাবলিজ দেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা করে। দুদক এত দুর্নীতি দেখে, এটা দেখে না?
আপনার মতামত লিখুন :