শাহানুজ্জামান টিটু: অবশেষে ঘর সামলাতে পারলেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার নিজের জেলা ঠাকুরগাঁ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান বৃহস্পতিবার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন। এই শপথের বিষয়ে অনেক আগে থেকেই কানাঘুষা ছিল।
এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বিএনপি মহাসচিব সহ দলের সিনিয়র নেতারা গুলশান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই বৈঠকে জাহিদুর রহমান সহ অন্যান্য সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই এই শপথ বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকটা অন্ধকারেই রয়েছে বিএনপি। এই নিয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিএনপি মহাসচিব এর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সদ্য শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমানের ফোনটি বন্ধ রয়েছে। বগুড়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ব্যক্তিগতভাবে এই মুহূর্তে বলার মত তেমন কিছু নেই। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো সময় রয়েছে।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। যেহেতু ২৯ তারিখ পর্যন্ত সময় রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগ দেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে এখনো মতামত দেওয়ার সময় হয়নি।
সংসদে শপথ গ্রহণের বিষয়ে স্পিকার কে চিঠি দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় কোন অনুমতি লাগে কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, শপথের বিষয়টি সম্পূর্ণ ওই প্রার্থীর নিজস্ব বিষয়। এখানে দলীয় কোন স্বাক্ষর এর প্রয়োজন হয় না। যদি ওই সংসদ সদস্য মনে করেন যে তিনি শপথ নিবেন তাহলে তিনি স্পিকার বরাবর চিঠি দিতে পারেন। হারুন অর রশিদ বলেন জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন এ বিষয়ে উনি বলতে পারবেন। তার শপথ প্রসঙ্গে আমার কোন বক্তব্য নাই। বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপি মধ্যেই গুঞ্জন ছিল যে নির্বাচিত সদস্যরা সংসদে যোগ দিতে পারেন। এর মধ্যে সদ্য নতুন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন এমন একজন এবং সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। কিন্তু শেষমেষ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জাহিদুর রহমানের এই শপথ গ্রহণ বিএনপি রাজনীতিতে কি প্রভাব পড়বে তা নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো নেতা কথা বলতে রাজি হননি দলের সিনিয়র নেতারা। তবে জাহিদুর রহমানের এই শপথ গ্রহণে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরোধীরা যে খুশি হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে আগামী দিনে। নির্বাচনে বড় ধরনের ভরাডুবির পর দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বের পরিবর্তনের দাবি ওঠে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের হাইকমান্ড নেতাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের বক্তব্য থেকে দূরে সরে থাকতে বলেন । শীর্ষ নেতাদের ব্যর্থতার জন্য কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে নেতৃত্বে রদবদলের কথা বলেন। প্রয়োজন হলে তারা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। এমন বক্তব্য প্রকাশ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেন বিএনপি'র কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
দলীয় সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। এই কারণে দলের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই তার। তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন এখন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে দল পরিচালনা করতে হবে। বেগম জিয়ার এ বক্তব্যের পর বিএনপি'র সিনিয়র পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। তারা তারেক রহমানকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলেও তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নাখোশ বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ পালন করতে অনেক সময় গড়িমসি করেন।
আপনার মতামত লিখুন :