শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৫৩ দুপুর
আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাকরির হাহাকার বাড়ছেই

ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্বিগুণ গতিতে দৌড়ালেও কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাকা ঘুরছে উল্টোদিকে। অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও কর্মসংস্থানের লক্ষ্য অর্জন হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির। কিন্তু হয়েছে মাত্র ৭৯ লাখ। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থানের লক্ষ্য অর্জনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে চাকরিপ্রত্যাশীদেরও দক্ষতার অভাব রয়েছে। অর্থনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রের নীতির দুর্বলতা ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা আছে। ফলে চাকরির বাজারের হাহাকার দিন দিন বাড়ছে। শ্রমশক্তির জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ বেকার রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত। প্রতি বছর ২০ লাখের মতো নতুন মুখ দেশের শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। মোট শ্রমশক্তিতে বাড়ছে উচ্চশিক্ষিতদের অংশগ্রহণ। যদিও তাদের বড় অংশই বেকার থাকছে। চাকরির প্রতিযোগিতার বাজার এতটাই চরমে যে, একটি আসনের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থীকে প্রতিযোগিতা করতে হয়। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জন বেকার। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীর হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীর মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরই আছেন উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজার নিয়ে জরিপ চালিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কর্মবাজারের প্রস্তুতি ও কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, পড়ালেখা শেষ করে মাত্র ১ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট স্ব-কর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন। গ্রাজুয়েট শেষ করার পর তিন বছর ধরে চাকরির সন্ধান করতে হচ্ছে ৪৬ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটকে। তাদের মধ্যে বেকারত্বের হারও উচ্চ। ৭১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, কলেজ গ্র্যাজুয়েট পুরুষদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে। নারীদের মধ্যে এ হার আরও বেশি। ৭৭ শতাংশ। এক-তৃতীয়াংশ চাকরিজীবী গ্র্যাজুয়েট মনে করেন, কলেজে শেখা জ্ঞান ও দক্ষতা তারা কাজে লাগাতে পারছেন। অধিকাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটই তাদের কলেজে শেখা জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষক সংকট, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ ও বাজারমুখী কারিকুলামের অভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরির বাজার প্রস্তুত না থাকায় চাকরি পেতে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে তাদের।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতা : ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রথমেই বলা হয়েছিল সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার বাড়ানো হবে। শ্রমশক্তি বৃদ্ধির সুবিধা কাজে লাগাতে নীতিতে পরিবর্তন আনা, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পভিত্তিতে রূপান্তর, শিল্প ও কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, সেবা খাত শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বাণিজ্য নীতির সংস্কার অর্থায়নের মাধ্যমে দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন, শেয়ারবাজার সংস্কারের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার, যোগাযোগ খাতের সংস্কার, দক্ষতা বৃদ্ধি, জমির প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো ক্ষেত্রেই সুফল মেলেনি। ফলে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ।
অবশ্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, আগামী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদে পাঁচ বছরে নতুন করে ১ কোটি ২৯ লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এ সময় দেশে বিদ্যমান বেকারত্বের হার কমিয়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয় বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে।

কেন একই দিনে এত পরীক্ষা : একটি চাকরির জন্য যেখানে প্রার্থী দিনের পর দিন মাথা খুটছেন সেখানে সমন্বয়হীনভাবে একই দিনে প্রায় একই সময়ে বেশ কিছু চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে হরহামেশা। যেমন গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশ কম্পিটিশন কমিশনের সব পদের প্রিলিমিনারি, পূবালী ব্যাংক জুনিয়র অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষা, মাদকের উপ-পরিদর্শক পদের লিখিত পরীক্ষা, কম্বাইন্ড অফিসার ক্যাশ ৫ ব্যাংকের প্রিলিমিনারি, বাংলাদেশ রেলওয়ে বুকিং সহকারী পদের পরীক্ষাসহ আরও মোট ৮-১০টি চাকরির পরীক্ষা ছিল ওই দিন। কিন্তু একজনের পক্ষে এক দিনে এত পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব না, তাও আবার একই সময়ে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়