শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ০৭:২৮ সকাল
আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ০৭:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আতঙ্কে শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা

ডেস্ক রিপোর্ট : মুসলিম হওয়ার কারণে প্রতিশোধমূলক হামলার শিকার হতে পারেন তারা। এই আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তাদের অনেকে। কাজে যেতে পারছেন না। পারছেন না অন্য স্বাভাবিক কাজ করতে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। কলম্বোতে বসবাস করেন মোহাম্মদ হাসান (৪১)। তিনি রোববারের ওই হামলার পর বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না বলা চলে।

তার আতঙ্ক মুসলিম হওয়ার কারণে হামলার শিকার হতে পারেন। তিনি কাজ করেন একটি প্রিন্টিং প্রেসে। তিনি যেন কাজে না গিয়ে বাসায় থাকেন এমন আকুতি জানায় তার পরিবারের সদস্যরা। দেমাতাগোদায় জুম্মা মসজিদের বাইরে তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন। তাদের ভয়, যদি বাইরে যাই তাহলে আমি জীবিত ফেরত আসতে পারবো তো?

রোববারের ওই হামলায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩৫৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। সরকার মনে করছে এর সঙ্গে স্থানীয় ইসলামপন্থি উগ্রবাদীরা জড়িত। যারাই জড়িত হোক, পুরো শ্রীলঙ্কায় এক আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। মুসলিম গ্রুপগুলো হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন নিজেকে। তাদের একজন জরিনা বেগম (৬০)। তিনি রোববারের পর থেকে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি জানি মানুষ মুসলিমদের ওপর ক্ষিপ্ত। মায়ের কোলে থাকা শিশুদেরকে ওই হামলায় হত্যা করা হয়েছে। হামলাকারীদের মনে এতটা ঘৃণা থাকতে পারে তা কখনো কল্পনাও করিনি। ঘৃণা আরো ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারে না। জরিনা বেগম আরো বলেন, আমরা বাড়ির মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে আছি। বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি।

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে রয়েছেন নানা ধর্মের ও জাতির মানুষ। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো সিংহলি বৌদ্ধরা। দেশটিতে মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ হলো মুসলিম। হিন্দু সম্প্রদায়ের পরে দ্বিতীয় বৃহৎ জাতি তারা। শতকরা প্রায় ৭ ভাগ হলো খ্রিষ্টান। এখানে জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা রয়েছে অনেক দিন ধরে। এক দশকের চলা গৃহযুদ্ধের পর সম্প্রতি সেখানে জাতিগত সহিংসতা দেখা দেয়। এখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন কট্টরপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে মুসলিম ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলার মুখে পড়ে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, মুসলিমদের দোকান থেকে অন্তর্বাস (আন্ডারওয়্যার) কিনলে সিংহলিজরা বন্ধ্যা হয়ে পড়বেন। মুসলিমদের কাছ থেকে খাদ্য কিনলে ঊর্বরতা নষ্ট হয়ে যাবে।

সেই সময়কার আতঙ্ক এখনো ঘুরে ফিরে আসছে। রোববারের হামলার পর প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে সহ দেশের শীর্ষ নেতারা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একে অন্যের প্রতি সংহতি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেছেন, মুসলিমরা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। যা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে তামিল ও সিংহলিজরা যেমন ক্ষুব্ধ তারাও তেমনটা।

কিন্তু জুম্মা মসজিদে আতঙ্কের এক আবহ। সেখানে নামাজ আদায় করতে যাওয়া অনেকে বলেছেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিজন নাগরিককে পুলিশ নিরাপত্তা দেবে বলে তারা আশা করেন। মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদ। তিনি বলেছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিশোধের আশঙ্কা রয়েছে। তাদের মধ্যেই আবেগ রয়েছে উচ্চমাত্রায়। কয়েক শ’ মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে- এটা চরম এক আবেগের বিষয়।

আমরা সরকারকে বলবো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। মুসলিম সম্প্রদায় এই হামলা চালায়নি। হামলা চালিয়েছে পথভ্রষ্ট কিছু মানুষ। হিলমি আহমেদ ও শ্রীলঙ্কার মুসলিম অন্য নেতারা বলছেন, তারা ন্যাশনাল তাওহীদ জামা’আতের (এনটিজে) নেতার বিষয়ে কর্র্তৃপক্ষকে আগেই সতর্ক করেছিলেন। এনটিজে’র ওই নেতাকে এই হামলার মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি হলেন জাহরান হাশমি। তাকে উগ্রপন্থি হিসেবে চেনেন মুসলিম নেতারা। হিলমি আহমেদ বলেন, ওই ব্যক্তি নিঃসঙ্গ থাকতেন। তিনি যুব সমাজকে উগ্রপন্থি করে তুলেছেন। ওদিকে মসজিদে ফিরে এসেছেন আর এফ আমীর নামে এক মুসল্লি। তিনি বলেছেন, মুসলিমরা শুধু নিরাপত্তা চায়। আমরা অব্যাহত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। আতঙ্কটা এই নিয়ে যে, যদি কেউ আমাদের মাথায় টুপি দেখতে পায় তাহলে হয়তো তারা মনে করবে আমরা তাদের শত্রু। কিন্তু আমরা সবাইকে বলতে চাই, আমরা আপনাদের শত্রু নই। এটা আমাদের মাতৃভূমি। এটা পার্ল অব এশিয়া হিসেবে পরিচিত। আমরা এখানে সেভাবেই থাকতে চাই।
সূত্র : মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়