শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৬:০৬ সকাল
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৬:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ছয় বছর

ডেস্ক রিপোর্ট : আজ ২৪ এপ্রিল। দেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও কয়েক হাজার শ্রমিক।

সেদিনের সেই ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন তার মাকে, কেউ তার বাবা, কেউ তার ভাই, কেউ বোন, কেউ তার স্ত্রী, কেউ আবার স্বামীকে। দেশের ইতিহাসে মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিপর্যয় এটাই। ধসে পড়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার ৯ তলা ভবন। ওই ভবনের ৩য় তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। এতে প্রায় ৪ হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন। ভবন ধসের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তুপের ভেতরে চাপা পড়েন চার হাজার পোশাক শ্রমিক। তাদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের মাতম নেমে আসে পুরো সাভারে।

মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে আসেন সাধারণ উদ্ধার কর্মী, দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা। তাদের সবার চেষ্টায় ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে বের হতে থাকে জীবন্ত ও মৃত মানুষ। উদ্ধার হওয়া আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অ্যাম্বুলেন্স। আহতদের হাসাপাতালে পাঠানো, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ছুটে আসে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী।

এদিকে, ধ্বংসস্তুপ থেকে একে একে বের হতে থাকে জীবন্ত, মৃত ও অর্ধ-মৃত মানুষ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়; হাসপাতালের মর্গ কানায় কানায় ভরে উঠে। পরে এসব লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে। স্কুল বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে লাশ রেখে দেওয়া হয়। লাশের সংখ্যার হিসাব রাখার জন্য ঝুলানো হয় স্কোর বোর্ড। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় কফিনের বাক্স।

ততক্ষণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধ্বংসস্তুপের ভেতরে চাপা পড়া লোকদের স্বজনেরা ছুটে আসেন রানা প্লাজার সামনে। তাদের কান্না আর আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে উঠে।

প্রিয়জনকে জীবিত না পেলেও তার মৃতদেহ নেওয়ার জন্য স্বজনেরা ভিড় জমান অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে। একটু পরপরই এক একটি লাশের গাড়ি আসে, আর তারা ছুটে যেতে থাকেন সেই গাড়ির কাছে।

এভাবেই কেটে যায় ৫-৬ দিন। শেষদিকে স্বজনেরা প্রিয়জনকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে তার লাশ নিয়ে যাওয়ার আশায় ওই ভবনের সামনে, স্কুল মাঠে অপেক্ষা করতে থাকেন।

এদিকে, ধসের পর দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতে থাকে। উদ্ধার তৎপরতায় ধীর গতি দেখে, কোনও কিছু না ভেবেই উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। উদ্ধারকাজের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না কারও। তবু ভবনের নিচে আটকে পড়া মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ঢুকে পড়েন ধংসস্তুপের ভেতরে। পঁচা লাশের গন্ধ উপেক্ষা করে তারা সন্ধান করেন জীবিত প্রাণের। সেই মানুষগুলোর কারণেই ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া, মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ১১৩৮ জনের।

ধসের ৫ম দিন ২৮ এপ্রিল ভবনের ভেতরে একজনের সাড়া পাওয়া যায়। শাহীনা নামের ওই নারীকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কায়কোবাদ নামের এক উদ্ধারকর্মী আহত হন। টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৫ মে শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কায়কোবাদ মারা যান।

এ ঘটনায় টানা সাত দিন উদ্ধার কাজে অংশ নেন বাবু নামের আরেক সাধারণ উদ্ধারকর্মী। নিজের জীবন বিপন্ন করে ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে তিনি উদ্ধার করে আনেন ৩০ জন জীবিত মানুষকে। ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে জীবিত, মৃত, অর্ধ-মৃত দেহগুলো কাঁধে নিয়ে বের হতে হতে একসময় নিজেই অসুস্থ হয়ে যান তিনি। তার ঠাঁই হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বারান্দায়। সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর ওই হাসপাতালের সামনে তার লাশ পাওয়া যায়। এ লাশ উদ্ধারের সময় গলার শ্বাসরোধের স্পষ্ট আলামত পায় পুলিশ। তার মৃত্যু রহস্য আজও উদঘাটন হয়নি।

ভবন ধসের ১৭তম দিনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করার আগ মুহূর্তে ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। ধ্বংসস্তুপের ভেতরে পাওয়া যায় আরেক নারীকে। চারটি বিস্কুট ও এক বোতল পানি খেয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে ছিলেন রেশমা নামের সেই নারী। ১৭তম দিনে বিকাল তিনটার দিকে ভেতরে থেকে একটি কাঠি নড়াচড়া করতে দেখেন উদ্ধারকর্মীরা। পরে তারা রেশমাকে জীবিত দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে সাভারের সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যান।

এরপর ২০তম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রানা প্লাজার উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন উদ্ধারকাজে গঠিত সমন্বয় কমিটির প্রধান নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী। তিনি উদ্ধার কাজ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে একহাজার ১২৭ জনকে মৃত ও দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানান। এর পরের দিন উদ্ধার কাজ শেষে ওই জায়গাটি ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়