অরুণাবালা : ধর্ষণ এক সামাজিক রোগ, যা শুধু জাতিকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে না বরং এই অপরাধের শিকার নারীর মনের অবস্থাকেও ভারসাম্যহীন করে তোলে। এটি বাংলাদেশের এক সাধারণ অপরাধ। আমাদের আইনের ভাষায় এটি এক যৌন নির্যাতনের একটি ধরন যেখানে নারীর সম্মতি ছাড়াই জোরপূর্বক তার সঙ্গে এক বা একাধিক ব্যক্তি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ধর্ষণ মামলায় সাক্ষী অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আদালতের পক্ষে সত্যিকার অপরাধীকে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। সেজন্যই ধর্ষণের শিকার নারীর কাছ থেকে আদালত সরাসরি বিবৃতি নেয়াকেই অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু অনেক সময় ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দ্বিতীয়বার হয়রানির মুখে পড়ে ওই নারী।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট যেকোনো স্থানেই ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি নিতে পারে। তবে এই ধারায় শুধু প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত বা অন্যভাবে বিবৃতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এখানে নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কথা উল্লেখ করা হয়নি। যার ফলে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেই বিবৃতি রেকর্ড করতে বাধ্য হয় ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুরা। ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার নারী বা শিশু পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওই ঘটনার বিবরণ দিতে সংকোচ বা ইতস্ততবোধ করে। এ পরিস্থিতিতে তাদের জন্য দরকার একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট। এতে তারা দ্বিধা ছাড়াই ঘটনার বিবরণ দিতে পারবে। যাই হোক, আদালতের জারি করা সার্কুলার অনুসরণ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। নারীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু ধারাবাহিক যৌন হযরানির ঘটনা এবং বিবৃতি দেয়ার সময় ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির প্রতি পুলিশ প্রধানের অশোভন আচরণের পর পরই এ আদেশ দেয় আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফল জুডিসিয়াল রিফর্মসের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সার্কুলারে বলা হয়েছে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ বর্ণিত অপরাধ সংঘটনে ওয়াকিবহাল ব্যক্তির জবানবন্দি উক্ত আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়।’ এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক। এতে নারী ও শিশু ভুক্তভোগী সহজে ও নিঃসংকোচে তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে পারবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই, যেখানে বিচার নিশ্চিত হবে এবং নারী ও শিশুরা কোনো ধরনের সংকোচ ও দ্বিধা ছাড়াই জবানবন্দি দিতে পারবে।
লেখক : স্বাধীন গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :