মহিব আল হাসান : প্রতি শুক্রবার মধ্যরাতে যখন ঘড়ির কাটা ১২টায় যায় ঠিক সেসময় ভয়ের রাজ্যে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশের এফএম রেডিও ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ভূত এম’। দীর্ঘ নয় বছর ধরে এটি প্রচার করে আসছে দেশের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক সমৃদ্ধ রেডিও ষ্টেশন রেডিও ফুর্তি। আর এই অনুষ্ঠানের হোস্ট হিসেবে রয়েছেন একজন। তার কথাতেই সমাদৃত হয় পুরো অনুষ্ঠানটি। শুরুতে তিনি বলেন হঠাৎ যদি মধ্যরাতে দেখেন আয়নার ভিতর কেউ হাঁটছেন তখন কেমন লাগবে? মিষ্টি কন্ঠে যখন ভয়ের গল্প বলা শুরু করেন তখন বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনতে থাকেন শ্রোতারা -একঝাঁক মানুষের মাঝেও যেন আলাদা করে চেনা যায় তাকে!
আরজে রাসেল। পুরো নাম আশরাফুল আলম রাসেল। রাজশাহী ইনিভার্সিটি থেকে শেষ করেছেন পড়াশোনা। ক্যামেরার পিছনে কাজ করার তার দৃঢ় স্বপ্ন। কণ্ঠের মাদকতার মাধ্যমে শ্রোতাদের রাতজাগা পাখি করে রাখেন। এত চমৎকার কথা বলতে পারে সেটা রহস্যই থেকে গেল!
আমাদের সময় ডট কমের পক্ষ থেকে কন্ঠের মাধকতা ছড়ানো লোকটির সাথে কথা হয় তার কর্মস্থল রেডিও ফুর্তির অফিসে। ইন্টারভিউ নেবার শুরুতেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কি জানতে চাই!’ বললাম “খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে চাই”। এ বলে পাক্কা ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ইন্টারভিউতে সত্যিই উঠে আসল অনেক খুঁটিনাটি গল্প।
অন্তর্মুখী সেই ছেলেটা
ছোটবেলা কেটেছে রাজশাহীতে। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। রাজশাহীতে শৈশবের স্মৃতি তার। বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তার জীবনের সোনালী দিনগুলো কেটেছে সেখানেই। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন প্রাণের শহর রাজশাহীতে। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিলো ম্যাকিং করার অর্থ্যাৎ নিজেকে পরিচালক হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা । এজন্য ফিল্ম মিডিয়ায় ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেও পড়াশোনা করেছেন। যদিও সেই স্বপ্ন এখনও তার মধ্যে বিরাজমান তা কথা বলে জানা গেছে। সেই স্কুল লেভেল থেকে নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন বুকে লালন করে আছেন তিনি।
আরজে হবার শুরুর দিনগুলি
আরজে শুরু করার আগে কাজ করেছেন সাংবাদিকতাতেও। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার লেখা ফিচার প্রকাশ হতো। এরপর ২০০৪ প্রথম সাংবাদিকতায় কাজ শুরু করেন ঢাকায়। কাজ করেছেন আমাদের সময় পত্রিকাতেও। এমন সময় একদিন রেডিও ফুর্তির অফিসে কাজে গিয়ে আকস্মিকভাবে ভয়েস দিতে বলেন রেডিও ফুর্তি থেকে। ভয়েস দেওয়ার কয়েকদিন পর তাকে ফুর্তিতে আরজে হিসেবে কাজ করার জন্য ডাকা হয়। এরপর রেডিওতে আরজে হিসেবে ‘ফ্রাইডে মর্নিং শো’ শুরু করেন তিনি। ডুয়েল আরজে হিসেবে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘হ্যালো ঢাকা’ শোতে কাজ শুরু করেন।
[caption id="attachment_862433" align="alignright" width="500"] মেয়ের সাথে আরজে রাসেল, ছবি: সংগৃহীত[/caption]
যে ভাবে শুরু হলো ভূত এম
ঢাকা শহরে কোনও না কোনও কারণে বাসা পরিবর্তন করতে হয়। ঢাকায় থাকতে গিয়ে আরজে রাসেল বাসা পরিবর্তন করেন। বাসা পরিবর্ত করে একা একা থাকতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সম্যসার সম্মুখীন হতেন। বাসার ভিতর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অফিসে এসে যখন শেয়ার করতেন তখন অন্য সহকর্মীরা ভয় পেতেন। এই ভয়ের বিষয় নিয়ে মাথায় তৈরি হয় ‘ভূত এফ’ নামে একটা অনুষ্ঠানের। ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট কোনও রকম প্রস্তুতি ছাড়া শুরু করেন আজকের এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটি। দীর্ঘ নয় বছর ধরে চলছে অনুষ্ঠানটি।
রেডিও ফুর্তি’র রাসেল
রেডিও ফুর্তিতে জনপ্রিয় নাম আরজে রাসেল। দেশ ও দেশের বাহিরের লাখো শ্রোতা একযোগে কান পেতে শুনেন ভূত এফ এম। রেডিও ফুর্তির ডাটা থেকে জানা গেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ‘ভূত এম’ অনুষ্ঠানটি।
স্বপ্নেরা উঁকি দেয় মনে
[caption id="attachment_862439" align="alignleft" width="500"] পরিবারের সাথে আরজে রাসেল, ছবি: সংগৃহীত[/caption]
কথাবন্ধু, সাংবাদিক এত এত পরিচয় থাকার পরেও রাসেল পরিচয়ে পরিচিত হতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্বপ্ন রয়েছে বড় পর্দার সিনেমা নির্মাতা হিসেবে নিজেকে দেখতে চান। কথাবন্ধু রাসেলের স্বপ্ন বাংলাদেশের সেরা নির্মাতা হওয়া। ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন বেশকয়েকটি শর্টফিল্ম ও নাটক।
শেষের কয়েকটি কথা আরজে রাসেলের, সুদূরপ্রসারী একটি লক্ষ্য থাকা চাই। কাজ করার আগেই সময়সীমা নির্ধারণ করে নিতে হবে। আর সেই কাজ সফল করার জন্য ভীষণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে”। তরুণদের জন্য এটাই ছিলো আরজে রাসেলের পরামর্শ।
আপনার মতামত লিখুন :