কামরুল হাসান মামুন : যখনই ধর্মীয় উগ্রবাদীরা কোথাও কোনোসন্ত্রাসী ঘটনা ঘটায় আর অন্য ধর্মের মানুষরা তার নিন্দা করে সমালোচনা করতে শুরু করে তখনই একদল বলতে শুরু করে সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। এটা যেন এমন নিজের ছেলের বিরুদ্ধে পাড়ার অন্য কারো ছোট ছেলে এসে নালিশ করে যায় তখন আমরা যেমন বলি ‘আমার ছেলে তোমাকে মেরেছে?
ঠিক আছে আজ ওটা বাড়িতে আসুক আচ্ছা করে বকে দিবোনে।’ সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই- এটা বলা মানে তার অন্যায় কাজকে মৃদু তিরস্কার করে দেয়ার মতো। এটা অনেকটা ঢ়ধপরভরবৎ এর মতো। তারা কিন্তু বলে না ওরা অধর্মের কাজ করেছে। ওদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবি জানিয়ে কাউকে কখনো রাস্তায় নামতে দেখি না। পৃথিবীজুড়ে এতো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলো। সন্ত্রাসীরা যেই ধর্মের সেই ধর্মের মানুষরা কী আজ পর্যন্ত তাদের ফরংড়হি করে তাদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে? নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে মাসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে ৫০-এরও অধিক নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে মেরে ফেললো।
২১ এপ্রিল চার্চে তাদের পবিত্র দিনে প্রার্থনারত অবস্থায় ২ শতাধিক মানুষকে মেরে ফেললো। এর আগেও এ রকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো ঘটতে থাকবে। আমরা এ রকম একটি ভয়ংকর পৃথিবীতে আজ বাস করছি। এই ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে কারণ আমরা সাধারণ মানুষরা আগুনে তেল ঢালি। আমরা দলমত নির্বিশেষে এসবের নিন্দা জানাই না। আমরা দলমত নির্বিশেষে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নামি না। নিন্দা না জানানো, প্রতিবাদ না করা মানেই আমরা আমাদের অজান্তেই পৃথিবীতে ঘৃণার চাষ করে যাচ্ছি।
ধর্ম বিষয়টাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ কোনো ধর্মের ধর্মীয় লেবাস পরলেই সাধারণ মানুষ মনে করে সে সৎ, সে মিথ্যা কথা বলে না, সে অন্যায় কাজ করতে পারে না ইত্যাদি। কিছু মানুষ ঠিক এই জিনিসটাকেই ব্যবহার করে। যেমন বাজারে ফলওয়ালা বিশাল লম্বা পাঞ্জাবি টুপি আর দাড়িওয়ালা। এই লেবাসে কেউ থাকলে আমাদের ব্রেইন এমনভাবে রিৎবফ যে, ধরেই নেই ভালো মানুষ। অথচ এই মানুষগুলোই এখন সবচেয়ে বড় বদমায়েশ। যারা ধর্মীয় সন্ত্রাসী করে তারাও ধর্মকে ব্যবহার করেই করে। কিন্তু সমস্যা হলো যারা ব্যবহার করে ধর্মকে কলুষিত করলো তাদের বিরুদ্ধে কেউ সোচ্চার হয় না। ধর্মের নামে যখন এসব সন্ত্রাসী কাজ হয় তখন সেই ধর্মের সত্যিকারের ধার্মিকরা কেন ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের বলে না তোমরা ধার্মিক নও।
ধর্মের বিরুদ্ধে একটু সমালোচনা করলে তো খবর হয়ে যায়, কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করে যারা সন্ত্রাসী কাজ করে, ধর্মের অবমাননা করে তখন তাদের বিরুদ্ধে কাউকে দাঁড়াতে দেখি না কেন? যেই সন্ত্রাসী ঘটনা নুসরাত হত্যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জড়িত তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা যারা আছেন তারা কী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ করেছে? বরং তারা উল্টোটা করেছে। কারণ এখানে ভিক্টিম একজন নারী আর অন্যায়কারী মাদ্রাসার একজন পুরুষ অধ্যক্ষ। প্রতিবাদ যারা নেতৃত্ব দিয়ে আয়োজন করবেন তারা মনে করেন ওই অধ্যক্ষ তাদের একজন। সামান্য একজন নারী ছাত্রী হয়ে একজন পুরুষ অধ্যক্ষকে জেলে নিয়েছে? এটা তাদের কাছে সম্মান কী মামলা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :