রাশিদ রিয়াজ : অন্তত ৪০০ পাইলট ভারতের এই জেট এয়ারওয়েজ ছেড়ে অন্য জায়গায় যোগ দিয়েছেন। চলে গিয়েছেন ৪০ জনেরও বেশি পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। আট হাজার কোটি টাকার দেনার দায়ে জর্জরিত জেট এয়ারওয়েজ। সংস্থায় তালা প্রায় পড়েই গিয়েছে। মাথার ওপর কয়েক হাজার কোটি টাকার দেনা। বৃহস্পতিবার অমৃতসর-মুম্বাই রুটে চলল সংস্থার শেষ বিমানটি। এরপর কি? আর কি কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে ২৫ বছর আগে ভারতের বিমানযাত্রায় কয়েক পোঁচ নতুন স্বপ্ন এনে ফেলা নরেশ গোয়েলের জেট এয়ারওয়েজ? প্রশ্নটি হয়তো আপাতদৃষ্টিতে সহজ। তবে, উত্তর নেই।
জেট এয়ারওয়েজের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই এই বিমানসংস্থার সঙ্গে যুক্ত ভোজা পূজারি। কী হবে এবার তার বা তাদের? কী হবে ভবিষ্যৎ? তা নিয়ে ভাবতেও শিউড়ে উঠছেন তিনি। ৫৩ বছর বয়সী দুই সন্তানের বাবা বলেন, আমি জানি না। বিশ্বাস করুন। কোনও উত্তর নেই আমার কাছে। গত দু’মাস ধরে মাইনে পাইনি। নিজের বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। কেবল বুঝতে পারছি, হাতদুটো শক্ত করে অদৃশ্য কিছু দিয়ে বাঁধা রয়েছে। শুধু বুঝতে পারছি, রাতে আর কখনও ঘুম আসবে না। নিজের সন্তানরা খুব ছোট। ওদের কিছু জানায়নি। তবু, ওরা বুঝতে পারছে। মানুষ তো! বুঝতে পারছে ঠিকই যে, সব ঠিক নেই।
জেটের হাজার হাজার কর্মচারির ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে। ১৬ হাজারেরও বেশি কর্মচারির জীবন কোন পাঁকে ডুবছে, তা আন্দাজ করতেই পারছেন না কেউ। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে কয়েক ডজন কর্মচারি জানান, তারা দুই থেকে চারমাস পর্যন্ত কাজ করছেন বেতন ছাড়া। তাদের তাদের হোম লোন বাকি, সংসার খরচ সামলাতে গিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা। সন্তানকে ভালোভাবে পড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি করেছিলেন নামীদামী স্কুলে, বাকি পড়ে রয়েছে তাদের মাইনেও। বাকি পড়ে রয়েছে সন্তানের টিউশনের খরচ বা মাসকাবারির চাল-ডালের দামও।
‘আমরা বাইরে খেতে যাই না আর। সিনেমা দেখতে যাই না। সব ধরনের বিনোদন থেকে নিজেদের সন্তর্পণে সরিয়ে দিয়েছি’, জানালেন জেট এয়ারওয়েজের এক ইঞ্জিনিয়ার।
অমিল সাহু বলছিলেন, জেট এয়ারওয়েজের সঙ্গে আমি যুক্ত সেই ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো থেকে। এতকিছুর পরেও এই সংস্থা ছেড়ে যেতে পারিনি। কেবল বিশ্বাসটুকু রেখেছি। কারণ, এই সংস্থাটি তো একসময় আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। সেই বিশ্বাস থেকেই মনে হয়, একদিন ঠিক হয়ে যাবে সব। সব হারিয়ে ফেলার পরেও, যেমনভাবে বেঁচে থাকে আশা। এনডিটিভি
আপনার মতামত লিখুন :