শাহীন চৌধুরী: দীর্ঘদিন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে থাকার পর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ভোলার গ্যাস উত্তোলন। এ ব্যাপারে রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রমের দেয়া প্রস্তাবটির আইনগত দিক খতিয়ে দেখছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) আইন বিভাগ। আইনী মতামত পাওয়ার পর চলতি মাসের মধ্যেই বাপেক্সে ও গ্যাজপ্রমের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হতে পারে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভোলা গ্যাস ক্ষেত্রে ৪ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যাবে। সারা দেশে বর্তমানে যে পরিমান গ্যাস মজুত রয়েছে শুধু ভোলার গ্যাসই হবে তার এক তৃতীয়াংশ। এই গ্যাস ক্ষেত্রই দেশের গ্যাস সংকট সমাধানে বড় সহায়ক হতে পারে।
এদিকে তেল-গ্যাসের সম্ভাবনা ও মজুদের তথ্য সংগ্রহে স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্র এলাকায়ও জরিপ পরিচালনা এবং কূপ খননের কাজ করতে আগ্রহী রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। ইতোমধ্যে স্থলভাগ ও সমুদ্রবক্ষে কর্মপরিকল্পনা-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে তারা। প্রস্তাবগুলোর সম্ভাবতা যাচাই করে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
সূত্রমতে, দ্বীপজেলা ভোলার সব গ্যাসক্ষেত্রসহ সমুদ্র বøকগুলোয় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয় গ্যাজপ্রম। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে আরো কয়েকটি কূপ খনন, সমুদ্র ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সার্ভে পরিচালনা এবং ছাতক গ্যাসফিল্ডে ড্রিলিং কার্যক্রম ইত্যাদি। রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস কোম্পানি বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে এসব কাজ করতে চায় তারা। ভোলায় ৩টি কুপ খনন করতে হবে। ইতোমধ্যেই এখানে ১ দশমিক ৫ টিসিএফ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুরো এলাকা সার্ভে করা হলে তা ৪ থেকে ৫ টিসিএফ পর্যন্ত পৌছতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে গ্যাজপ্রমের প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে পেট্রোবাংলা। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. আবদুস সুলতানকে। গ্যাজপ্রম স্থলভাগ ও সমুদ্রসীমায় জরিপ, অনুসন্ধান ও ড্রিলিংয়ের বিষয়ে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার বিস্তারিত সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা এই কমিটি যাচাই করে দেখবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ২০১২ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর দেশের সমুদ্রবক্ষের তেল-গ্যাস মজুদের তথ্য সংগ্রহে দ্বিমাত্রিক মাল্টিক্লায়েন্ট সাইসমিক সার্ভের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৫ সালে সার্ভের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিন বছর চলে গেলেও ওই কাজে কোনও অগ্রগতি নেই। অথচ দেশে গ্যাস সংকটের কারনে এখন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার জিএম মো. আব্দুস সুলতান বলেন, গ্যাজপ্রমের প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভেটিং হয়ে এলে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। সূত্রমতে, ২০১৫ সালের দ্বিমাত্রিক মাল্টিক্লায়েন্ট সাইসমিক সার্ভের দরপত্র অনুযায়ী সাগরে তেল-গ্যাসের তথ্য জানতে পানির ২০ মিটার থেকে আড়াই হাজার মিটার গভীরতা পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনার কথা ছিল। ১০ বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনাও করা হয়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :