কায়কোবাদ মিলন : যৌন সন্ত্রাসের শিকার নারীদের জবানবন্দি নেয়ার দায়িত্ব এখন থেকে নারী ম্যাজিস্ট্রেটদেরই দেয়ার আদেশ দিয়েছে সুর্প্রমিকোট। তবে নারীনেত্রী, মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা বলছেন, নারী ম্যাজিস্ট্রেট মুখ্য নয়। আদালত বলেছে ‘‘একজন পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নারী বা শিশু ভিকটিম ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে সঙ্কোচবোধ করেন। ফলে এরূপ নির্যাতনের শিকার শিশু বা নারী ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে অনেক সময় ইতস্তত বোধ করেন।
মানবাধিকারকর্মী এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল সুপ্রিমকোর্টের এই নির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখেই বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁর জবানবন্দি নেয়া হবে তিনি একজন নির্যাতিত নারী। মূল কথা হলো, তাঁর যখন জবানবন্দি নেয়া হবে, তিনি যেন অস্বস্তি বোধ না করেন, আবার যেন নির্যাতনের শিকার না হন, তার গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়। আইন যখন তাঁকে নিয়ে কাজ করবে, তখন তাঁর মর্যাদা যেন রক্ষা করা হয়। তাঁর প্রতি অমর্যাদাকর কিছু যেন না হয়।
তিনি বলেন, ‘‘আমি আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এটা যদি আমরা নারী-পুরুষের বিষয়ে নিয়ে যাই, তাহলে অনেক নারী এখন তো নারীর হাতেই নির্যাতিত হচ্ছেন। নারীও দুর্ব্যবহার করছে নারীর সাথে। এটা তো গ্যারান্টি দেয়া যায় না যে, নারী হলেই সব নিয়ম-নীতি সে রক্ষা করবে।'' তাঁর মতে, ‘‘পুরুষরা অনেক ব্যাপারে অসংবেদনশীল থাকেন, কিভাবে কথা বলবে সেটা তাঁদের জানা থাকে না। পুরুষ বলেই অনেক ব্যাপারে তাঁর মনোভঙ্গি ভিন্ন থাকে। সেসব দিক বিবেচনা করেই হয়তো আদালত এই নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এর একটা দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব আছে, যেটা হবে নারীকে নারী চিকিৎসক দেখবে, নারীকে নারী শিক্ষক পড়াবে, সেটা না করে যেটা করতে হবে, তা হলো, প্রত্যেক ব্যক্তি তিনি নারী বা পুরুষ যে-ই হোন, এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। সেটা নিশ্চিত করা জরুরি৷''
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, নারীকে যদি দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করা যায়, তাহলে আইনে অভিযুক্ত পার পেয়ে যেতে পারেন। এখানেই নারীর চরিত্র হনন করার ব্যবস্থা রয়ে গেছে। ১৮৭২ সালের এই সাক্ষ্য আইন আমরা এখনো সংশোধন করিনি।
আপনার মতামত লিখুন :