শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ০৭:৪৪ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ০৭:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নোয়াখালীতে যৌন হয়রানি: অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে বিপাকে তরুণী

সমকাল: নোয়াখালীর একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে বিপাকে পড়েছেন এক তরুণী। দুই মাস ধরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও এ ঘটনার বিচার পাননি তিনি। উল্টো তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানির মামলা ঠুকে দিয়েছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ। এমন প্রেক্ষাপটে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ভুক্তভোগী তরুণী জানান, মাইজদীতে নোয়াখালী সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের নতুন ক্যাম্পাসে কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে- এক বান্ধবীর কাছে খবর পেয়ে চাকরির সন্ধানে ১৩ জানুয়ারি তিনি ওই কলেজে যান। কলেজের অধ্যক্ষ ড. আফতাব ওই বান্ধবীর আত্মীয়। সেই সূত্রে কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওই তরুণী। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি ড. আফতাব ওই তরুণীকে ফোন করেন এবং ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আকারে-ইঙ্গিতে আপত্তিকর নানা প্রস্তাব দেন। সেই কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সমকালের কাছে রয়েছে। তরুণী জানান, ক্যারিয়ারে ওপরে ওঠার জন্য শারীরিকভাবে আপস করার এবং তাতে রাজি থাকলে ওই তরুণীকে বিদেশি ডেলিগেট ও সমাজের প্রতিষ্ঠিত লোকদের কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ। তার প্রস্তাব সন্দেহজনক মনে হওয়ায় প্রথমে লাইন কেটে দেন তরুণী। পরে অধ্যক্ষ আবার ফোন করেন এবং অশ্নীল ও আপত্তিকর কথা বলতে থাকেন। এমন আচরণের কারণে যেন তাকে শাস্তি দেওয়া যায় সেজন্য তার কথোপকথন রেকর্ড করে রাখেন বলেও জানান তরুণী।

এ ঘটনার পর ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ক্ষমা চাইতে বলেন যৌন হয়রানির শিকার তরুণী। মৌখিকভাবে পুলিশ সুপারসহ জেলার দায়িত্বশীল ও গণমান্য ব্যক্তিদেরও বিষয়টি তিনি অবহিত করেন। কিন্তু ড. আফতাব তাতে না সাড়া না দেওয়ায় ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ূয়ার মাধ্যমে একটি আইনি নোটিশ পাঠান তরুণী। ওই নোটিশে পাঁচ দিনের মধ্যে ড. আফতাবকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। এবারও তিনি চিঠির জবাব না দেওয়ায় ৭ মার্চ ফেসবুক লাইভে এসে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন তরুণী। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং ড. আফতাব আগেও এভাবে অনেককে নিপীড়ন করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিচারের দাবিতে ১২ মার্চ নোয়াখালী শহরে মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দা,

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। স্থানীয় জনগণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী শহরে মানববন্ধন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তির শাস্তি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি জানান।

ওই তরুণী জানান, ১৪ মার্চ তিনি ওই কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেও সাড়া পাননি। পরে ২৮ মার্চ স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাসের সঙ্গে দেখা করে এ ঘটনার বিচার চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তন্ময় দাস জানান, ওই তরুণীকে মামলা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপর ওই তরুণী আর যোগাযোগ করেননি। তার জমা দেওয়া স্মারকলিপি সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

মামলা না করা প্রসঙ্গে ওই তরুণী বলেন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কথা ভেবে মামলা করেননি। কিন্তু অধ্যক্ষ ক্ষমা না চাওয়ায় এখন তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগী তরুণী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ ড. আফতাবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালককে অভিযোগ তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রথমে যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে তার ছাত্রছাত্রীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পরে ৩১ মার্চ নোয়াখালী জেলা জজ প্রথম আদালতে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন অধ্যক্ষ। গত মঙ্গলবার সেই মামলার সমন পৌঁছেছে তরুণীর কাছে। এ ব্যাপারে নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন বলেন, মেয়েটি দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাচ্ছে না। এমনভাবে চলতে থাকলে যৌন হয়রানি আরও বাড়বে। ওই তরুণী চাইলে তাকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান লায়লা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে টেলিফোনে তিনি বলেন, মেয়েটি চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে এসেছিল। এর ২০ দিন পর তাকে ফোন করে চাকরিতে যোগ দিতে বলি; কিন্তু সে অন্যত্র চাকরি পেয়েছে বলে জানায়। এখানেই তার সঙ্গে ফোনালাপ শেষ হতে পারত। কিন্তু মেয়েটি আমার কাছে তার পিএইচডি, বোনের চাকরি এবং বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ চায়। আমিও সরল মনে তাকে পরামর্শ দিয়েছি। এরপর মেয়েটি যা করেছে তা হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন ড. আফতাব। ২৯ মিনিট কথোপকথনের সময় প্রসঙ্গক্রমে কিছু যৌনতা বিষয়ক কথা হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। পরে বাধ্য হয়ে মানহানির মামলা করেছি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, '২০০৮ সালে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ফোনে যৌন হয়রানিকে আইনের আওতায় আনা হয় এবং তা যৌন হয়রানি বলে চিহ্নিত করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী নিপীড়ন সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করতে একটি 'কমপ্লেইন কমিটি' থাকার কথা থাকলেও নোয়াখালী সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজে এমন কোনো কমিটি নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়