লুৎফর রহমান হিমেল : জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ান একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার, একাধারে একজন প্রকাশক ও সাংবাদিক। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালেই এই সাইবার যোদ্ধার জন্ম। শৈশব থেকেই বড্ড ডানপিটে সেই ছেলেটিই প্রথম বৈশ্বিক আলোচনায় আসেন ২০০৬ সালে। ওই বছরই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ‘উইকিলিকস’ প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যে এই ওয়েবসাইট দুর্নীতিগ্রস্ত, দাঙ্গাবাজ, যুদ্ধবাজ বিশ্বনেতাদের গোপন তথ্য ফাঁস করে হৈচৈ ফেলে দেয়। বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক গোপন তারবার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস বিশ্বব্যাপী এখনও আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। তার প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সার্ভার পৃথিবীর বহু দেশে অত্যন্ত গোপনীয় সুরক্ষিত স্থানে রাখা আছে।
এসব স্থান থেকে মাঝে মধ্যে বিপুলসংখ্যক গোপন নথি প্রকাশ করে বিশ্বের নাগরিকদের প্রকৃত সত্য জানার সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে অ্যাসাঞ্জ এবং উইকিলিকস এখন রহস্যের আলো-আঁধারিতে মোড়ানো দুটি রহস্যময় নাম। অ্যাসাঞ্জ প্রথম বড় বোমাটি ফাটান ২০১০ সালে। ওই বছর ইরাক যুদ্ধের ৩,৯১,৮৩২টি গোপন নথি প্রকাশ করেন তিনি। এরপর আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়েও ৭৭ হাজার নথি প্রকাশ করেন তিনি। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি রীতিমতো বীরের খেতাব পান আর অত্যাচারী, অন্যায়কারী দেশ শাসকদের কাছে তিনি আখ্যা পান গুপ্তচর বা দেশদ্রোহী হিসেবে।
নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে একনায়ক ও দুঃশাসকদের বিরুদ্ধে। সেই যুদ্ধ এখনো চলছে। উইকিলিকসের যাত্রা শুরু থেকেই অ্যাসাঞ্জ সবসময় বলে আসছেন, তিনি গতানুগতিক সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন না। তিনি সায়েন্টিফিক জার্নালিজম চর্চায় বিশ্বাস করেন। যেখানে পাঠক-দর্শকরা সংবাদের তথ্য-উপাত্ত নিজ চোখে দেখেশুনে তারপর বিশ্বাস করবে। জোর করে বিশ্বাস করাতে হবে না। উইকিলিকস সেই কাজটিই করে চলেছে। বর্তমান বিশ্বের দুঃশাসকদের সবচেয়ে বড় শত্রুর নাম জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এবং উইকিলিকস। অ্যাসাঞ্জের কারণেই তারা এখন স্বস্তি নিয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন না।
যখনই তারা ঘুমানোর চেষ্টা করেন, এসে দুঃস্বপ্নের মতো হানা দেয় অ্যাসাঞ্জ ও তার উইকিলিকস। এই বুঝি আবার কোনো গোপন তারবার্তা ফাঁস করে দিলো অ্যাসাঞ্জ বাহিনী। এ কারণে অ্যাসাঞ্জকে কোণঠাসা করার নানা উপায় নিয়ে ব্যস্ত তারা। তথাকথিত মূলধারার মিডিয়া প্রায় সব দেশেই ব্যর্থ। ফলে দেশে দেশে নিপীড়ন দুঃশাসনবিরোধী আন্দোলনে আজ বড্ড বেশি প্রয়োজন অ্যাসাঞ্জ ও তার স্বেচ্ছাসেবী সাইবারযোদ্ধাদের মতো অকুতোভয় বিপ্লবীদের।(আমার প্রকাশিত ‘সাংবাদিকতা সুসাংবাদিকতা কুসাংবাদিকতা’ বইয়ের ‘অ্যাসাঞ্জ : এ যুগের চে’ থেকে।) ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :