আফজাল হোসেন : তরুণ উদ্যমী যুবক ফাহাদ আকন্দ। যে সময়টায় লেখাপড়া শেষ করে নিজের ভবিষ্যতের ভাবনায় থাকার কথা, সেখানে সে ব্যতিক্রম। এখন তার কাজ লেখাপড়ার ফাঁকে অবসর সময়ে এলাকার শিশু ও কিশোরদের সংগঠিত করে শারীরিক কসরতে ব্যস্ত রাখা। তার উদ্দেশ্য শিশু কিশোরদের নানা ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখা। এ পর্যন্ত তার একাজে গত দেড় বছরে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এখন তিনি পাচ্ছেন অভিভাবকদের বাহবা।
গাজীপুরের শ্রীপুরের বেরাইদেরচালা গ্রামের আবু ছাইদের ছেলে ফাহাদ আকন্দ। ২০১৬ সালে বরিশালের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল কলেজ থেকে টেক্সটাইলের উপর বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে ভালো চাকুরী করবে। ভালো বেতনের চাকুরীও জুটেছিল। কিন্তু সেসময় ফাহাদের মনে জাগে ভিন্ন চিন্তা, তিনি দেখতে পান আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়ির শিশু কিশোররা বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময়ের বাহিরে যখন বাসায় থাকে, তখন অধিকাংশরাই মুঠোফোন ও টিভির আশক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। নানা কারনে তারা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশেষ করে ভবিষ্যতে এসব শিশু ও কিশোররা অপসংস্কৃতিতে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব বিষয় তাকে ভাবিয়ে তুলত। এসব বিষয়ে তিনি নিজের ভালো চাকুরীর আশা বাদ দেন। পরে তিনি ২০১৭ সালের জানুয়ারীর প্রথম দিকে কয়েকজন অভিভাবকদের বুঝিয়ে স্থানীয় আলহাজ্ব ধনাই বেপারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শিশুদের শারীরিক কসরত শেখানোর কাজ শুরু করেন এর পাশাপাশি কিছু শিশু বাছাই করে শুরু করেন শিশুদের ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষণ। সব শ্রমেই তিনি দিচ্ছেন সেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে।
ফাহাদের ভাষ্য, তিনি শিশুদের শারিরিক কসরতের পাশাপাশি ক্রিকেট খেলা, ভাষার বিশুদ্ধ ব্যবহার, শুদ্ধভাবে জাতীয় সংঙ্গীত পরিবেশনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। বর্তমান ব্যাচে তার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯০জন। ইতিপূর্বে আরো শতাধিক শিশুদের তিনি এসব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এসব প্রশিক্ষণের জন্য তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় তিনি প্রযুক্তিগতভাবে ইউটিউবের সহায়তা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে গাজীপুরের আব্দুল আউয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, অভিভাবকদের অসচেতনতায় বর্তমানে নানা ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের শিশুরা। তারা খেলাধুলা থেকে দূরে সরে গিয়ে মুঠোফোন গেমে আশক্তি ও টিভির দিকে ঝুঁকছে। অল্প বয়সে শিশুদের এরকম কাজে প্রতিনিয়তই তাদের মেধাশক্তি লোপ পাচ্ছে। এ রকম ঝুঁকি এড়াতে ফাহাদের মত যুবকদের এগিয়ে আসা সত্যিই প্রশংসার ।
আপনার মতামত লিখুন :