ফরহাদ টিটু
ইধষধস ধহফ ঃযব খবমধপু হয়ে গেছে আইয়ুব বাচ্চুর সন্তান খড়াব জঁহং ইষরহফ (খজই)! আমাদের ব্যান্ড লিজেন্ডের শরীরী মৃত্যুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই! ১৯৯০তে খরঃঃষব জরাবৎ ইধহফ (খজই) নামে একলা হাতে গড়ে তুলেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এই নামের একটা বেশ জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ছিলো অস্ট্রেলিয়ায়, যার জন্ম ১৯৭৫-এ। কপিরাইটের ঝামেলায় পড়ে অথবা পড়ার ভয়ে আইয়ুব বাচ্চুরা ব্যান্ডের সংক্ষিপ্ত নাম ঠিক রেখে পুরো নাম বদলে রাখেন খড়াব জঁহং ইষরহফ.
সেদিন ৫ এপ্রিল ব্যান্ডটার ২৯ বছর পূর্তিতে বালামকে যখন দলে ঢোকানো হলো লিড ভোকালিস্ট-গিটারিস্ট হিসেবে তখন বড়সড়ো আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো দেশি ব্যান্ড মিউজিক লাভারদের মধ্যে। একসময় তারা শান্তও হয়ে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে বাচ্চুর গান গাইতে পারুক বা না পারুক... বালাম অসম্মান করবে না তাদের প্রিয় শিল্পীকে। সেদিন বালামও এমন সব কথা বলেছেন যা শুনে মনে হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুকে অসম্মান তো দূরে... তার সম্মানে জান দিয়ে দেবেন! অথচ এই বালামই দলের অন্য কারো হাত ধরে জান নিয়ে নিলেন আইয়ুব বাচ্চু আর এলআরবির। তাও আবার ব্যান্ডে ঢোকার দশ দিনের মধ্যেই। অনেকের ধারণা, ব্যান্ডে আইয়ুব বাচ্চুর আদি সহচর, স্নেহাষ্পদ শামীম (সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার) বালামের নামে ব্যান্ড খুলতে মদদ জুগিয়েছেন। এলআরবিকে কবর দেয়ার পেছনে কারণ যাই হোক, কিন্তু এমন কিংবদন্তি একটা দল কীভাবে ‘বালাম ও তার দল’ হয়ে গেলো! ইধষধস ধহফ ঃযব খবমধপু নামটায় এলআরবি আর আইয়ুব বাচ্চু নামের লেগেসির (ঐতিহ্য/ঘরানা/পরম্পরা) চাইতে বালাম নামটা বড় করে দেখানোর দুঃসাহস দেখানো হলো! কোথায় আইয়ুব বাচ্চু আর কোথায় বালাম! কোথায় বালাম আর কোথায় এলআরবির লেগেসি !
গুরু আজম খানের ব্যান্ডের নামেও তার নিজের নাম ছিলো না। ব্যান্ডের নাম ‘উচ্চারণ’ হলেও মানুষের মনে আর মুখে ছিলেন শুধুই ‘আজম খান’। জেমসের ‘নগর বাউল’ও তাই। মাইলস কখনো শাফিন অ্যান্ড লেগেসি হয়নি। আশি-নব্বই দশকের তপন চৌধুরী, খালেদ বা তাদের পরের প্রজন্মের ব্যান্ড তারকারা নিজের নাম লাগিয়ে দল গড়েননি অথবা বা তাদের নিয়ে সংগঠকরা তা করেননি। মাকসুদ বোধহয় কিছুদিন ঢাকা ব্যান্ডের আগে নিজের নাম লাগিয়েছিলেন। তবে সেই ব্যান্ড তো অন্যের ছিলো না ।
আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি যদি সত্যিকারের শ্রদ্ধা বেঁচে থাকতো বালামের তাহলে তার (বাচ্চুর) সারাজীবনের আনন্দ এলআরবি’র মৃতদেহে নিজের নামটা মেনে নিতেন না। এলআরবির শামীম এখন বলছেন, আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের অনুরোধে ব্যান্ডের নাম বদলেছেন তারা। আমার প্রশ্ন, আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার কী সাংবাদিক সম্মেলন করে এটা বলেছেন? অথবা মিডিয়াতে কোনো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারা? ধরে নিলাম, এলআরবির সদস্যদের সত্যি সত্যিই এলআরবি নামটা ব্যবহার করতে অনুরোধ করেছে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার। কিন্তু তা সঙ্গে সঙ্গেই মেনে নিতে হবে কেন? ব্যান্ডে আইয়ুব বাচ্চুর এতো বছরের সঙ্গীরা নিশ্চয়ই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে দিনের পর দিন তার পরিবারকে বোঝাতে পারতেন... ‘এলআরবি গণমানুষের প্রাণের ব্যান্ড, আইয়ুব বাচ্চু আর তার গেয়ে যাওয়া গানগুলো এখন পাবলিক প্রপার্টি... চাইলেই আমরা বন্ধ করে দিতে পারি না... বাচ্চু ভাইকে আবার মেরে ফেলতে পারি না!’
আমার বিশ্বাস এভাবে এগোলে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার একপর্যায়ে মেনে নিতো। এলআরবি বেঁচে থাকতো। আইয়ুব বাচ্চুর লেগেসি অক্ষত থেকে যেতো। ব্যান্ডের শামীম, রোমেলরা সারাজীবন হিরো থেকে যেতেন দর্শক শ্রোতাদের চোখে। এখন আর বালামের প্রতি একটুও শুভ কামনা আমার নেই, যা ছিলো দশদিন আগেও... তার এলআরবিতে ঢোকার প্রথম দিনে। বালামের মতো শিল্পীরা আরো দশ-পনেরো-বিশ বছর গাইলেও আইয়ুব বাচ্চু, জেমস হয়ে যেতে পারবেন না... লিখে রাখতে পারেন! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :