শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৪২ রাত
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না!

আকতার বানু আল্পনা : কারও নিকটজনকে কোনো দুর্ঘটনায় নির্মমভাবে মরতে দেখে আমরা ব্যথিত হই। সেই গাড়ির মালিক-চালকদের শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ কাউকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, ব্ল্যাকমেইলিং, এসিড সন্ত্রাস, প্রতারণার শিকার হতে দেখে বা মলমপার্টির দ্বারা সর্বস্ব খোয়াতে দেখেও আমরা ব্যথিত হই। এসব অপরাধীদের শাস্তি চাই। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ একসঙ্গে অনেক মানুষকে আগুনে পুড়ে মরতে দেখেও আমরা ব্যথিত হই। ভবন মালিকদের বা বিমান মালিকদের শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ পুলিশের দ্বারা কাউকে চাঁদাবাজি, মামলা, হামলা, খুন, গুম, অসৎ বা অনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার, রিমান্ড, ক্রসফায়ার, রেপ, হুমকি, নির্যাতন ইত্যাদির শিকার হতে দেখলেও আমরা ব্যথিত হই।

চিহ্নিত পুলিশদের শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ বিরোধী পক্ষের (ভিন্ন ধর্ম, দল, বা মতের অনুসারী) কাউকে কেউ মেরে আহত করলে, যৌন নির্যাতন করলে, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলে বা মেরে পঙ্গু করে দিলেও আমরা ব্যথিত হই। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবেনা।’ ভবন ধসে অনেক পোশাক শ্রমিক বা শিক্ষার্থী নিহত হলেও আমরা ব্যথিত হই। পোশাক শিল্পের মালিক বা স্কুলভবনের প্রকৌশলীর শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ কোনো মেয়ে, নারী বা শিশুকে ধর্ষণ, গণধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে দেখলেও আমরা ব্যথিত হই। অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবেনা।’ কেউ খুন হলে বা কাউকে নির্যাতন করে বা আগুনে পুড়িয়ে মারতে দেখলেও আমরা ব্যথিত হই। অপরাধীর দ্রুত এবং সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। তারপর কিছুদিন পর ভাবী, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ ইত্যাদি...।

এভাবেই দিনে দিনে এদেশে অপরাধীদের বিস্তার ঘটেছে। উপরোক্ত ঘটনাগুলোর যেকোনোটি যেদিন আপনার সঙ্গে ঘটবে, সেদিন আপনি বুঝবেন, হাউ ধানে হাউ চাল!

আমাদের দেশে অপরাধীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ভয় পায় না। হাসে। যেন বিয়ের পর বউয়ের হাত ধরে প্রথমবার দাওয়াত খেতে মামা শ্বশুরের বাড়ি যাচ্ছে। তারা হাসতেই পারে। কারণ তারা জানে, কিছুদিন পর বিচারের দাবি থেমে যাবে। সবাই ভাববে, ‘আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে না।’ সবাই ভুলে যাবে। আবার নতুন কোন ঘটনা ঘটবে। হুজুগে বাঙালি আবার তখন সেটা নিয়ে কিছুদিন লাফালাফি করবে। অপরাধীরা আরও জানে, এদেশে কীভাবে অপরাধ করেও শাস্তি থেকে রেহায় পাওয়া যায়। সেজন্যই অনেক অপরাধীরা নিরাপদে বেঁচেবর্তে আছে। কিছুদিন পর অপরাধীরা যে ছাড়া পেয়ে যাবে, ইতোমধ্যে তার ইঙ্গিতও আমরা পেয়ে গেছি। আমরা যারা অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে চিল্লাফাল্লা করছি, তারা এসব অপরাধীদের কাছে ‘এক একটা প্রথম শ্রেণীর বেয়াকুফ’ ছাড়া আর কিছু নয়। এদেশে প্রকাশ্যে অপরাধ করেছে জেনেও কিছু মানুষ অপরাধীর পক্ষ নেয়। কারণ এদেশে নিজ দল-মতের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না, করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা শুনুন। আমার বাসার সামনে সারি করে লাগানো কিছু সুন্দর পাতাবাহার গাছ আছে। একদিন দেখি, কে যেন একটা গাছের উপরে কিছু আলগলতা ফেলে দিয়ে গেছে। সেই আলগলতা ধীরে ধীরে বড় হয়ে গোটা গাছটাকে ঘিরে ফেলছে। তাই আমি একদিন অনেকটা সময় ব্যয় করে লতাগুলো সব তুলে ফেলে গাছটাকে ফাঁকা করে দিলাম, যাতে পাতাগুলো আবার ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু কিছুদিন পর দেখলাম, আবার পাতাতে লতা গজিয়েছে। আম্মা বললো, ‘লতার বিস্তার বন্ধ করতে হলে গাছের পুরো মাথাটাই কেটে ফেলতে হবে।’ তাই করলাম এবং লতা গজানো বন্ধ হলো।
অপরাধ নির্মূল করার সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো দলমতের যেকোনো অপরাধীদের কঠোরভাবে শাস্তি দিতে হবে। বেছে বেছে দু’চারজনকে শাস্তি দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। এটা না বুঝলে এদেশে অপরাধীরা হাসতেই থাকবে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়