শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:১২ রাত
আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:১২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্ভীক মহত্বের গৌরবে উদ্ভাসিত হোক আমাদের বর্ষবরণ ১৪২৬

রিপন আহসান ঋতু : ১৪২৫-এরর চৈত্রমাসে আমরা ১৪২৬ বঙ্গাব্দের আহ্বান শুনতে পাই। নতুন সূর্যের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের সূচনা হয়। প্রতিদিনের মতো এ দিনটিও যথানিয়মেই শুরু হয়। আলোক-প্লাবনে পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়। পাখি গান গায় । গাছে গাছে শিহরণ জাগে। কিন্তু তবু এ দিনটি অন্য দিনগুলোর চেয়ে স্বতন্ত্র,বিশিষ্ট। প্রাতিহ্যক তুচ্ছতার ঊর্ধ্বচারী। আমাদের জীবন, কৃষিবিন্যাস, প্রকৃতি ও নিসর্গের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ও লোকসংস্কৃতির বিকাশের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় বাঙালির নববর্ষ। কিন্তু বাংলাদেশ শুধু বাঙালিরই ভূখন্ড ও রাষ্ট নয়, এখানে নানা ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির নানা জাতিসত্তার মানুষও বসাবস করে। তাঁদেরও রয়েছে নিজস্ব বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান । নতুন বছরকে বরণ করার জন্য আদিবাসীরা নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যে পালন করে বৈশাখী বা নববর্ষের উৎসব। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচিত্র নামে পরিচিত বৈশাখ।

বৈশাখী উৎসব চাকমাদের কাছে বিজু, মারমাদের কাছে সাংগ্রস, ত্রিপুরাদের কাছে বৈসু, তঞ্চগ্যাদের কাছে বিষু, ম্রোদের কাছে চাংক্রান, চাকদের কাছে সাংগ্রাংই, থিয়াংদের কাছে সাংগ্রস, নামে পরিচিত। বিচিত্র নামের বৈশাখী প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠী পালন করে নিজস্ব ঢঙে। আদিবাসীদের উৎসব-আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এই নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ী, হাতে চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ পরে আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি পাঞ্জাবিও পরে। এভাবে লোকজ বর্ষবরণ প্রাথাগুলোর কোনো কোনোটির অনুসরণের মাধ্যমে গ্রামীণ ঐতিহ্য অনেকটা সংরক্ষিত।

আমাদের পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বর্ষবরণকে মনে রাখতে হবে এবং তাঁরাও যেন নিজ নিজ সংস্কৃতির চর্চা করতে পারে সেই বিষয়ে সচেষ্ট ও সক্রিয় হতে হবে। এক্ষেত্রে ঐতিহ্য ও শেকড়ে যেমন প্রোথিত হতে হবে তেমনি হঠকারী উগ্রতাকেও পরিহার করতে হবে। একুশে ফেব্রুয়াারিই এখন বাংলা। তাকে অতুৎসাহ থেকে যেমন ৯ই ফাল্গুন করার রোমান্টিকতা থেকে মুক্ত হতে হবে তেমনি যে সাল আদৌ ইংরেজি নয়, তাকে ব্যবহার করার সময় ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে ইং লেখার বদভ্যাসও বর্জন করতে হবে। যা কিছু ভালো তার সবই বিলেতি ভাবার উত্তর-ঔপনিবেসিক দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে।

সাংস্কৃতিক এই দুর্বলতার সুযোগে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যও তার স্বকীয়তা হারাতে বসেছে । সংস্কৃতি যেন আর আমাদের জীবনের সহজ ও স্বাভাবিক অনুষঙ্গ নয়, বরং তা যেন সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট গোষ্ঠির পণ্য, আড়ম্বর অথবা অনাবশ্যক চিৎকার। সবকিছুকে বিক্রয়যোগ্য করে সংস্কৃতির প্রাণ ও চেতনাকে যেমন হরণ করা হচ্ছে তেমনি বিকৃত করা হচ্ছে। গ্রামীণ তথা বৃহত্তর জনগণের সামগ্রিক জীবনচর্চার যে সংস্কৃতি তা কারো অনুকম্পা ও তথাকথিত পৃষ্ঠপোষকতার মুখাপেক্ষী নয়। কারণ, মৃত্তিকালগ্ন মানুষের জীবনধারার সঙ্গে নববর্ষ ও বঙ্গাব্দের বিভিন্ন মাসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলা মাসের হিসেবেই তারা জানে, কখন বীজতলা তৈরী করতে ও চারা রোপন করতে হবে, কখন সেচ ও নিড়ানি দিতে এবং ফসল কাটতে হবে। কর্তিত ফসলের মাঠকে কখন ও কীভাবে পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। কোনো কৃত্রিম আভ্যাস থেকে নয়, জীবনের অপরিহার্য় প্রয়োজন, সৌন্দর্য ও সুষমা প্রান্তিক কিন্তু ভূমিলগ্ন মানুষদের জীবন ও সংস্কৃতির যুগলবন্দী সৃষ্টিতে অনুপ্রানিত করে। সমস্ত বৈরিতা ও প্রতিকুলতাকে অগ্রাহ্য ও অতিক্রম করে জাতীয় প্রবৃদ্বি বৃদ্ধিতে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা প্রকৃত অর্থে অনুধাবন করতে না পারলে আমাদের সংস্কৃতির গভীরে পৌছানো এবং সেক্ষেত্রে সদর্থক ও স্থায়ী কোনকিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না।

আজ যে কৃষি ও কৃষিব্যবস্থা যা কিছু সাম্রাজ্যবাদের কবলে বন্দী, বীজ সংরক্ষণের পরিবর্তে প্রতিবার আমরা যে এদের বা এদের দেশীয় এজেন্টদের কাছে ধর্ণা দিই, কৃষিব্যবস্থার সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতি যে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে নববর্ষে আমাদের সে বিষয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা গান ভালবাসি- সে গান আমাদের প্রাণের ও স্বতঃস্ফুর্ত। কিন্তু শিল্পী ও কলাকুশলীদের আতœবিক্রয়ের গান, যতই মোহনীয় হোক, আমাদের নয়। আমাদের সমস্ত সুকৃতি ও শুভ কর্মে বাণিজ্যের পতাকা ও বিজ্ঞাপন আমাদের জানিয়ে দেবে এবং আমাদের অর্জন তাদের ও তাদের পণ্যের হয়ে প্রচার করবে তা হতে পারে না। সংস্কৃতির বিনিময়ের নাম করে এদেশে অন্যদের সুযোগ দিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য বস্তা বন্দী করা যথেষ্ট অনুচিত। তাই গরম ভাতে পানি ঢেলে পান্তা খাওয়ার দৃশ্য যারা ধারণ করে নিজেদের প্রচরনা সমৃদ্ধি করতে চাই তাদেরও বুক কাঁপা দরকার। কেননা বাঙালী সমাজ-সংস্কৃতির অস্থিমজ্জার সঙ্গে একাকার হয়ে আছে পান্তা খাওয়ার এই মাহাতœ্য। তবে একথাও অস্বীকার করছি না যে আজ উৎসবের অঙ্গে যুগ-পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট।

নাগরিক সভ্যতার যান্ত্রিকতা আজ আমাদের হৃদয়-ঐশ্বর্য লুন্ঠন করেছে। নির্বাসিত করেছে শুষ্ক, নি®প্রাণ করেছে জড়জগতে, উৎসব গুলোতে চোখে পড়ছে হৃদয় দৈন্যের নগ্নতাসহ আন্তরিক প্রীতির অভাব যা আমাদের কিছু মানুষের নির্লজ্জ কৃপনতারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাই সব কিছুকে ছাপিয়ে নববর্ষে যেন ফিরে পাই আমাদের সেই হৃত-গৈরব আমাদের হৃদয় যেন পরিপূ? হয়ে উঠে আন্তরিক প্রসন্নতা ও কল্যাণী ইচ্ছার ভাবরসে
রবীন্দ্রানাথ বলেছেন দেশে জন্মগ্রহণ করলেই দেশ নিজের হয় না, তাকে এ অর্থেই প্রকৃতভাবে বোঝা সম্ভব । কবি যে আরো বলেছেন ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়, তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে’ তা আমাদের জন্য অধিকার সত্য ও প্রযোজ্য। আজ তাই ‘সত্যের গৌরবে, প্রেমের গৌরবে, মঙ্গলের গৌরবে, কঠিন বীর্য, নির্ভীক মহত্বের গৌরবে উদ্ভাসিত হোক আমাদের বর্ষবরণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়