শাহীন চৌধুরী: কালবৈশাখী ঝড় এবং বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা শুরু হয়েছে। এর ফলে ভোগান্তির কবলে পড়ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুতের এই লুকোচুরি খেলাকে লোডশেডিং বলতে নারাজ। অথচ ভোগান্তির হাতে থেকেও রক্ষা পাচ্ছননা সাধারণ মানুষ।
বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে চাহিদা অনেক কম। এ কারনে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, পিক আওয়ারে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৩৮৯ মেগাওয়াট। ওই সময় উৎপাদনও ৯ হাজার ৩৮৯ মেগাওয়াট। কিন্তু তারপরও খোঁদ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলকায় ৩ থেকে ৪ চার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করেছে।
নগরীর পান্থপথ এলাকার হোটেল ব্যবসায়ি আরমান হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪ বার বিদ্যুৎ গেছে এর কারন কি তাও আমরা জানিনা। তিনি বলেন, অবশ্য বিদ্যুৎ গেলেও দ্রুত চলে আসে কিন্তু আমাদের যা হয়রানি হওয়ার তাতো হতেই হয়। মোহাম্মদুর হুমায়ুন রোডের বাসিন্দা সৈয়দ আফজাল বাকের বলেন, আমার এলাকায় প্রতিদিনই কয়েকবার করে বিদ্যুৎ চলে যায়। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের বিল অনেক বেড়েছে কিন্তু নিরবচ্ছিন বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো নিশ্চিত হয়নি।
রাজধানীর বাইরে আরইবি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। ঝড় বৃষ্টির কারনে কোন এলাকায় একবার বিদ্যুৎ গেলে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে আর আসার নাম নেই। বিষয়টি গ্রামের মানুষের জন্য যেন গা-সহা হয়ে গেছে। কিন্ত সবচেয়ে বড় অসুবিধায় পড়েছে যারা সেচ কাজের সঙ্গে জড়িত সেইসব মানুষ। কারণ এখন চলছে ভরা সেচ মৌসুম।
বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত কয়েক বছরে সরকার শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেই নজর দিয়েছে কিন্তু একই সাথে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঞ্চালন লাইন এবং বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং পুরোনো ট্রন্সফরমারগুলো পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ কারনেই বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও গ্রাহকরা ভালো সার্ভিস পাচ্ছেন না। তাছাড়া বিদ্যুতের আওতা যে পরিমান বেড়েছে সেই সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকবল বাড়ানো হয়নি এমনকি পর্যাপ্ত পরিবহন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরও অভার রয়েছে। তারা মনে করেন, এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি কিছুটা কমিয়ে অন্য বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। তাহলেই কেবল বিদ্যুৎ গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন।
বিদ্যুতের এই লুকোচরি খেলার ব্যাপারে বিপিডিবি’র পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরীর দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, বিদ্যুতের কোনও সমস্যা নেই। যা ঘটছে সবই স্থানীয় সমস্যা। ঝড়ের কারনে অনেক সময় গাছ পড়ে গিয়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। আবার দেখা যায় অতিরিক্ত লোডের কারনে ট্রান্সফরমার ট্রিপ করে এজন্য সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ চলে যায়।
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এসব সমস্যাও সমাধানের চেষ্টা করছে। আশা করছি খুব শিগগিরই গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :