কায়কোবাদ মিলন: ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফরে শুক্রবার বাংলাদেশে এসেুেছন ড. লোটে শেরিং। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বাংলাদেশ সফরের একটা বিশেষ ও ব্যক্তিগত গুরুত্ব আছে। প্রায় ১৮ বছর আগে, তরুণ লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন । পরে সার্জিক্যাল ডিগ্রির জন্যেও আরেকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। সাউথ এশিয়ান মনিটর
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমি ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছি। সেখানে আমার বহু সহপাঠী ও বন্ধু রয়েছে যাদের সাথে আমি খেলেছি, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেছি। তাই, ব্যক্তিগত দিক থেকে এই সফরের ব্যাপারে আমি খুবই উদ্দীপ্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেরিংয়ের মতে, এই সফরে ভুটানের একটা অগ্রাধিকার থাকবে ভুটানের মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞের ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কামনা করা।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করবো যাতে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ দিয়ে সহায়তা করেন তিনি। আমাদের জনগণের জন্য এটা তাৎক্ষণিক উপকারের বিষয় হবে। প্রধানমন্ত্রী শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ সফরেও যাবেন।
প্রথম সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। থিম্পুতে যে তিনটি দেশের আবাসিক দুতাবাস রয়েছে, সেই তিনটি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। অন্য দেশ দুটি হলো ভারত ও কুয়েত।
বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) উপ আঞ্চলিক ব্লকটি দুই দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে দুই সরকার বিশেষ করে বিবিআইএন ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ট্রানজিট ও সংযোগ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে পারে । বাংলাদেশ বিশ্বাস করে উপ-আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য, কৃষি, এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং কার্গো পরিবহন সংক্রান্ত বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হতে পারে এই সফরে। ২০১৭ সালে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুটান সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটির পরিমার্জনা করা হয় । এ সময় ভুটানের ১৮টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অধীনে নিয়ে আসা হয়।
রফতানির দিক থেকে বাংলাদেশ ভুটানের কাছে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বাস্তবে, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যাদের সাথে ভুটানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এর অর্থ বাংলাদেশের কাছে যা রফতানি করে ভুটান, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে তার চেয়ে কম। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সাথে ভুটানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৩ বিলিয়ন ন্যু (ভুটানি মুদ্রা)-তে গিয়ে পৌঁছেছে, ২০১৪ সালে যেটার পরিমাণ ছিল ১.৪ বিলিয়ন ন্যু। ভুটানের মুদ্রা গুলট্রামের (ন্যু) মূল্যমান নির্ধারিত হয় ভারতীয় রুপির সাথে এর মানের বিবেচনায়। বাংলাদেশ আর ভুটানের মধ্যে বাণিজ্যের আকার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৭ সালে বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৩.৭ বিলিয়ন ন্যুতে।
বাংলাদেশে ভুটানের রফতানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দারুচিনি এবং ম্যান্ডারিন কমলা এবং খনি-ভিত্তিক পণ্য যেমন রত্ন পাথর, নির্মাণ পাথর এবং কাঁচা লোহা। বাংলাদেশ সরকার অবকাঠামো নির্মাণের উপর জোর দেয়ায় সম্প্রতি নির্মাণ পাথর আমদানির পরিমাণ যথেষ্ট বেড়ে গেছে। ২০১৭ সালে এই নির্মাণ পাথর ছিল ভুটানের শীর্ষ ১০টি রফতানি পণ্যের একটি। বাংলাদেশী আমদানিকারকরা বলেছেন, ভুটানের পাথর গুণগত মানের দিক থেকে অনেক উন্নত। বর্তমানে দেড় সহশ্রাধিক ভুটানি ট্রাক ড্রাইভার এবং প্রায় একশ ব্যবসায়ী এই পাথর রফতানির সাথে জড়িত । বাংলাদেশ থেকে ভুটানের আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, ফলের জুস ও বাদাম, গার্মেন্টস, ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, এবং মেলামাইনের থালাবাসন।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ভুটানের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। এখানে অবশ্য ভারতের সংশ্লিষ্টতা দরকার কারণ বাংলাদেশ আর ভুটানের মধ্যে সরাসরি কোন সীমান্ত নেই।
আপনার মতামত লিখুন :