শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ০৬:০৪ সকাল
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ০৬:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাংগঠনিক সংস্কারের পথে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপিসাংগঠনিক সংস্কারে হাত দিয়েছে বিএনপি। আগামী দিনে দলকে শক্তিশালী করতে আমূল পরিবর্তনের পক্ষে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। মূলত এ ভাবনা থেকেই আগামীতে সরাসরি ভোটে মূল সংগঠনসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হবে। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গত কয়েক মাসে সাক্ষাৎ করে আসা বিএনপির কয়েকজন নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

দলটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের অবস্থানেও নেই তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। সর্বশেষ ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের প্রার্থীদের লজ্জাজনক হার এবং প্যানেল তৈরি করতে সংগঠন ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা উপলব্ধি করেন, ঢাবিতে ছাত্রদলের ভিত প্রায় নেই। এ কারণে পুরো দলকেই ঢেলে সাজাতে হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, এই সাজানোর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত না রেখে সাধারণ কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে হলে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে মনোযোগ দিয়েছেন তারেক রহমান। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন অঙ্গসংগঠনগুলোর পুনর্গঠনে। নিজে থেকে কথা বলছেন জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্বে সমস্যা রয়েছে, এর রিফর্ম দরকার, দলটির পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন। সেদিক থেকে দলটির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। তারা শুরু করেছে, কতটা সাকসেস করবে, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, একটি বড় রাজনৈতিক দলে কাউন্সিল বা ভোটের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে আগ্রহী। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আসন্ন নির্বাচনেই ভোট প্রয়োগের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্ব যেমন আটকে রয়েছে, তেমনই তরুণ ছাত্ররাও বঞ্চিত হয়েছে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে। রুহুল কবির রিজভী-ইলিয়াস আলী কমিটির পর ছাত্রদলে আর সরাসরি ভোটে কাউন্সিল হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত হাইকমান্ড থেকে দলের যে কোনও কমিটি মনোনীত করা হয়। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী নেতারা তাদের নিজেদের বলয় ধরে রাখতে কখনও হাইকমান্ডকে ‘ভুল’ বুঝিয়ে কমিটি দেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিএনপি ঢাকা উত্তরের কমিটিতে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ আছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের প্রভাবের কারণে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সমর্থকরা কমিটিতে জায়গা পাননি। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়া, মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে কাউন্সিল ছাড়া। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে কমিটি গঠনের কথা। এ কমিটি গঠনেও একাধিক নেতা তাদের পছন্দের নারী নেত্রীদের প্রাধান্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা তিন নেতা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের পুনর্গঠন ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে সক্রিয় করতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চালু করার পক্ষে। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির নেতাও তাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন— সরাসরি কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে দলে ‘কর্মমুখরতা’ চালু হবে এবং রাজনীতির প্রতি তরুণ শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হবেন।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বিএনপির আসল লক্ষ্য মূল সংগঠন ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নির্বাচন কাউন্সিলের মাধ্যমে করা। এর আগে নানান কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। কোনও কোনোটি হয়তো সম্মেলনের মধ্য দিয়ে হয়েছে, না হলে সবাই মিলে বসে করেছে।’

শামসুজ্জামান দুদুর ভাষ্য, ‘এখন আমাদের টার্গেট হচ্ছে বিএনপিসহ সব অঙ্গসংগঠনেই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কমিটি ও নেতৃত্ব নির্বাচন করা। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আলোচনা করছি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্ধারণ করার ব্যাপারে ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা একমত হয়েছেন।’

ছাত্রদলের বাইরে অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোতেও কাউন্সিল করার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। গত ৫ এপ্রিল বিএনপির অঙ্গসংগঠন ওলামা দলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ১০ বছর পর গত ৩১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে প্রধান করে এই কমিটি হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাউন্সিল করার জন্য কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক দিন ধরে নির্বাচন হয় না। অনেক নেতা অসুস্থ। এতদিনে দলে ও সংগঠনে নতুনদের আগমন ঘটেছে। আমি মনে করি, কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচন করা ভালো। এ ব্যাপারে বর্ধিত সভা করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০ বছর পর বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক হলেন শামসুজ্জামান দুদু। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কৃষক দলের নতুন কমিটি নির্বাচন করতে পারবো।’

গত ৬ এপ্রিল দেওয়া হয়েছে তাঁতি দলের আহ্বায়ক কমিটি। এ কমিটিকেও কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে টিম লিডার করে দলের ২১ সদস্যের বিদেশ বিষয়ক ‘ফরেইন অ্যাফেয়ার্স’ কমিটি পুনর্গঠন করে বিএনপি। ওই কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করা হচ্ছে। আগামী এক মাসে এ কমিটির আরও কিছু কাজ দৃশ্যমান হবে, এমন বার্তা দিয়ে রেখেছেন এফএসি’র জ্যেষ্ঠ একজন সদস্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে যেভাবে বলা আছে, আমরা সেভাবে দল পরিচালনা করছি। মাঝে মধ্যে হয়তো কোনও বিশেষ কারণে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কোনও কোনও কমিটি বা অঙ্গসংগঠন কাউন্সিলের মাধ্যমে করা যায়নি। কিন্তু এটা ঠিক যে ২০০৮ সালের পর থেকে সারাদেশে জেলা কমিটির ক্ষেত্রে আমরা আহ্বায়ক কমিটি করেছিলাম। পরে সব কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ হয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়