শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:০৫ রাত
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:০৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে আন্তর্জাতিক হিপোক্রেসি

আলতাফ পারভেজ : জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে অপহরণপূর্বক আটকের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিক রীতিনীতির সরাসরি লঙ্ঘন ছিলো। যেকোনো দূতাবাস এলাকার ‘কূটনীতিক সার্বভৌমত্ব’ থাকে। লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটেনের পুলিশ যেভাবে জোর করে তুলে নিয়েছে তার পক্ষে কোনোরূপ আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারবে না তারা। কারণ অ্যাসাঞ্জ জোরপূর্বক ওই দূতাবাসে ছিলেন না। তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়েছিলো। ব্রিটেনের বর্তমান সরকার বলছে, তারা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তাকে আটক করেছে। এটাও কার্যত আরেকটি বেআইনি বক্তব্য।

কারণ অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক নন, তার প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস্ও সেখানকার কোনো সংস্থা নয়। কোনো দেশ চাইলেই অপর দেশের নাগরিককে এভাবে জোরপূর্বক হস্তান্তরের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক দস্যুতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র আসলে যা বলছে না তাহলো... যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের যুদ্ধাপরাধ ফাঁস করার কারণেই তারা অ্যাসাঞ্জকে আটক করেছে ও বাড়তি নির্যাতন করতে চাইছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের আইনগত অবস্থানও চরম হাস্যকর। তারা বলছে, অ্যাসাঞ্জ তাদের দেশের ‘গোপন নথিপত্র’ পেয়েছিলেন এবং আরও নথিপত্র পাওয়ার জন্য তাদের কম্পিউটার হ্যাক করায় ভূমিকা রাখছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মুখে এরূপ অভিযোগ এ কারণে উদ্ভট শোনায়... যখন নিজ দেশসহ সমগ্র বিশ্বজুড়ে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অপরের ব্যক্তিগত জগতে নজরদারি করছে এবং হ্যাকিং করে বেড়াচ্ছে। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে এইরূপ অভিযোগ উত্থাপনের আগে ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত ছিলো... অন্তত নিজ দেশের নাগরিকদের উপর গোপন নজরদারি বন্ধ করা।

ট্রাম্প প্রশাসন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক লিবারেল প্রচারমাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবীও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নেমেছে। তাদের ক্ষোভের যুক্তি হলো উইকিলিকস্ যুক্তরাষ্ট্রের বিগত জাতীয় নির্বাচনে ফাঁস করে দিয়েছিলো, কীভাবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সন্ত্রাসের সমর্থক আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো নির্বাচনী প্রার্থীদের অর্থ সহায়তা দেয়। এটা এক অদ্ভুত বিষয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে যে কর্পোরেটরা অর্থ দিয়ে প্রভাবিত করে সেটা নিয়ে এসব প্রচার মাধ্যম উদ্বিগ্ন নয়... তাদের আপত্তি হলো উইকিলিকস কেন সে তথ্য ফাঁস করলো এবং কেন রাশিয়ার হ্যাকারদের কাছ থেকে ওই সব তথ্য সংগ্রহ করলো।

এরূপ স্ববিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় অনেক আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমও... যারা অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকস্রে ফাঁস করা ইরাক ও আফগান যুদ্ধনথি ব্যবহার করে শত শত প্রতিবেদন ছেপে বছরের পর বছর পাঠকদের কাছে তা বিক্রি করেছে। কিন্তু এখন অ্যাসাঞ্জকে অপহরণের ঘটনায় তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার নেই।

সাংবাদিকতা মাত্রই কাজ হলো এমন সত্য তুলে ধরা যা অন্যে তার হীনস্বার্থে লুকিয়ে রাখতে চায়। জনস্বার্থে গোপন সত্যের প্রকাশ যদি ফৌজদারি অপরাধ হয়... তাহলে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকতার মৃত্যু ঘটবে। সত্য জানতে আগ্রহী সবারই তাই অ্যাসাঞ্জের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়