নাঈম কামাল : শিক্ষা জীবনের ৯৮ থেকে ২০০৭, দশটি বছর কাটিয়েছি সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায়। ২০০০ সালে সিরাজ-উদ-দৌলা অধ্যক্ষ হয়ে আসে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায়। আমাদের পাশের বাসার এক আন্টি প্রায় সময় সিরাজ-উদ-দৌলার হতভাগা বাবার গল্প বলতো। সিরাজ-উদ-দৌলার বাবা নাকি সামান্য চা দোকান করে সিরাজ-উদ-দৌলাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ছেলেকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে নাকি বাবা মার তিন বেলা খাওয়া জোটেনি। মাদ্রাসার সভা গুলোতে দেখতাম মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য নিয়ে বেশ তালিম দিতেন আমাদের। মাতা পিতার গুরুত্ব বোঝাতে অনেক সময় কেঁদে বুক ভাসাতেন।
কিন্তু নিজের চোখে যা দেখেছি তাতে মনে মনে ভাবলাম বয়ান শুধু আমাদের জন্য, হুজুরের জন্য ব্যতিক্রম। সিরাজ-উদ-দৌলার হতভাগা পিতা ছেলেকে দেখতে আসলে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল সহ তুই সম্বোধন করতো। পিতা সিরাজকে আপনি বলে সম্বোধন করতেন।
২০০০ সালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হন তিনি । অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এই মাদ্রাসার বিপুল পরিমাণ অর্থ ধারাবাহিকভাবে আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। চেক জালিয়াতি, প্রতারণা ও নাশকতাসহ নানা অভিযোগে ৪টি মামলা হলেও স্বপদে বহাল ছিলো এই অধ্যক্ষ ।
কয়েক বছর ধরে সে ছাত্রীদের প্রশ্ন দেয়ার লোভ দেখিয়ে, উপবৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলে ইত্যাদি নানা উপায়ে যৌন নির্যাতণ করে আসছে বলে শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কথা বলার সাহস পেতো না। ৬ মাস আগে অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলো মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী।
মাদ্রাসায় শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার-অপমান করার বহু অভিযোগ শিক্ষকদের মুখ থেকে শুনেছি। এত কিছুর পরও তার টিকে থাকার রহস্য ছিলো, যখন যে সরকার আসে সে দলের নেতাদের ম্যানেজ করা। এই কাজে তার দক্ষতা ছিলো বেশ ভালো।
সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণত ভাল ব্যবহার করতো। নানা চতুরতায় কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ব্রেইন ওয়াশ করে পক্ষে রেখেছিলো। ফলে বেশ কিছু শিক্ষার্থী তার পক্ষে ছিলো। এদেরকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে অধ্যক্ষের পক্ষে থাকা স্থানীয় প্রভাবশালীদের এক পক্ষ।
লিখেছেন জাকিয়া সিদ্দিকি (ফেসবুক থেকে)
আপনার মতামত লিখুন :