শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:০৬ দুপুর
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১৩ বছরে অগ্নিদগ্ধ ১২ হাজার

ডেস্ক রিপোর্ট : গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে আগুনে পুড়েছে অন্তত ১২ হাজার মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৯১৬ জন। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন নিহত হন। চলতি বছরের ২০ ফেব্রম্নয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে প্রাণ হারান ৭০ জন। এর এক মাস পর গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে ২৭ জনের মৃতু্য হয়।

ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০০৪ সালে সারাদেশে ৭ হাজার ১৪০টি ও ২০০৫ সালে ৫ হাজার ৭৪৫টি ছোট-বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ নিহত হননি। তবে ২০০৬ সালে ৯ হাজার ৫৪২টি অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেছে ৯১ জন এবং আহত হয়েছে ৮৭৩ জন। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪৮টি অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪৮০ জন। আহত হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৩ জন। আর ২০০৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারাদেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৮১টি। এর মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮৯ হাজার ৯২৩টি অগ্নিকান্ডে ১ হাজার ৪৩১ জন মানুষ পুড়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৩৬৫ জন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৯৫টি অগ্নিকান্ডে ৬ হাজার ৩৯৭ জন মানুষ পুড়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৭১ জন। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬৬৩টি অগ্নিকান্ডে ৪ হাজার ১৭৩ জন মানুষ পুড়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৪৮০ জন।

এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে ২০১৮ সালে। ওই বছর ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা গেছে ১৩০ জন। আহত হয়েছে ৬৬৪ জন। আনুমানিক ৩৮৬ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে আগুনে পুড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মরেছে ২০১১ সালে। ওই বছর ১৫ হাজার ৮১৫টি অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৬৫ জন এবং আহত হয় ১ হাজার ৩৮৫ জন।

২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি অগ্নিকান্ডে মারা গেছে ৪৫ জন। আহত হয়েছে ২৬৯ জন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৫৭ কোটি টাকার। ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৮৫৮টি আগ্নিকান্ডে মারা গেছে ৫২ জন। আহত হয়েছে ২৪৭ জন। ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২৪০ কোটি টাকার। ২০১৫ সালে ১৭ হাজার ৪৮৮টি অগ্নিকান্ডে মারা গেছে ৬৮ জন। আহত হয়েছে ২১৬ জন। আনুমানিক ৮৫৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ৮৩০টি অগ্নিকান্ডে প্রাণ গেছে ৭০ জনের। আহত হয়েছে ২১০ জন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকার মতো।

এর মধ্যে পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানী অগ্নিকান্ডসহ বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এখনো মানুষের মনে ক্ষত সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১১ জন নিহত হয়। এতে সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোশাকশ্রমিক। আগুন থেকে রেহাই পেতে ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃতু্য হয় আরও ১০ জনের। একই বছর গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টসে লাগা আগুনে নিহত হয় ২১ জন। হামীম গ্রম্নপের অগ্নিকান্ডে ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালের ২৮ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে ৭ নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হয়। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচতলা ভবনের পুরোটাই ধসে পড়ে। ওই ঘটনায় ৪১ জন প্রাণ হারায়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দুই লাখ ৮ হাজার ৬৮১টি অগ্নিকান্ডে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অগ্নিকান্ডে অর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৩ হাজার ২ টাকা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৯৯ কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯২ টাকা।

ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৫ বছরে ২ লক্ষাধিক অগ্নিকান্ডের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে সারাদেশে ঘটে যাওয়া ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকান্ডের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই ৬ হাজার ২০৮টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে সারা দেশে অগ্নিকান্ড ঘটেছিল ১৮ হাজার ১০৫টি, যার মধ্যে ঢাকায় ৫ হাজার ৬৬টি অগ্নিদুর্ঘটনা রয়েছে। আর ২০১৬ সালে সারা দেশে ১৬ হাজার ৮৫৮টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ঢাকায় ঘটেছে ৫ হাজার ৫৯৫টি অগ্নিদুর্ঘটনা।

২০১৫ সালে সারাদেশে ১৭ হাজার ৪৮৮টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আগ্নিকান্ড ৫ হাজার ৭৫২টি। ২০১৪ সালে দেশে ১৭ হাজার ৮৩০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ছিল ৫ হাজার ৩৯২টি অগ্নিদুর্ঘটনা।

এদিকে, সারাদেশের অগ্নি দূর্ঘটনা কমাতে ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রতিটি বাড়িতে ও পাড়া-মহলস্নায় ফায়ার ফাটিং সিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ হিসাবে তারা বলছেন, সব আগুনই প্রাথমিকভাবে ছোট থাকে। আগুন লাগার সময় কালক্ষেপণ না করে তা যদি নেভানো যায়, সেক্ষেত্রে আর বড় অগ্নিকান্ড ঘটে না। কিন্তু বেশির ভাগ ভবনেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের টিম পৌঁছাতে পৌঁছাতে আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে গ্রাস করে ফেলে।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী যায়যায়দিনকে বলেন, ভবনে শুধুমাত্র অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি থাকলেই হবে না, এগুলোর ব্যবহার জানতে হবে। এসব বিষয়ে দক্ষ লোকবল থাকতে হবে। বনানীর আরএফ টাওয়ারের প্রসঙ্গ উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি ছিল। কিন্তু তা বন্ধ থাকার কারণে কেউ বের হতে পারেনি। বিভিন্ন ফ্লোরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও ছিল। কিন্তু তা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা কেউ জানত না। তাই এসব বিষয়ে নিয়মিত মহড়া হওয়া জরুরি। ফায়র ফাইটাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগের সময়কে গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিজেরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে বলে জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, অগ্নিকান্ড মোকাবিলায় দুই ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার। প্রথমত যান্ত্রিক, দ্বিতীয়ত প্রশিক্ষণ। দুর্যোগ মোকাবিলা করার যন্ত্রসমূহ যথা স্থানে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বেশির ভাগ ভবনেই তা নেই। মহড়া বা প্রশিক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো নিয়মিত হলে সময়মতো কাজে লাগে। তাই ঘনঘন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, কোনো ভবন নির্মাণে ত্রম্নটি থাকলে ভবনের রেটোফিট করে দৃঢ়তা বাড়ানো যেতে পারে। অর্থাৎ ভবনের যে অংশে ত্রম্নটি আছে তা নিখুঁতভাবে মেরামত করতে হবে। সিঁড়ি, লিফট এমনকি কলামে ত্রম্নটি থাকলেও রেটোফিট করে তা সহনশীল করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, আগুন মোকাবিলায় অনেক কিছু দরকার। সব পর্যায়ে ফায়ার সিকিউরিটি ও প্রস্তুতি থাকতে হবে। এফআর টাওয়ারের আগুনের ঘটনায় আধা ঘণ্টা পর জানানো হয়। তাদের যেতে আরও ১০ মিনিট সময় লাগে। তাদের পর্যাপ্ত ফায়ার ইকুইপমেন্ট রয়েছে। কোনো কিছুর কমতি নেই। ফায়ার ইকুইপমেন্ট পর্যাপ্ত থাকার পরও কি যথাসময়ে যেতে পারলেন- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, পাবলিক প্রাইভেট কোলাবরেশন থাকতে হবে। যদি তারা যথাসময়ে জানতে পারতেন, তাহলে এত মানুষের প্রাণ যেত না।
সূত্র : যায় যায় দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়