রাশিদ রিয়াজ : নারীদের মাসের বিশেষ কয়েকটি দিনে শরীর ভাল না থাকলে এক-আধ দিন কাজে যেতে পারেন না ভারতের মহারাষ্ট্রের বিড়া জেলার আখকলের নারী শ্রমিকরা। কিন্তু ঠিকাদার সে কথা শুনবেন না। এক-এক দিন কাজে কামাইয়ের জন্য জরিমানা গুণতে হয় ৫০০ টাকা। তাই নিজেদের জরায়ু বাদ দিয়ে এখন বন্ধ্যাত্বকরণের দিকে ঝুঁকছেন তারা।
ভারতের একটি দৈনিকে এই খবর দেখে চমকে উঠেছিল মহারাষ্ট্রের জাতীয় নারী কমিশন। সব দিক খতিয়ে দেখে তারা এ নিয়ে বুধবার নোটিস পাঠিয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। যে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়, মুখ্যসচিবকে সেই অনুরোধও জানিয়েছে নারী কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার বক্তব্য, যে পরিস্থিতিতে ওই সব নারী শ্রমিক আখের খেতে কাজ করছেন, তা শোচনীয়। বিষয়টি নিয়ে কমিশন যে উদ্বিগ্ন, তাও জানিয়েছেন তিনি।
অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত আখ চাষের মওসুম। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বিড়া জেলায় ওই সময়ে ভিড় জমান প্রচুর সংখ্যক নারী শ্রমিক। আখ কাটার কাজ করেন মূলত নারী শ্রমিকরা। তাদের স্বামীরা করেন খেতের অন্য কাজ। এক এক জন দম্পতিকে এক এক ‘ইউনিট’ হিসেবে ধরা হয়। সেই মতোই তাদের মজুরি দেন ঠিকাকর্মীরা। কিন্তু অভিযোগ, মাসের তিন-চার দিন ঋতু¯্রাবের সময়ে শরীর খারাপ থাকলে নারী শ্রমিক যদি কাজ করতে না আসতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তার স্বামী তো মজুরি পান-ই না। উল্টে নিজেদের পকেট থেকে দিন প্রতি ৫০০ টাকা করে ঠিকাদারদের দিতে হয়। গ্রামবাসীরা জানান, এই নিয়মই এই সব অঞ্চলের ধরাবাঁধা। তাই টাকা কাটা যাওয়ার ভয়ে দু’-তিন সন্তানের মায়েরা এখন জরায়ু বাদ দিয়ে বন্ধ্যত্বকরণের রাস্তা বেছে নিচ্ছেন। তাতে মাসে কোনও দিন কাজও কামাই হচ্ছে না। আর সেই সঙ্গে মোটা টাকা জরিমানাও দিতে হচ্ছে না।
মুখ্যসচিব ইউপিএস মদনের কাছে নোটিস পাঠিয়ে রেখা শর্মা জানিয়েছেন, এই অত্যাচারের শিকার যে সব নারী, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও সমাজের মূল¯্রােতে ফেরাতে রাজ্য সরকার কী, কী পদক্ষেপ করল, তা যেন কমিশনকে জানানো হয়। সেই সঙ্গেই অভিযুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করেছে কমিশন, যাতে ভবিষ্যতে নারীদের এই ধরনের অমানবিক আচরণের শিকার হতে না-হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া
আপনার মতামত লিখুন :