অনলাইন ডেস্ক : ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে ৭টা। বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীর জটলা। স্কুলের একটি বন্ধ কক্ষ থেকে ভেসে আসছে হিন্দি ও বাংলা গানের শব্দ। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে একের পর এক নৃত্য পরিবেশন করছে ছাত্রীরা।
সোমবার রাতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটছে এমন ঘটনা।
বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে রাত্রিযাপন করা পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে ছাত্রীদের নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের রাতের এমন আয়োজনে ক্ষুব্ধ অভিভাবকসহ সচেতন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকদের ত্রৈমাসিক সভা ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের সততা সংঘের সভায় অংশ নিতে আসেন পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন।
নৈশভোজসহ রাত্রিযাপনের জন্য তিনি উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে রাতে বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় নাচগানের।
প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রীদের তাৎক্ষণিকভাবে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন। একটি কক্ষে প্রবেশ করিয়ে ওই কর্মকর্তাকে খুশি করতে নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করা হয়।
এসময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইনসহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন ও প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টুকু।
আয়োজনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক জানান, সোমবার রাতে বিদ্যালয়ের আশপাশের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকেরা জরুরি খবর দেয়। খবর পেয়ে অন্তত ৩০ জন ছাত্রী ও ২০ জন ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। পরে নৃত্যের আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় চিত্রশিল্পী শাহ আলম বলেন, “অফিসারকে খুশি করতে এভাবে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নাচগান করানো ঠিক হয়নি। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার আসছেন। তাই কয়েকটা ছেলেমেয়ে গানটান গাইছে। তাও বাইরেও না, একটা রুমের মধ্যে।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, “নতুন একটা মাদ্রাসা পরিদর্শনে শেষে রাতে মৌডুবি স্কুলে অবস্থান করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েরা নাচ ও গান শোনাবে বলেছে।”
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। প্রতিবেদকের কাছে এ ঘটনার ভিডিও সংরক্ষিত আছে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, “ওখানকার স্থানীয় বাচ্চারা নিজেরা একটু করছে। কোনো সমস্যা আছে? রাতের বেলায় স্কুলে কক্ষের মধ্যে হলে সমস্যা কী? বেআইনি কিছু হয়েছে কিনা?”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “আয়োজন আমি করিনি। এটা প্রতিষ্ঠান করছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন। আমি ছেলে-পেলেদের দু-একটা উপদেশ বাণী দিয়েছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান বলেন, “বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ওই আয়োজন বন্ধের জন্য বলেছি, সে অনুযায়ী আয়োজনটি বন্ধ করা হয়। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাবো।”সূত্র : দেশ রুপান্তর
আপনার মতামত লিখুন :