কামরুল হাসান মামুন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতো শিক্ষক আছেন? তাদের কতোজন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন? এমনকি কতোজন নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজ বিভাগে ঘটে যাওয়া নানা অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদ করেন? কেউ একজন যে শিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হয়েছে তার প্রথম লিটমাস টেস্ট হলো সে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ালো কিনা। সেই প্রতিবাদের মাধ্যম ভিন্ন হতে পারে। যেই শিক্ষক অন্যায়ের প্রতিবাদতো করেই না বরং অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গায় সে শ্রেণিকক্ষে দাঁড়ায় কিভাবে? সে তো গোটা শিক্ষক সমাজকে জাতির কাছে হেয় করছে। এখানে ডাবল ক্রাইম হচ্ছে ১ অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না ২. অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গাচ্ছে। এর ফলে সে হয়তো সাময়িক কিছু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু সম্মান নামক কি অমূল্য সম্পদ হারাচ্ছে সেই হিসাব করতে পারার জ্ঞানটুকুও তার নাই ভেবে কষ্ট হয়। সমাজে প্রতিবাদী মানুষের অভাবই বলে দেয় এই দেশের শিক্ষার মানের কি ধস নেমেছে।
একটি দেশে ন্যূনতম থ্রেশোল্ড সংখ্যক প্রতিবাদী মানুষ ছাড়া দেশ সুষ্ঠু সরল পথে থাকতে পারে না। এটা প্রাকৃতিক কারণেই পথভ্রষ্ট হবে। যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে তাদের মধ্যে অমানবিক পাশবিক চিন্তা আসবে। তাদেরকে পথে রাখতে একদল রাখাল বালক দরকার। খুবই দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ অধিকাংশেরই শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতাই নেই। তারাই দেশের সকল বিচ্যুতির কারণ। ছাত্রছাত্রীরা সঠিক শিক্ষক না পাওয়ার কারণে তারাও শিখতে পারছে না। ফলে একটি ক্যাসকেডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা অধপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। চাকচিক্কই উন্নতির লক্ষণ না। বরং এটি ক্যামোফ্লাজের অংশ। একসময় আইনজীবীরা প্রতিবাদী ছিলো। আজ তারাও দলান্ধতার চরমে পৌঁছেছে। এই দলান্ধতাকে শিক্ষক আর আইনজীবীরা একটি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছে। শেষ করছি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার অংশ দিয়ে।
‘আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?/স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল/দেবশিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি/ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?/মাদীগুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি খাঁড়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি।
ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা/মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা’।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ এমনি এমনি সুন্দর হয় না! সমাজের প্রত্যেক ইন্ডিভিজুয়ালের তার নিজেদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার পর কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেই অতিরিক্ত দায়িত্বটা হলো চৌকিদারী, দাড়োয়ানগিরি। এই দায়িত্বে অবহেলা করলে সমাজটা সুন্দর হবে না এবং এর ফলে আমি নিজেও ভালো থাকবো না। ইউরোপ আমেরিকা এতো সুন্দর কেন? কারণ ওখানে সবাই চৌকিদারী আর দাড়োয়ানগিরিটা ঠিকভাবে করে। কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কাউকে হাতে পায়ে ধরে রাস্তায় নামাতে হয়।
ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :