কায়কোবাদ মিলন: বাংলাদেশের যুবসমাজের প্রতি তিন জনের একজন বেকার। শতাংশের হিসাবে যা ৩৪.৩ শতাংশ। মাত্র দুই বছর আগের (২০১৬-১৭) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে বেকারত্বের এই দিকটি জানাচ্ছে রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা বিবিএস (ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস)। এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে এবং মাত্র সাত বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। সাউথ এশিয়া মনিটর
কিন্তু বেকার-ভুক্তভোগি শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীদের পরামর্শ অন্য জায়গায়। তারা খোদ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা কাঠামোরই পরিবর্তন চান। আইআইডির একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণ-তরুণীদের ৮৪ শতাংশ মনে করছে বর্তমানে তাদের প্রধান সমস্যা দক্ষতা এবং কর্মসংস্থান। ২৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তাদের চাকরি পেতে কমই সাহায্য করে। আর তাদের ৮ শতাংশের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের কাজেই আসে না। বরং চাকরি পেতে উল্টো বাধার সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে আইআইডি দেশের ২৩টি জেলায় এ জরিপ চালায়। এতে ১১,৬৫৮ জন তরুণ-তরুণী অংশ নেন।
সংকটটা হচ্ছে ২০০৯ সালের পর ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অপ্রাতিষ্ঠানিক আয়ের সংস্থান হয়েছে। কিন্তু তারচেয়েও বেশি সংখ্যকের চাকরি হারাবার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন(এটুআই) প্রকল্পই জানাচ্ছে, শুধু অটোমোশনের প্রভাবে আগামী দিনগুলোতে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে চাকরি হারাবে ৬০ শতাংশ, আসবাবপত্র খাতে ৫৫ শতাংশ, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে ৪০ শতাংশ, চামড়া শিল্পে ২০ শাতংশ এবং পর্যটন ও সেবাখাতে ২০ শতাংশ । ইতোমধ্যে এ আগাম তথ্যের নজির মিলছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতেই।
আরেকটি স্থানীয় গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) ত্রৈমাসিক প্রকাশনী ‘পলিসি ইনসাইট’র এপ্রিল-২০১৮ সংখ্যায় এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে নতুন করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়ছে না। নতুন নতুন মেশিন সংযোজনের ফলে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে কিন্তু কাজের সুযোগ কমছে।
অটোমেশনের কারণে গত ২৬ বছরে প্রতি মিলিয়ন ডলার রপ্তানির বিপরীতে ৭৪ শতাংশ বা ৪০৩ জন শ্রমিক চাকরির সুযোগ হারাচ্ছে বলে ওই নিবন্ধে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৯০ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রতি মিলিয়ন ডলার আয়ে ৫৪৫ জন শ্রমিক কাজ করত; কিন্তু ২০১৬ সালে এসে সেখানে মাত্র ১৪২ জন শ্রমিকের হাত ধরেই একই পরিমাণ রপ্তানি আয় আসছে। প্রায় একই তথ্য উঠে এসেছে সিপিডির জরিপে। সংস্থাটি জানায়, বিগত ২০১২ সাল থেকে চার বছরে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে কর্মসংস্থানে প্রবৃদ্ধি কমেছে। তাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে এবং কর্মকর্তা পর্যায়েও কমেছে ১৬ শতাংশ। এসব তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, প্রযুক্তির প্রভাবে সোয়েটার এবং নিটিং খাতে কর্মী আগের চেয়ে কিছুটা কম লাগছে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিনটি শিল্পবিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ। প্রথমটি হয়েছিল ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ ও ১৯৬৯ সালে কম্পিউটারের আবিষ্কার শিল্পবিপ্লবের গতিকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। তবে আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিজিটাল বিপ্লব। কর্মী কম লাগার প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। এ নিয়ে এখনই সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
আপনার মতামত লিখুন :