শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ৩১ মার্চ, ২০১৯, ০৮:৫৭ সকাল
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০১৯, ০৮:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সারাদেশে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট : ডাকসুর পর এখন সরকার দেশের সব উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনে উদ্যোগী হতে যাচ্ছে এমন তথ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বয়স ও ছাত্রত্ববিষয়ক জটিলতায় ডাকসুতে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা লড়তে না পারায় এরই মধ্যে চড়া মূল্য গুনতে হয়েছে সংগঠনটিকে। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের অধিকাংশ প্রার্থীরই নিয়মিত পড়াশোনা শেষ হলেও এমফিল'র সুবাদে তারা প্রার্থিতার সুযোগ পেয়েছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্ভব না হলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শীর্ষ পদগুলোতে ৩০ বছরের মধ্যে বয়স আছে এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের পাশাপাশি তাদের এমফিলে ভর্তির নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।

বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা ছিল তাদের ছাত্র সংগঠন থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে সেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের পর সে ধারণা বদলেছে। ওই নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ফল করার কারণে বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন নেতারাও এখন মনে করছেন বেশি সিনিয়রদের হাতে নেতৃত্ব থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ হচ্ছে ছাত্রদল। যাদের প্রার্থী করা হয়েছিল তারাও অপরিচিত মুখ হওয়ায় চরম অপ্রত্যাশিত ফল হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ অবস্থায় তরুণদের সামনে না আনলে আগামীতেও ডাকসুর পরিণতি এড়ানো যাবে না বলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে।

এ কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রধান পদগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে এমন ছাত্র নেতাদের দিয়ে কমিটি করে ক্যাম্পাসে পরিচিত করে তোলার এখন কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি নামকরা কলেজগুলোতেও কমিটি গঠনের কাজ সারতে চায় দলটি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিষয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এরই মধ্যে নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। সে অনুসারে কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে পদ পেতে আগ্রহীরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। অনেকে আন্দোলন সংগ্রামে নিজের ভূমিকা তুলে ধরতেও চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার যারা আন্দোলনে শক্ত ভূমিকা রাখতে পারেননি তারাও এখন নানা ধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন।

এদিকে যেসব সিনিয়র নেতা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের পদ পাওয়ার জন্য কাজ করছেন কিন্তু বয়স বেশি হওয়ার কারণে নতুন সিদ্ধান্তে এখন আর পদ পাবেন না তাদেরকে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে যুক্ত করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। সে অনুসারে ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতা এখন সেখানে পদ পাওয়ার জন্যও তৎপর হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে বিএনপির যেসব কেন্দ্রীয় নেতা কাজ করছেন তাদের একজন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি  বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউনিট পর্যায়ের কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এগুলো সম্পন্ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মাথায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও রয়েছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। কারণ ডাকসুতে আগের রাতে সিল মেরে রাখাসহ হাজারো অনিয়ম আমরা দেখেছি। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থেই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ডাকসুর ক্ষেত্রে প্রশাসন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রার্থী করতে যা যা করা দরকার তার সবই করেছে। এর মধ্য দিয়ে আমরাও একটি বার্তা পেয়ে গেছি। এ কারণে এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কমিটি নিয়েও ভাবছি। কারণ সেখানে নির্বাচন হলে ঢাবির মতো যদি অপরিচিতদের প্রার্থী করা হয় তবে তা কিছুটা হলেও সমস্যার কারণ হয় সেটি পরিষ্কার হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে যাদের ত্রিশের কোটায় বয়স আছে বা ওই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা যে সেশন বা বর্ষের তার কাছাকাছি বয়স ও সেশনের নেতাদেরকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি তাদের নিয়মিত ছাত্রত্ব শেষ হলেও এমফিল বা অন্য কোনো কোর্সে যেন ভর্তি হয়ে থাকে সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে যারা দীর্ঘদিন ছাত্রদলের জন্য ত্যাগ শিকার করছে বয়স বেশি হলেও তাদেরকে ভিন্নভাবে মূল্যায়নের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।'

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু যায়যায়দিনকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি অন্যান্য কমিটি নিয়েও কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা আসবে সেটা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। তবে যেসব স্থানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে পারে সেখানে যারা প্রার্থী হতে পারবে তাদেরকেই সামনে আনার চেষ্টা যেমন আছে তেমনই নির্বাচন কি ছাত্রদের ভোটে হবে নাকি অন্য কোনো স্থানের নির্দেশে কাজ হবে সেটি নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা আছে। কারণ আমরা মনে করি আমাদের অংশগ্রহণ তাদের অবৈধ কাজের বৈধতা দিতে পারে। যদিও এটি নিয়ে ভিন্ন মত আছে। আমাদেরকে গত ১০ বছর ক্যাম্পাসে যেতে দেয়া হয়নি। এখনো ঢাবির হলে আমাদের ছাত্রদের অবস্থান করতে দেয়া হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কথা চলছে। পাশাপাশি যারা পদ পাবে না তাদেরকে অন্য সংগঠনে সরিয়ে নেয়ার চিন্তাও আমাদের রয়েছে।'

ছাত্রদল নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। তিনিও যায়যায়দিনকে বলেন, 'ডাকসুতে প্রার্থী খুঁজে পেতে ছাত্রদলকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরে যাদেরকে সামনে আনা হয়েছে তারা মূলত অপরিচিত মুখ। অথচ ছাত্রদলে হেভিওয়েট নেতাও ছিল। কিন্তু পদ্ধতিগত মারপঁ্যাচে তাদেরকে আটকে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রে সম্ভব না হলেও যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কাজ চলছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে যারা প্রার্থী হতে পারবে তাদেরকে সামনে আনার কোনো বিকল্প নেই।'

এদিকে ছাত্র সংসদে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সমান সুযোগ না পাওয়া নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত। বিএনপি ও ছাত্রদলের একটি অংশ মনে করে সমান সুযোগ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে এ নির্বাচনও বর্জন করা উচিত। তা না হলে ছাত্রদলের অংশগ্রহণ তাদের প্রতিপক্ষকে বৈধতা দিবে। তবে অন্য অংশ মনে করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সমান সুযোগ না পেলেও ক্যাম্পাসে নূ্যনতম কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবস্থানের একটি সুযোগ পাওয়া যাবে। আর এতটুকু সুযোগ পেলেও ছাত্রদলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত সোমবার সাবেক ছাত্রদল ও ছাত্র সংসদের নির্বাচিত নেতাদেরকে নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে সমান সুযোগ না পেলে ওই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকা বা না থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব এসব নেতার হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন।

ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে তারেক রহমানের এসব নির্দেশনার পর ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যারা এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিল তারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে ত্যাগী নেতারা দাবি করছেন যোগ্যতা ও দলের জন্য ত্যাগকেই পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

ছাত্রদলের একজন নেতা ইকবাল হোসেন শ্যামল এ বিষয়ে  বলেন, 'সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন এক না। পরিবেশ, পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে যোগ্য, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে একটি কমিটি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'

ছাত্র সংগঠনটির আরেক নেতা করিম প্রধান রনি বলেন, 'কমিটির আগে অনেক নেতাই থাকে। কিন্তু সবসময় যারা মাঠে ছিল এবং দলের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট রয়েছে, সততা, নিষ্ঠা, গ্রহণযোগ্যতা, সকলকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা যাদের রয়েছে তাদেরকে দিয়েই কমিটি হওয়া উচিত। তা না হলে এ কঠিন সময়ে দলকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।'

সূত্র : যায়যায়দিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়