মৌরী সিদ্দিকা : বাংলাদেশ প্রতিকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল। একইভাবে নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের রোল মডেল হতে হবে। আর এ জন্য দরকার আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা। এ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নগর দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত। সব ধরনের নগর দুর্যোগ সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা ও করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। সূত্র : কালের কণ্ঠ
বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউক প্রণীত গাইড লাইন অনুসরণ করা হয় না। এফ আর টাওয়ারের কথাই ধরা যাক। ভবনটির অনুমোদন ছিল ১৮ তলা পর্যন্ত। রাজউক অনুমোদিত নকশার বাইরে ভবনটি কিভাবে ২২ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হলো এবং কোন অদৃশ্য শক্তি সেটিকে মেনে নিল , সে বিষয়ে সূক্ষ্ম তদন্ত হওয়া দরকার। অথচ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ৫০০ জনের অধিক বসবাসরত ভবনে ফায়ার প্রোটেক্টেড ডোর , কমপক্ষে দুটি সুবিশাল সিঁড়ি , ফায়ার অ্যান্ড স্মোক এক্সিট থাকা বাধ্যতামূলক , যা এই ভবনসহ ঢাকা ও অন্যান্য নগরীর অধিকাংশ ভবনে অনুপস্থিত। ভবনটিতে যদি স্মোক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি ফ্লোরের সিঁড়িমুখে স্মোক ব্লক ডোর থাকত (যেটি বাধ্যতামূলক) , তাহলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্ধার কাজে নিয়োজিত টিম সবাইকে নিরাপদে বের করে আনতে সক্ষম হতো।
এবার আসা যাক-আহমদ টাওয়ার ও আউয়াল টাওয়ারের দূরত্ব। বাস্তবে রাজউক প্রণীত গাইড লাইন অনুযায়ী বহুতল ভবনগুলোর মধ্যবর্তী স্থান পর্যাপ্ত (সুনির্দিষ্ট) থাকতে হবে। কিন্তু ভবনটির দু’পাশেই সরু স্পেস হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সমন্বিত উদ্ধারের জন্য ও জরুরি নির্গমনের কাজ করায় নিয়োজিত বাহিনীর ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। যারা ভবনে আটকা পড়েছিলেন , অনেকেই রীতিমতো প্যানিক ও মানসিকভাবে ভিতু হয়ে গিয়েছিলেন এবং কমপক্ষে ছয়জন ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই আহত ও পঙ্গু হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। কাজেই এ পর্যন্ত যতজনকে ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মনোবিজ্ঞানী ও সাইক্রিয়াটিস্ট দিয়ে পরীক্ষা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ জরুরী। এসবই করতে হবে দপ্তর , অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে। নগর দুর্যোগ মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব অপরিসীম।
একই সঙ্গে নগর দুর্যোগ ঝুঁকি চিহ্নিত করা , ঝুঁকিগুলো পরিমাপ করা ও বিশ্লেষণ করা , ঝুঁকি নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করা এবং টেকসই ও ঝুঁকি সহনীয় নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন যেমন গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য নিতে হবে সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি। প্রয়োজনে সমন্বিত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চিহ্নিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য নিতে হবে সমন্বিত উন্নয়ন নীতি , উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মসূচি। এসডিজি ও ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিগণিত করার যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে , নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা যেন তাঁর অন্যতম একটি সফল কার্যক্রম হয় এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। প্রয়োজনে সমন্বিত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :