নুর হাছান নাঈম, জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক কর্মচারীর জামাতাকে তুলে নিয়ে মারধর, ছিনতাই ও মুক্তিপন দাবির অভিযোগে তিন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ ৪৪ ব্যাচের সঞ্জয় ঘোষ (আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ৪৫ ব্যাচের মো. আল রাজী (মীর মশাররফ হোসেন হল) এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ ৪৫ ব্যাচের মো. রায়হান পাটোয়ারি (শহীদ রফিক-জব্বার হল)।
এদের মধ্যে রায়হান পাটোয়ারি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ও অবাঞ্ছিত ।
এই ঘটনার সাথে জড়িত আরো দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তারা হলেন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের শাহ মোস্তাক সৈকত ও দর্শন বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের মোকাররম শিবলু। আটককৃতরা জানিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া এই দুজনই ছিনতাই, মারধরের কাজটি করেছে।
শনিবার (৩০ মার্চ) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছন থেকে তাদেরকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। পরে তাদেরকে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়। এরপর প্রক্টর অফিসে নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মারধরের শিকার ব্যক্তি মো. মনিরের আত্মীয়-স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী (ড্রাইভার) মো. আলমগীর হোসেনের জামাতা মো. মনির সরদার বিশমাইলে তার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। আজ শনিবার ভোরে তিনি ঢাকায় চাকরির স্থলে যোগদানের জন্য বিশমাইল এলাকায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় আটককৃতরা সহ ৫ জন তাকে ধরে সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ সহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন। এক পর্যায়ে আত্মরক্ষার জন্য তিনি দৌড় দেন। এরপর তারা ধাওয়া দিয়ে তাকে আটক করে একটি ইজিবাইক যোগে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে তারা তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেন এবং বেধড়ক মারধর করেন। পরে তারা মনিরের স্ত্রীর কাছে মুঠোফোনে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর খবর পেয়ে মনিরের শ্বশুর বাড়ির লোকজন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ঘটনাস্থলে যান। এসময় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের তিনজনকে আটক করা গেলেও অন্য দুইজন পালিয়ে যান।
আহত মনির সরদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার মো. মনির হোসেন বলেন, আমি ফার্মগেটে প্রাইভেট কার চালাই। ভোরে ফার্মগেটে যাওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে রওনা দেই। বিশমাইলে রাস্তার ঢাল বেয়ে নামার সময় আমাকে আটক করে। তারা আমাকে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করে এবং এটা আমাকে স্বীকার করতে বলে। এরপর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে চেইন দিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী মারধর করে। তারা আমার কাছে থাকা টাকা, ফোন, মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে সঞ্জয় ঘোষ বলেন, আমি জুনিয়রদের ফোন পেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে যাই। আমি বিষয়টি জানতাম না। গিয়ে দেখি, ওরা তাকে মারধর করেছে। তবে ছিনতাই ও মুক্তিপন দাবি করা হয়নি।
অপর দুই ব্যক্তি মো. আল রাজী ও মো. রায়হান পাটোয়ারি মারধরের কথা স্বীকার করলেও ছিনতাই ও মুক্তিপন দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, `আমরা অভিযুক্তদের লিখিত ভাষ্য নিয়েছি। অভিযোগকারীদের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ডিসিপ্লিনারী বোর্ডের বৈঠকের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :