শিরোনাম
◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মুজিবনগর দিবস বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১৯ সকাল
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোরগ লড়াই এবং তুরস্কের জাতীয় খেলা

আবু হাসান শাহরিয়ার : চোখে চোখ রেখে প্রশ্নটা আমাকেই করা ‘বলো তো তুরস্কের জাতীয় খেলা কী?’ মুশকিলেই পড়া গেলো! মাস্টারমশাইরা এােত কিছু পড়িয়েছেন স্কুলে, এটা তো শেখাননি! তবে তুরস্কের কামাল আতাতুর্ককে আমি চিনি। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কামাল পাশা’ কবিতাটিও আমার মুখস্থ। স্কুলে আবৃত্তি করে পুরস্কারও পেয়েছি। চাইলে দু’চার পঙক্তি শুনিয়ে দিতে পারি ‘ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,/অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই।/কামাল! তুনে কামাল কিয়া ভাই।’ তুরস্কের জাতীয় খেলার খোঁজ না রাখলেও সে দেশের জাতীয় বীরকে তো চিনি! অতএব, দুলালের মেজদার চোখে চোখ রেখে আমিও নিজের বিদ্যাবুদ্ধি একটু জাহির করলাম। তাতে কোনো কাজ হলো না। পত্রপাঠ জবাব এলো ‘যা জানতে চেয়েছি, তা না জানলে বল ‘জানি না’, আমি কামাল আতাতুর্কের নাম শুনতে চাইনি। কোনও কামাল-টামাল তোকে আজ আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে না।’ এই পর্যন্ত বলেই ‘লালু লালু’ বলে হাঁকডাক শুরু করলেন। সর্বনাশ, কুকুর-টুকুর আছে নাকি বাড়ির ভেতরে! ‘লালু’ নাম তো কুকুরদেরই হয় বলে জানি। শেষ পর্যন্ত কুকুরের কামড় খেয়ে বাড়ি ফিরতে হলে তো ভীষণ সমস্যা। তার মানে একডজন ইনজেকশনও নিতে হবে পেটে। এ কোন ফ্যাসাদে পড়লাম রে বাবা! তো লালু আসার আগেই পূর্ববর্তী ঘটনা একটু খোলাসা করি।

বাবার বদলির চাকরির সুবাদে রাজশাহী থেকে ময়মনসিংহে এসেছি দু’ মাসও হয়নি। থাকি কলেজ রোডে। বাসা, স্কুল, ব্রহ্মপুত্র নদ, নানার বাড়ি ও বড় খালার বাড়ি ছাড়া নতুন শহরের তেমন কিছুই চিনি না। সহপাঠী মুন্না ও মিন্টুকে ছাড়া পাড়ার সমবয়সীদেরও না। পড়ি ক্লাস ফাইভে। কলেজ রোডলগ্ন মাঠের তিনটি কড়ই গাছ আমার বন্ধু। মাঝে মধ্যে ওদের ছায়ায় বসে গায়ে হাওয়া-বাতাস লাগাই। বাড়ির ছাদে উঠে লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ি। এর মধ্যে একদিন মোরগ লড়াই নিয়েও ভারি মজার একটি গল্প পড়েছি। তারপর কোথাও মোরগ লড়াই দেখলেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি। যেদিনের ঘটনা বলছি, সেদিন এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে তাগড়াই একটা মোরগ কিনেছিলেন মা। রাতে অতিথি আপ্যায়ন করবেন বলে। রাত তো অনেক দূর। ইত্যবসরে মোরগ লড়াই দেখতে সদ্য কেনা মোরগটাকে নিয়ে আমাদের বাড়ির দু’ বাড়ি পর দুলালদের বাড়ি এসেছিলাম। দু’দিন আগে ওর সঙ্গে পরিচয়। দুলালদের বাড়ির সামনের সুপরিসর উঠানে অনেক মোরগ-মুরগি চরে, দেখেছি। তাই সাত-পাঁচ না ভেবে বগলে দড়িবাঁধা মোরগ নিয়ে এখানেই চলে আসা। এসেই উদ্দেশ্য সাধনে নেমে পড়া ওদের একটা পোষা মোরগের সঙ্গে আমার সদ্য কেনা তাগড়াই মোরগটার লড়াই বাধিয়ে দেয়া। লড়াই যখন বেশ জমে উঠেছে, আচমকা পেছন থেকে কেউ কলার চেপে ধরলো এবং আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো আমার সাধের মোরগের পায়ে বাঁধা দড়ি। ভেস্তে গেলো মোরগ লড়াই। তিনিই দুলালের মেজদা। আমি সেই মেজদার কবলে। দুলালের সঙ্গে পরিচয়ের দিন দূর থেকে তাকেও দেখেছিলাম।

ইতোমধ্যে লালু এসে গেছে। না কুকুর নয়, আমার চেয়ে দুই-তিন বছরের বড় একজন ছেলে। নাদুস নুদুস চেহারা। পরনে শুধু লুঙ্গি। বুঝলাম, এ বাড়িতে কাজের ছেলে। তার দিকে এক পলক তাকিয়ে দুলালের মেজদা ফের আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘এখন তুরস্কের জাতীয় খেলা হবে। মল্লযুদ্ধ।’

তারপর যা ঘটলো, আমার জীবনের সেটা এক বড় শিক্ষা। ‘উচিত শিক্ষা’ বললেও ভুল হবে না। লালুর সঙ্গে আমাকে কুস্তি লড়তে হলো। অসাধ্য সাধন বলে কথা। লালু (পরে জেনেছি, ওর নাম লাল মিঞা, সবাই ‘লালু’ ডাকে) এক প্যাঁচে আমাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে এবং ঘাড়-গর্দান চেপে ধরে আমার ওপর অবস্থান নেয়। মেজদা না বলা পর্যন্ত লড়াইয়ে বিরতি দেয় না।

লড়াই শেষে আমার মোরগ আমাকে ফেরত দিয়ে পাড়াতুতো মেজদা বললেন, ‘কেমন লেগেছে? লড়াইয়ে মোরগরাও মানুষের মতো কষ্ট পায়। তাই মোরগ লড়াই দেখার ইচ্ছে হলে এখন থেকে তুরস্কের জাতীয় খেলা খেলবি। মনে থাকবে তো?’ সেদিন বলা হয়নি আজ বলছি, ‘মেজদা, আপনার সেদিনের কথা আজও আমার মনের দেয়ালে সযতেœ বাঁধিয়ে রাখা আছে। প্রতিদিন একবার সেদিকে তাকিয়ে আপনাকে কুর্নিশ জানাই। একইসঙ্গে কুসুম কুমারী দাশের সেই ‘কাজে বড়ো’ ছেলেটিকেও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি, যাকে বাড়ির সবাই ‘লালু’ ডাকতো।

লেখক : কবি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়