শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৪:০৭ সকাল
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৪:০৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেইজ বার্ড

বিপ্লব সাহা :  "আমি কি করে তোমার কাছে আসব? কি করে তোমায় বলবো, ভালোবাসি?" কথাগুলো কার্ণিশের এক কোনায দাঁড়িয়ে স্বগতোক্তিতে বলেই চারদিকে তাকালো মৃত্যুঞ্জয়। তার একবার মনে হলো কেউ শুনে ফেলেনি তো! চার পাশে কেউ নেই দেখে আশ্বস্ত বোধ করলো। আবার ভাবলো কথাগুলো কি মুখ ফুটে বেরিয়ে এসেছিলো? সে নিজে কি শুনেছে? ঠিক মনে করতে পারলো না। যদি মুখ ফুটে বের হতো তাহলে তার কান শুনতে পেতোই। না, তার কান শুনেনি। যথারীতি শুনেছে তার মন। এমনটাতো হরহামেশাই হয়, হচ্ছে। তাতে কি এসে যায়?

এক নির্জনতার ভেতরে খুব ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে। সূর্যটা পশ্চিমাকাশে ডুবে যাচ্ছে এক সারি সুপারি গাছের ফাঁক গলে। সূর্যটাকে একটা ছোট্ট টকটকে লাল গোলার মত দেখায়। খুব মায়া লাগে তার। যার দিকে একসময় তাকানোই দুষ্কর তাকে কেমন যেন অসহায় মনে হয়। মনে হয় সে বুঝি কোন দূরের দ্বীপে নির্বাসনে যাচ্ছে। যাওয়ার আগে তার মৃয়মান হাসি ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো আকাশ জুড়ে। আকাশের নীলাভ মুখে ছোপ ছোপ লাল রং ফুটে উঠেছে। আর দুইয়ের মিলনে পশ্চিম আকাশ জুড়ে লাল-নীলের ছায়া-প্রচ্ছায়া। এক মোহাবিষ্টতায় মৃত্যুঞ্জয় গুলিয়ে ফেলে নিজের সত্ত্বাকে অস্তগামী সূর্যের সাথে। সেও কি নির্বাসনে আছে নাকি জনমানবশুন্য ক্ষুদ্র এই কার্ণিশে? কতক্ষণ তার এই অশ্বস্তি তাকে আড়ষ্ট করে রাখতো তা জানাই হলো না কারণ তার মা যিনি অত্যন্ত কড়া শাসনে তাকে আশৈশব একটা রুটিনবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত করে তুলেছে, মৃত্যুঞ্জয়কে ঘরে ফেরার তাগিদ দেয়। এই ধরণের খবরদারির কারণেই বন্ধুরা তাকে কটাক্ষ করে বলে 'কেইজ বার্ড' যা তার না মেনে উপায় থাকে না। এই সহজ সরল সত্য বার বার প্রমানিত। এই যেমন হয়তো সব বন্ধুরা বেড়াতে যাচ্ছে, খুব বেশি দূরে না। তবুও মৃত্যুঞ্জয়ের মা আবদার করবে, "বন্ধুদেরকে জিজ্ঞাসা করিস, ওদের মায়েরা সাথে যাবে কিনা। আর না গেলে না যাক, আমাকে সাথে নেবে কিনা।"

এটা আবার হয় নাকি, বন্ধুরা বন্ধুরা যাবে মজা করতে আর তার মধ্যে গেটিস হয়ে ঢুকে পড়বে এক লেডি ভিলেন! ওরা হেসেই উড়িয়ে দেয় এবং মৃত্যুঞ্জয়কে বাদ দিয়েই পরিকল্পনা করে। এভাবে কত আনন্দভ্রমন থেকে সে বাদ পড়েছে তা হিসেব করে বের করা অসম্ভব। মাঝে মাঝে সে ভাবে বয়ঃসন্ধিক্ষণের এই সময়টাতে সে কিভাবে মায়ের এই বাড়াবাড়ি শাসন-বারণের জোয়ালটাকে ঘাড় থেকে ছুড়ে ফেলবে। কিন্তু মায়ের শক্ত চোয়াল চোখে ভাসতেই ইচ্ছেটাকে তৎক্ষণাৎ গিলে ফেলে। আবার সে মায়ের বাধ্য সন্তান হয়ে যায়। এই যেমন এখন নিজের বাড়ির কার্ণিশটাকে সুদূর দিগন্তের ওপারে কোথাও বলে মনে হচ্ছে এবং সে মায়ের চোখের আলোক রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে নেমে আসে নিচতলায় কল পাড়ে। বাইরে কোথাও যায়নি তবুও এখন হাত মুখ ধুতে হবে। সান্ধ্যকালীন নাস্তা সেরে বসতে হবে পড়ার টেবিলে। এটাই প্রাত্যহিক। এতে চ্ছেদ পড়া মানেই যেন ষোল কলাতেই গরমিল করে ফেলা।

আজকাল মৃত্যুঞ্জয় লক্ষ্য করেছে তার মন বেয়ারা হয়ে উঠতে চায়। কি দারুণ একটা ঘোরের মধ্যে সে ছিলো। তার চোখ জুড়ে ছিলো স্বপ্নের মায়াজালে আবছা একটা অবয়ব। এমন একটা মুখের ছাপচিত্র তার চোখকে অপলক করে রেখেছিলো যে এই প্রার্থিব জগতের রূপ-রস-গন্ধ-সৌষ্টব সব দিয়ে গড়া অনন্য এক তরুণী। শুধুমাত্র একজন বেরসিক মানুষই পারে এই মোহাবিষ্টতায় আচ্ছন্ন এক কোমল প্রাণকে ইট কাঠ পাথরের উপর আছাড় দিয়ে সংবিতে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু কি আর করবে সে? মা তো! মাকে নিয়ে অভিযোগ করার জায়গা বিরল। যাকেই সে বলতে যাবে তার চোখেই সে বখে যাওয়ার তালিকায় চলে যাবে। মায়ের শাসনের চাপ তীব্রতর হবে বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে। এসব সে জানে এবং বুঝে। একমাত্র যদি কখনও দাদু বেড়াতে আসে, সেদিন মায়ের অবস্থা বেগতিক। কিচ্ছুটি বলতে দেবে না মাকে, তাই বলে সেদিনও তার অপরিণত পাখা তাকে কতটুকুই বা উড়িয়ে নেবে। সে যে বনের পাখির মত করে উড়তে শিখেনি। হয়তো সেদিন যৎকিঞ্চিত সময়ের জন্য খাঁচার দরজা খোলা পেয়েছে। সেই সুযোগে খাঁচার বাইরে এসেই উঠানের চৌহদ্দিকে মনে হয়েছে বিশাল প্রান্তর। সেটুকুই উড়ে উড়ে বেরানো যার কাছে চরম স্বাধীনতা প্রাপ্তি, সে কিভাবে সীমাহীন আকাশে উড়াল দেবে।

সেদিন মায়ের চোখ তাকে অনুসরণ করছে না জেনেও দীর্ঘ চর্চিত অভ্যাসবশে ফের ফিরে এসেছে মায়ের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে। কখন যে নিজেই নিজের রাশ টেনে ধরেছে টেরই পায়নি। এ যেন এক রামকুন্ডলী। কোন অবস্থাতেই পেরিয়ে যাওয়া বারণ। ওর এই আড়ষ্ঠতা টের পেয়ে দাদু হয়তো বলেছে, "এখনই না, আমরা আরেকটু পরে বাসায় ফিরবো।" এই কথার পিঠে মৃত্যুঞ্জয় বলেছে, " না দাদু, কাল আমার পরীক্ষা আছে। আমি পড়বো আর তুমি আমার পাশে বসে থাকবে"।মৃত্যুঞ্জয়ই কি শুধু মাকে ভয় পায়, দাদুও পায় তার মেয়েকে। দাদুর ধুমপানের অভ্যাসে কেউ সক্রিয় বাঁধা দিতে না পারলেও এ বাড়িতে তা চলবে না একদম। তাই বাড়ি ফেরার আগে আরেকটা সিগারেট খেয়ে যাওয়া যাক, এই ভেবে দাদু বলে, "চল দাদু, বাসার জন্য কিছু কিনে নেই"। মত্যুঞ্জয় দাদুর আসল অভিসন্ধি বুঝতে পারে না কিন্তু এসব বাইরের খাবার দাবার তার মায়ের পছন্দ নয়। সে হয়তো বাজার থেকে কিনে নেওয়া খাবার বাসার কাউকে খেতেই দেবে না এবং নিজের বাবাকে এটা সেটা বলতে ছাড়বে না। তাই দাদুকে নিবৃত করতে বলে, "থাক না দাদু, পরে মা আমাকেই বকবে। বলবে, আমি তোমাকে এসব হাবিজাবি কিনতে বলেছি"। দাদুতো নাছোড়বান্দা, কপট সাহস দেখিয়ে বলে, "বকবে মানে! তার সাহস আছে নাকি, তোমাকে কিছু বলার?" এসব কথা কানে নেয় না এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাদুকে নিয়ে বাসায় ফেরে বেঁধে দেওয়া সময় অতিক্রম না করে। আজ ব্যাপারটা একদম অন্যরকম। পড়ার টেবিলে বসেছে সে যথারীতি। বই খুলেছে। কিন্তু বইয়ের পাতায় পড়া কোথায়? সেখানে আজ মৃত্যুঞ্জয় কোন অক্ষর বা শব্দ দেখতে পাচ্ছে না।বইটাকে একটা ফটো এলবাম আর বইয়ের পাতাটাকে তার আজ একটা ছবির ফ্রেম বলে মনে হচ্ছে। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টে দেখেছে। কোথাও কোন পড়ার বিষয় নেই। শুধুই অনন্যাকে দেখছে। সব ছবিতেই অনন্যা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। সব হাসি কি তা এক রকম নাকি করম ফের আছে? ওর হাসি কি বাঙ্গময়? ও কি কিছু বলতে চায় এইসব বিবিধ হাসির ভাষায়? মৃত্যুঞ্জয় যতই দ্বিধায় পড়ে যায়, ততই নতুন নতুন অর্থ এসে ভীড় জমাতে থাকে আর আজকের গোল্লায় যায়। প্রতিটি ভেসে উঠা হাসির বিনিময়ে সেও এ

প্রতিটি ভেসে উঠা হাসির বিনিময়ে সেও একটা অভিব্যক্তি করে। কিন্তু ঠিক কি যে সে করছে তা দেখার বা বুঝার উপায় নেই কারণ সে তো আর নিজেকে দেখতে পাচ্ছে না। এমনটা ঠিক কতক্ষণ ধরে চলছে তা মনে করতে পারছে না। তবে তার সহসাই বোধোদয় হয়, মা যদি একবার উঁকি দেয় এবং এই অবস্থায় দেখে তাহলে একচোট হবে। সম্বিত ফিরে পেয়ে পড়ায় মনোসংযোগের চেষ্টা করতে মনস্থ করতেই পাশের ঘর থেকে মায়ের আওয়াজ শুনতে পায়, "জয়, তোর পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি না।" মৃত্যুঞ্জয় হতচকিত হয়ে অস্ফুটে জবাব দেয়, " পড়ছি, মা"। মা বলে, "না, আমি না বলেছি জোড়ে জোড়ে পড়তে হয়। তাতে তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্ত হয়। আমি এ ঘর থেকে তোমার পড়ার আতয়াজ শুনতে চাই"। মৃত্যুঞ্জয় শুধু বলে, "পড়ছি"। "ভুলে যেও না এর আগের পরীক্ষাটায় কিন্তু তুমি খারাপ করেছ। কালকের পরীক্ষায় ভালো করা চাই"। মৃত্যুঞ্জয় বুঝতে পারে এটা মায়ের শেষ সতর্ক সংকেত।

এরপর আর দূর থেকে নয় এ ঘরে চলে আসবে। তখন যদি তার মায়ের চোখে পড়ে যে পড়ায় তার মনোযোগ নেই তাহলে তার খবর আছে। সে নিজেকে কি যেন বুঝাতে চেষ্টা করে আবার পাতা উল্টানো পৃষ্ঠার দিকে চোখ দেয়। আর তখননই তার মনে ভেসে উঠে সকালের দৃশ্য। আজ সকালেই কোচিং- এ অনন্যাকে দেখলো কেমনভাবে যেন তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। কেমনভাবে? আসলে ওরা কয়েকজন অনন্যাদের বাসায় গিয়ে পড়ে। তাই ও একটু বেশিই মাতাব্বরি করে। এখানে ও ছাড়া বাকি সবাই মেয়ে। ওর একদম আসতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু তার উপায় নেই কোন। তার মা, এমন রণরঙ্গিনী মা বোধ হয় দুনিয়াতে নেই। খালি খবরদারী। বসে থাকলে দাঁড়াতে বলবে আর দাঁড়িয়ে থাকলে বসতে। পান থেকে চুন খসার উপায় নেই। একান্ত বাধ্যগত থেকেও মাঝেমধ্যে উত্তম মধ্যম খেতে হয়, অবাধ্য হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। মা-ই একদিন ফরমান জারি করেছে,"জয়, প্রদীপদের বাসায় গার্লস স্কুলের একজন অংকের টিচার আসেন। উনি অংক-ইংরেজি দুটোই পড়ান। কাল সকাল থেকে তুম সেখানে ষাবে"। মৃত্যুঞ্জয়মৃদু আপত্তি করেছিল, "মা, আমি আমাদের স্কুলের টিচারের কাছে পড়ি। উনি স্কুল শুরুর আগে স্কুলেই পড়ান" "তুমি আজকাল অহেতুক বথা বল। আমি তোমার বাবার সাথেও কথা বলেছি"। এরপর কি আর কথা চলে? সেই দিন থেকে একদল মেয়ের বহুবিধ অত্যাচার তাকে সইতে হচ্ছে নির্বিকারভাবে। মাকে যে তা জানাবে এমন কোন সুযোগই নেই। কিছু বললেই বলবে, "তুমি জানো, ওরা স্কুলের ফার্স্ট, সেকেন্ড গার্ল!" মৃত্যুঞ্জয় জানে ওরা কেমন ফার্স্ট; সেকেন্ড। একটাও পড়াশুনায় সিরিয়াস না। একেকটা ফাজিলের বাসা। পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্ন পাবে আর পরীক্ষা দিয়ে আসবে, মানে প্রশ্নের উত্তরগুলো গড়গড় করে বমি করে দিয়ে আসবে। আর ফার্স্ট হবে। ফার্স্ট না ছাই! অনন্যাটা বেশি চালাক। নিছের বাসায় পড়ার হ্যবস্থা করেছে। তাই স্যারও ওকেই সব বলে। এমনকি প্রশ্নগোলোর উত্তর তৈরি করে দেয়। আর অনন্যা তর বান্ধবীদেরকে শুধু শর্ট সাজেশনটা বলে দেয়, তাতেই ওরা গদগদ। অনন্যার সব কথাতেই ওদেরকে সায় দিতে হবে যেন।

একেকটা গাধা! একদিন তো ওর মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো। কোন প্রসঙ্গ ছাড়াই অনন্যা বলে বসলো, "এই, তোকে নাকি সবাই কেইজ বার্ড বলে ডাকে?" মৃত্যুঞ্জয় কোন জবাব খোঁজে না পেয়ে বলে, ওরা তো আমার বন্ধু!" ওহ আচ্ছা, আমরা তাহলে তোর শত্রু!" মৃত্যুঞ্জয় বুঝতে পারে একটা ভুল করে ফেলেছে। সেটা শোধরাতে সে বলে, "আমি কি তা বলেছি নাকি?" তার এই কথা ওদের খিকখিক হাসিতে মিলিয়ে যায়। " জানিস, ওর মা না ওকে জয় বলে ডাকে। জয় না ছাই! ওর মুখে তোরা হাসি দেখেছিস কোনদিন?, বলেই সবাই সমস্বরে হাসতে থাকে যেন কাঁচের চুড়ি ভাঙ্গছে ঝনঝনিয়ে। বিরক্তিকর, কিন্তু কিছুই বলার নেই, আর বললেও কেউ শুনবে না যেন অনন্যা ওদের কান শীষা দিয়ে ঢালাই করে দিয়েছে। "আমি তো পড়তে এসেছি। তোমাদের সাথে ঝগড়া করতে না"। "বাব্বাহ! ছেলে দেখি রাগ করেছে। আচ্ছা আমরা যদি তোর শত্রুই হই, আজ থেকে তোকে মৃত্যু ডাকবো। কি বলিস তোরা? তোরাও ডাকবি, হ্যা!" ওদের জবাব তো আগের থেকেই জানা। বাধভাঙ্গা হাসি। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলেও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই স্যার এসে রুমে ঢুকে জিজ্ঞাসা করে, "কি ব্যাপার, হচ্ছেটা কি? এতো হাসি কিসের?" নির্লজ্জটা কোথায় ভয় পাবে, তা ন, বলে কিনা, "জানেন স্যার, মৃত্যুঞ্জয়টা পড়া ছাড়া কিছুই বুঝে না।" শিক্ষক কপট রাগ দেখিয়ে বলে, "আর কি বুঝবে?" " না স্যার, একদিন দেখবেন ও পড়তে পড়তে মরেই যাবে। তাই আমরা ঠিক করেছি, ওকে আমরা মৃত্যু বলে ডাকবো। ঠিক আছে না, স্যার?" আসলে এমন কথার জবাবে কি বলা যায় ভেবে না পেয়েই বোধ হয় বলে, "রাখো এসব। পড়ায় আসো। ওকে একা পেয়ে তোমরা নির্যাতন করো।" সে যাত্রায় মৃত্যুঞ্জয় বেঁচে গেল ঠিকই কিন্তু তার মাথায় ঘুরঘুর করতে থাকলো স্যারের একটা কথা, "ওকে একা পেয়ে তোমরা নির্যাতন করো।" মৃত্যুঞ্জয় ভাবে, স্যার বললোটা কি? সত্যি কি সে নির্যাতিত? সে কাউকে কথাটা শেয়ার করতে পারেনি। আজ এই মূহুর্তে তার চোখে ছবির মতো ভাসছে সব কিছু।

বইয়ের পৃষ্ঠায় ভেসে উঠা দৃশ্যপটগুলোতে মৃত্যুঞ্জয়ের হাত শুধু নড়াচড়া করে অনন্যার মুখের উপর। আলতো করে হাত বুলায় আর ভাবে, কেন ও এমন করে আমার সাথে। এমনিতে তো ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। ভীষণ বন্ধুবৎসল বলেই বন্ধুরাও ওর প্রতি অন্ধ। তাহলে ও আমার সাথে এমনটা করে কেন? আমাকে অপমান অপদস্ত করে কি মজা পায়, ও? ও কি আমার প্রতি সদয় হয়ে বন্ধুত্বের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে না?

একগাদা প্রশ্নের ভারে নূয়ে পড়ার আগেই সংবিত ফিরে পায় মায়ের ডাকে, "জয়, তোমার পড়ার একটা শব্দও আমার কানে আসেনি।" মৃত্যুঞ্জয় ভাবে, আসবে কোথা থেকে? আমি কি আজ আর পড়ছি? মিথ্যে করে বলে, "আমি তো লিখছি, মা।" "ওহ আচ্ছা, লেখা শেষ হলে, আমাকে দেখিয়ে যাবে।" দারুণ সংকটপূর্ণ অবস্থায় নিজের অজান্তেই পড়ে যায় সে। এতক্ষণ ধরে সে কি লিখেছে, দেখতে চাইলে কিছুই দেখাতে পারবে না। অতঃগর পেনস্ট্যান্ড থেকে কলম নিতে গিয়ে একটা পেন্সিল আর একটা খাতা হাতে তুলে নেয়। খাতাটা খুলতেই আবার একই বিভ্রমে পড়ে যায় সে। এখানেও তো অনন্যার মুখ। চোখ ষরিয়ে নেয়। আবার তাকায়। অবাক বিষ্ময়ে সে দেখে অনন্যা হেসে হেসে কি যেন বলছে তাকে। লিপস রিডিং এর উদ্দেশ্যে সে মনের কানটাকে সজাগ করে শুনতে পায় ও বলছে, "আজ আমি তোর ঘাড়ে চেপে বসেছি। তোকে আজ আর কিছুতেই পড়তে দেবো না।"

মৃত্যুঞ্জয় আনন্যার মুখের উপর পেন্সিলটা দিয়ে ছাপ দেওয়ার মত করে দাগ টানতে থাকে আর তাকে নিস্কৃতি দিতে অনুনয় বিনয় করতে থাকে এই বলে, "আজ তুমি যাও। যেকোন সময় মা এসে পড়বে। আমাকে বকবে মা।" অনন্যা মিটমিট করে হাসতে থাকে আর মৃত্যুঞ্জয় কটমট করে তাকিয়ে সশব্দে বলে উঠে, "তুমি এখন যাবে?" এই কয়টা শব্দ শুনতে শুনতে মা ঘরে প্রবেশ করে। সে ভেবে পায় না তার জয় তাকে এসব কি বলছে? সে ধীর পায়ে তার জয়ের কাছে এগিয়ে যায়, দেখে ওর খাতায় একটা ময়ের পেন্সিল স্কেচ। কারো সাথে মিল আছে কিনা বুঝার চেষ্টা করে। আর তার জয় নিথর নিশ্চুপ। কারো মুখে কোন কথা বের হয় না। আমি জানি না মায়র'জয়', বন্ধুদের 'কেইজ বার্ড' বা অনন্যাদের 'মৃত্যু' - র নতুন কি নাম দেওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়