শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জনগণকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মেধার সঙ্গে লাগে সাহসিকতা, আত্মপ্রত্যয়, দায়বদ্ধতা, সুচরিত্র এবং সক্ষমতা

বিভুরঞ্জন সরকার : বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। আমি বুঝি না সিঙ্গাপুরের প্রয়াত নেতা লি কুয়ানকে নিয়ে আমাদের দেশে তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই কেন? তার আত্মজীবনী কিংবা তার জীবনদর্শন নিয়ে বাংলা ভাষায় বেশি বেশি বই প্রকাশ করা জরুরি বলেও আমি মনে করি। বারাক ওবামাকে নিয়ে কিংবা তার লেখা বই নিয়ে আমাদের দেশে কারো কারো মধ্যে যেমন উন্মাদনা, উত্তেজনা দেখা যায় তিল পরিমাণও দেখা যায় না লি কুয়ান কিংবা তার আত্মজীবনী নিয়ে। অথচ আমাদের জন্য আমেরিকা বা ওবামার চেয়ে সিঙ্গাপুর বা লি কুয়ান অধিক প্রাসঙ্গিক।

আমেরিকা আমেরিকা হয়েছে বহু বছরের সাধনায়। আর সিঙ্গাপুর তার বর্তমান অবস্থায় এসেছে অল্প সময়ের চেষ্টায়। আমরা যদি আমাদের দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ে উন্নতির পথে যাত্রা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে চাই তাহলে অন্য দেশের নয়, সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতাই বেশি কাজে দেবে। আর আমরা যদি জোড়াতালি দিয়ে, শুধু ফেসপাউডার মেখে চমক দিতে চাই তাহলে অন্য কথা।

আমি সবাইকে অনুরোধ করবো লি কুয়ান ইউ’র আত্মকথা ‘ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট, দি সিঙ্গাপুর স্টোরি : ১৯৬৫-২০০০’ বইটি পড়ে দেখতে। ওই বই থেকে তথ্য নিয়েই কিছু কথা এখন বলছি।

প্রশাসন বা সরকার বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক বা দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা সম্ভব না হলে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। লি কুয়ান এটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি লিখেছেন : ‘যখনই আমি সঠিক ব্যক্তিকে কোনো দায়িত্বে ন্যস্ত করতাম, তখনই আমার ঘাড় থেকে একটি বোঝা নেমে যেতো। যাকে দায়িত্ব দিতাম তাকে আমি শুধু বিষয়বস্তু এবং কতোদিনের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা প্রদান করতাম। কাজটি সম্পাদনের খুঁটিনাটি তাকেই উদ্ভাবন করে তা শেষ করতে হতো’।

কোন ব্যক্তি কী ধরনের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন সে সম্পর্কে লির ছিলো সুস্পষ্ট ধারণা। তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তার সহকর্মী নিয়োগ দিতেন। তিনি নানা ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতেন। লি কুয়ান বিশ্বাস করতেন, নেতৃত্ব প্রদানের জন্য মেধা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার বাইরেও অতিরিক্ত আরো কিছু প্রয়োজন। লি লিখছেন : ‘অচিরেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, নেতৃত্বের জন্য মেধার বাইরেও অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। একজন মেধাবী ব্যক্তি তার প্রজ্ঞা দিয়ে যতো সহজে

ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণ করতে পারেন, যতো সহজে একটি পিএইচডি থিসিস লিখতে পারেন, ততো সহজভাবে গণনেতৃত্বে সফলতা অর্জন করতে পারেন না। জনগণকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আরো যা প্রয়োজন তার মধ্যে আছে সাহসিকতা, আত্মপ্রত্যয়, দায়বদ্ধতা, সুচরিত্র এবং সক্ষমতা’।

লি বলেছেন, যেসব গুণের কারণে জনগণ নেতার পদাঙ্ক অনুসরণে অনুপ্রাণিত হয় সেসব গুণের অধিকারী হওয়া একজন নেতার জন্য খুবই জরুরি। রাজনৈতিক কর্মকা-ে তৎপর, সুবিবেচক এবং মানুষের সঙ্গে মেলামেশায় দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা ছিলো তার একটি অন্যতম কাজ। মনস্তাত্ত্বিক সক্ষমতাও নেতৃত্বের একটি অতি প্রয়োজনীয় গুণ বলে লি কুয়ান মনে করতেন।

১৯৭০ সালে মার্কিন মহাকাশযান অ্যাপোলো-১৩ মহাকাশে যায়। এই ঘটনাটি তখন টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছিলো এবং লি কুয়ান তা দেখছিলেন। তিনি দেখলেন, পৃথিবী থেকে তিন লাখ মাইল দূরে থাকা মহাকাশযানটি ঠিকভাবে কাজ করছিলো না। নভোচারীদের একজন সামান্য ভুল করেছিলেন এবং তাতে সবাই বিপদের মুখে পড়েন। কিন্তু মহাকাশযানে থাকা কেউ এতোটুকু বিচলিত না হয়ে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণকক্ষের নির্দেশনা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় পালন করে যাচ্ছিলেন। শেষে তারা বিপর্যয়ের কবল থেকে রক্ষা পান। মহাকাশে পাঠানোর আগে আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা নভোচারীদের মনস্তাত্ত্বিক সক্ষমতারও পরীক্ষা গ্রহণ করতো।

লি কুয়ান লিখছেন : ‘এ ঘটনা পর্যবেক্ষণের পর আমি আমাদের সকল পর্যায়ের প্রার্থীদের মানসিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য মনোবিজ্ঞানী এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলাম’। মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বুদ্ধিমত্তা, মূল্যবোধ ও জীবনাচার ইত্যাদি সম্পর্কে প্রতিবেদন লেখা হতো। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিশ্লেষণ ক্ষমতা, তার দূরদৃষ্টি ও বাস্তব সম্পর্কিত জ্ঞান ইত্যাদি গুণাবলী বিষয়েও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় পর্যবেক্ষণ করা হতো। একটি দেশকে আমূল বদলে ফেলার কাজটি যে শুধু গলাবাজি করে সম্ভব হয়নি এসব ঘটনা থেকেই তা বোঝা যায়।

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়