শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৪২ রাত
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অপরাধী কে?

রাশেদা রওনক খান : আমেরিকার ওয়াশিংটনে আমরা যে বাসাটায় থাকতাম, তার নাম ছিল দ্যা আইরিন। ফ্রেন্ডশিপহ্যাইটস, ওয়াশিংটনের সাদাদের এলাকা বলে পরিচিত ছিলো, আফ্রিকান আমেরিকানদের কোনো বাসায় কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না, আমাদের বনানী বারিধারার মতোই। মনে আছে, পিএইচডির প্রথম বর্ষে নেইবারহুড বর্ণবাদ নিয়ে আইসাইনমেন্ট জমা দিতে গিয়ে প্রফেসরকে বললাম, আমি আমার এলাকায় সাদা আমেরিকান ছাড়া কাউকে খুঁজে পাইনি যে সাক্ষাৎকার নেবো।

প্রফেসর শুনে বললেন, হ্যাঁ, আমেরিকার কিছু এলাকা আছে কালো/সাদাতে বিভক্ত। যাই হোক, আমার মা গেলেন আমাকে দেখতে দুমাসের জন্য। আমার গর্ভে তখন তিন মাসের জারিয়া। প্রতি মাসে আইরিনে তারা একটা ফায়ার অ্যালার্ম বাজাতো, আর অ্যাপার্টমেন্টের সবাই যে যেভাবে থাকতো দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হতো। এমন অনেক সময় হয়েছে, কেউ শাওয়ার নিচ্ছিলেন, তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নেমে গেছেন। কারণ এটা কি এমনি ট্রায়াল এর জন্য নাকি সত্যই সত্যই আগুন লেগেছে তা একবারে লবিতে না নামা পর্যন্ত বুঝা যেতো না। কারণ যিনি বুঝেন যে এটা জাস্ট ট্রায়াল, এর জন্য তার মুখ যেমন সিরিয়াস, যিনি ভাবছেন আগুন লেগেছে, তার মুখও একইরকম সিরিয়াস! ৪ দিকেই সিঁড়ি ছিলো। যে যেদিক দিয়ে চায় নামতে পারতো। আমার মা যাবার পর, তিনি বয়স্ক মানুষ নামতে ইচ্ছে হতো না। কিন্তু তারপরও অনেকটা বাধ্য হয়েই নামতে হতো। এবং পুরো অ্যাপার্টমেন্টের সকলে নামার পর আবার উঠে যেতে বলতো। একবার আমার মা ঠিক করলেন তিনি নামবেন না, আমি কষ্ট করে শরীর খারাপ সত্বেও নামতাম কারণ বিকট শব্দে ফ্ল্যাটে বসে থাকা যেতো না। কিন্তু ১০ মিনিট পরে দেখি তিনিও নেমে এলেন। বললাম, কি ব্যাপার? তুমি নামলে যে? বলেন,‘দেখলাম ৯০ বছরের এক বয়স্কা কষ্ট করে নামছেন, আমিতো ৭০ বছর! তাই ভাবলাম, নামি!’

এবার ইংল্যান্ডে এসে বারমিংহামে যে বাংলাদেশ হাউজে থাকি, তা ডুপ্লেক্স সিঙ্গেল হাউজ! দেখে মনে মনে শান্তি পেলাম, যাক প্রতি মাসে ফায়ার অ্যালার্ম বাজবে না, আর তাড়াহুড়া করে দৌড়ে বের হতে হবে না। কিন্তু ২৭ মার্চ জারিয়ার স্কুলে জারিয়াকে আনতে গিয়ে দেখি বাচ্চারা একে অন্যের হাত ধরে ক্লাস টিচারের পেছন পেছন দৌড়ে গেটের পাশে দৌড়ে এসে লাইন করে দাঁড়াচ্ছে। বুঝতে পারলাম, প্রতি মাসে বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় স্কুলে আগুন লাগলে কীভাবে বের হতে হবে একে অপরের হাত ধরে! আমাদের দেশে এসব শিক্ষা দেবার সময় কই? মুখস্ত বিদ্যা যে দেশের পরীক্ষা পাসের একমাত্র উপায়, সে দেশে আইন ভেঙ্গে, অনিয়ম দুর্নীতি করে বিল্ডিংকোড না মেনে ভবন নির্মাণই তো হবে, যেখানে অগ্নি নির্বাপণের কোনো সিস্টেম থাকবে না, ভবন মালিক একজন প্রকৌশলী হওয়া সত্ত্বেও!

আগুন, তা সে আমেরিকা-ইংল্যান্ড কিংবা অভিজাত এলাকা বনানীর ভবনেই হোউক, বা বস্তিতেই লাগুক- আগুন আগুনই! তফাত এটাই যে, উন্নত দেশে নিয়ম কে মানে, আইনকে শ্রদ্ধা করে, দুর্নীতির কঠোর কঠিন সাজা রয়েছে তাদের জন্য, মানুষের জীবনের মূল্য আছে,আর আমাদের এসব কোনোটাই যেন নেই! আগুনের এই দুর্ঘটনা নিয়ে কয়েকটি ভাবনা করছি:
বনানীর আগুনে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে আর সড়ক দুর্ঘটনায় ওইদিনই ৩০জনের মৃত্যৃ হয়েছে যারা বলছেন, প্রচার করছেন, তাদের সাথে আমি একমত হতে পারছি না। বরং এসবকে হত্যাকা- বলার সাহস করুন প্লিজ। নিউজিল্যান্ডের দুষ্কৃতকারীকে এবার কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া কেবল গানম্যান বলে ছেড়ে দেয়নি, চাপের মুখে তারা সেই দুষ্কৃতকারীকে এবার টেররিস্ট বা জঙ্গি সন্ত্রাসী বলেছেন! শব্দচয়নটা খুব জরুরি একটি বিষয়!

১৮তলার ভবনের অনুমোদন নিয়ে ২২তলা করা, এর পেছনে দায়ী কে বলতে পারি? ভবন মালিক কীভাবে তা করলেন? এই ভবন মালিক কিংবা যারা তাকে সমর্থন দিয়েছে এই বাড়তি চারতলা করতে তারা কারা? রাজউকের অনুমোদন না পেলেও কীভাবে করলেন? এই বাড়তি চারতলায় গ্যাস লাইন কীভাবে পেলেন? যারা তাকে এই অবৈধ স্থাপনা তৈরিতে সাহায্য করেছেন তারা কি অন্য গ্রহ হতে এসেছেন? না, তারা আমাদের বাবা-মামা-চাচা-আত্মীয়স্বজন যারা এই বাড়তি চারতলা অবৈধভাবে করতে সাহায্য করেছিলেন বিরাট অংকের উৎকোচ গ্রহণের মধ্যদিয়ে। অতএব অনিয়ম-দুর্নীতি আমাদেরই কাজ! আমার আপনার চারপাশের মানুষ কিংবা আমি-আপনিই তো করছি! এই থেকে উত্তরণের উপায় একটাই, দেশের আইনকে শক্তিশালী করা, দুর্নীতি বন্ধ করা। রাষ্ট্রের আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে এই আমরাই অনিয়ম দুর্নীতি করতে থাকবো!

ঢাকার একটি ভবনে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস যথাযথভাবে সকল উপকরণ পায় না, পর্যাপ্ত পানি পায় না! কারণ ওয়াটার হাইড্রেন্ট নেই, পর্যাপ্ত ওয়াটার সোর্স নেই, অথচ আমরা বলি আমাদের ঢাকা শহর নাকি নদী দ্বারা ঘেরা। ওয়াটার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা করার কাজটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর খুব শিগগিরই ভুলে যাবেন যদিও এখন আলোচনায় আসছে বার বার। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টে নিয়মিতভাবে ফায়ার অ্যালার্ম বাজিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া কীভাবে আগুন লাগলে বিকল্পপথ/সিঁড়ি দিয়ে রাস্তায় নেমে আস্তে হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমরাই কি এসব আইন মানবো? এই আমরাই কি পুরাণ ঢাকা হতে কেমিক্যাল কারখানা সরাতে দিচ্ছি? এই আমরাই কি ২২তালা বানাচ্ছি না নিয়ম ভঙ্গ করে? এই আমরাই কি সরকারের লোক না? এই আমরাই কি রাজউক কিংবা সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি না? এই আমরাই কি ঘুষের বিনিময়ে দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছি না? এই আমরাই কি অপরাধীকে টাকার বিনিময়ে আরও অপরাধ করার পথ দেখাচ্ছি না? এই আমরাই কি পুলিশের চাকরি করছিনা? এই আমরাই যেখানে স্বার্থ, সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করছি না? এই আমরাই যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করছি না? অবৈধ স্থাপনা বানাচ্ছি না? মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি না? এই আমরাই ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করে চলছি না? এই আমরাই বিআরটিএতে চাকরি করছি না? এই আমরাই শহরের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে বাসে উঠতে চাইছি না? এই আমরাই বাস থামিয়ে ড্রাইভারের কাছ থেকে লাইসেন্স দেখার নামে টাকা পকেটে ঢুকিয়ে নিচ্ছি না? এই আমরাই আবার ফেসবুকে আছি, স্ট্যাটাস দিচ্ছি দিব্যি! এই আমরাই ফেসবুকে বলি, বিমানবন্দরে কেন ঠিকমতো সার্চ হয় না, এই আমরাই প্রধান বিচারপতিকে কেন সার্চ করা হবে, তা নিয়ে বিমান বন্দর তোলপাড় করে ফেলছি না? এই আমরা কি ভিন গ্রহের কেউ?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়