শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ০৬:১৪ সকাল
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ০৬:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বড় ভাই বললেন ‘ছাদে যাও’, তমালের উত্তর ‘নো স্কোপ’

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন যখন বাড়তে থাকে, সে সময় পরিবারের সবার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন আবদুল্লাহ আল ফারুক তমাল (৩২)। এ সময় বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন তুহিন ফোন করে তমালকে দ্রুত ভবনের ছাদে উঠে যেতে বলেন। পরে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তমাল জবাব দেন, ‘নো স্কোপ।’ সূত্র: এনটিভি

শেষ পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে আর বেঁচে ফিরতে পারেননি ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল ফারুক তমাল।

তমালের দুটি সন্তান রয়েছে। প্রতিদিনের মতো গতকালও পাঁচ বছরের মেয়ে সোহাইলী তেহরীন মানহাকে স্কুলে দিয়ে অফিসে যান তমাল। বাচ্চা স্কুল থেকে ফিরেছে কি-না জানতে প্রতিদিন কয়েকবার ফোন দিতেন স্ত্রী সানজীদা অভিকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে স্ত্রীকে ফোন দিয়ে তমাল বলেন, ‘অভি (স্ত্রীর ডাকনাম) আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। দোয়া করো।’ এ সময় দুই সন্তান সোহাইলী তেহরীন মানহা ও দেড় বছরের সন্তান আবদুল্লাহ আল আইমানের দিকে বারবার খেয়াল রাখার জন্য বলেন তমাল।

পরে টেলিভিশনে তমালের মৃত্যুর খবর জানতে পারে তাঁর পরিবার। এরপরই তাঁরা ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভাইয়ের দগ্ধ মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন তুহিন।

তমালের ছোট ভাই তুষার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে একটি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন তমাল। আগুন লাগার পর সবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তমাল ভাইয়া বলছিলেন, ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর, সেফজোনে আছেন বলেও জানান তিনি। সেই সেফজোনটা যে আজীবনের জন্য হবে, তা বুঝতে পারিনি।’

ছোট ভাই তুষার ও পরিবারের সদস্যরা গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা তমালের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

তুষার বলেন, ‘অফিশিয়ালি কিছু আনুষঙ্গিকতা শেষ করে দিবাগত রাত ১২টায় তমালের লাশ হস্তান্তর করা হয়। আজ শুক্রবার বাদ জুমায় তমালের জানাজা শেষে ডেমরা সারুলিয়ায় দাফন করা হবে।’

গতকাল সন্ধ্যায় তমালের বাবা ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আল্লাহ তুমি একি করলা। আমি এত বড় কষ্ট হজম করব কীভাবে? আমার তমালকে এত তাড়াতাড়ি তুমি নিয়ে গেলা কেন? আমার দুই নাতির কী হবে? আমার তমাল বাঁচার জন্য আড়াই ঘণ্টা ভবনে লড়াই করেছে। কিন্তু বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। তাই জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে। সরকার কি আমার তমালকে বের করতে পারত না? আমার সবই শেষ। পিতা হয়ে আমি কীভাবে ছেলের লাশ বহন করব?’

এর মধ্যে তমালের মৃত্যুর সংবাদে হাসপাতালে ছুটে যান তাঁর অফিসের সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও আত্মীয়স্বজন।

তমালের সহকর্মী রবিউল জানান, আগুন লাগার বিষয়ে প্রথমে অফিসের সবাইকে জানিয়েছিলেন তমাল। এরপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু আগুনের ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় তমাল নিচে নামতে পারেননি বলে ধারণা সহকর্মী রবিউলের।

তমালের স্ত্রী সানজিদা অভির দুই বোন নুসরাত জাহান মীম ও তাসমীমা দুজনই ঢামেকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাসমীমা বলেন, ‘তমাল ভাইয়ের মতো এত নম্র-ভদ্র মানুষ হয় না। উনার দুই বাচ্চা বুঝতেই পারছে না, বাবা আর কখনো তাদের আদর করবে না। তমাল ভাই তাঁর মেয়ে মানহাকে স্কুল থেকে না নিয়ে গেলে বাসায় না যাওয়ার বায়না ধরত সে। এখন তাকে কে স্কুলে নেবে। আমার বোনটা এত কষ্ট কীভাবে সামলাবে?’

তমালের স্ত্রীর আরেক বোন নুসরাত জাহান মীম বলেন, ‘বোনের বিয়ে হয়েছে ২০১২ সালে। বিয়ের মাত্র সাত বছরের মাথায় এত তাড়াতাড়ি তমাল ভাই চলে যাবে, এটা কীভাবে মেনে নেব।’

গতকাল দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টা পর আরো অনেকের সঙ্গে তমালকেও উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিকেলে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তমালকে মৃত ঘোষণা করেন। তমালের মরদেহ শনাক্ত করেন তাঁর বন্ধু ও পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম রাজু।

রাজু বলেন, ‘ও আমার খুব ভালো বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। পড়ালেখা শেষে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর সর্বশেষ ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডে সেলস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তমাল। এফ আর টাওয়ারেই ছিল তাঁর অফিস।’

তমালের শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল বলে জানান ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক ডা. সামন্তলাল সেন।

তমালের ছোট ভাই তুষার আরো জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের শ্রীকালীয়া গ্রামে। ডেমরার সারুলিয়ায় থাকেন তাঁরা।

তমালের বন্ধু মুস্তফা কামাল জানান, যখন আগুন লাগে, তখন তমাল ছিলেন ১১ তলায়। সর্বশেষ তাঁর সঙ্গে বিকেল সাড়ে ৩টায় ফোনে কথা হয়। তখন তিনি ১২ তলায় ছিলেন। তার পর থেকে ফোনে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে তাঁরা জানতে পারেন, তমাল মারা গেছেন।

টেলিভিশনে নিহতের তালিকায় আবদুল্লাহ আল ফারুক তমালের নাম দেখে ঢামেক হাসপাতালে ছুটে যান বন্ধু পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম রাজু। তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৩তম ব্যাচের ছাত্র আবদুল্লাহ আল ফারুক ক্যাম্পাসে তমাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পড়াশোনার বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল। তমালের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া প্রোফাইল পিকচারের দিকে তাকালেই চোখ জলে ভিজে যায়। মেয়ে মানহাকে কোলে বসিয়ে তোলা সেলফিটি আজ কেবলই স্মৃতি।’

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়