শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ০২:৪৯ রাত
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ০২:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিঙ্গাপুরে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার একেবারেই নেই

বিভুরঞ্জন সরকার : অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে, একসময় সিঙ্গাপুরে মাত্র ১২০টি জেলে পরিবার বাস করতো। অথচ এখন সিঙ্গাপুর পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে। সিঙ্গাপুর যখন স্বাধীনতা পায় তখন সেখানে মাথাপিছু আয় ছিলো ৫১১ মার্কিন ডলার। এখন মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ৬২ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১৪.৫ শতাংশ। জীবনযাত্রারর মান বিবেচনায় সিঙ্গাপুরের অবস্থান এখন এশিয়ায় প্রথম এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ১১তম। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে সিঙ্গাপুরের অবস্থান এখন যথাক্রমে ১৫ এবং ১৪তম স্থানে। পরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে জীবনযাপনে এসেছে অভাবিত পরিবর্তন। মানুষের মনোজগৎও হয়েছে পরিবর্তিত। মানুষের গড় আয়ু ৮০.৬ বছর। শিক্ষিতের হার ৯৬ শতাংশ। ৯০.১ শতাংশ নাগরিক আবাসন সুবিধা পেয়েছেন। প্রতি এক হাজারজনে ১০৭ জন ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক। ভাবা যায়, আদিতে মাছ ধরা ছিলো সেখানকার অধিবাসীদের একমাত্র পেশা!

সিঙ্গাপুরের এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের রূপকার ও কা-ারি হলেন লি কুয়ান ইউ। ১৯২৩ সালে সিঙ্গাপুরে জন্ম নেয়া লি কুয়ান যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ থেকে আইন শাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। লি কুয়ান অল্প বয়সেই রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত পিপলস অ্যাকশন পার্টির ( পিএপি) লি ছিলেন সহপ্রতিষ্ঠাতা। চল্লিশ বছর তিনি এই দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় আছে পিএপি। লি কুয়ান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একত্রিশ বছর। ১৯৯০ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। ততোদিনে তিনি সিঙ্গাপুরকে বিস্ময়করভাবে বদলে দিয়েছেন। অপরাধ ও দারিদ্র্যপীড়িত একটি বন্দর শহরকে এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা খুব সহজ কাজ ছিলো না।

১৯৫৯ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করার পর ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলো সিঙ্গাপুর। কিন্তু আদর্শগত কারণে সেই মিলন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৬৫ সালে সম্পূর্ণ স্বাধীন হয় দেশটি। মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরকে আলাদা করে দেয়ার সময় ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট এক সাংবাদিক সম্মেলনে লি কুয়ান বলেছিলেন, ‘এটি আমার জন্য খুবই যন্ত্রণার মুহূর্ত, কারণ আমার সারাজীবন আমি এ দুই ভূ-খ-ের একত্রীকরণ ও ঐক্যে বিশ্বাস করে এসেছি। আপনারা জানেন আমাদের জনগণ, যারা ভূগোল, অর্থনীতি এবং সম্পর্কের মধ্য দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। তবে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক কিছুই আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকবে। আমরা সিঙ্গাপুরে বহু জাতিসত্তার সমন্বয়ে একটি জাতি পেতে যাচ্ছি, যেখানে সবাই সমভাবে নিজের ঠিকানা পাবে যা অবশ্যই ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মের ভিত্তিতে নয়’।
মালয়েশিয়া যখন সিঙ্গাপুরকে আলাদা করে দেয় তখন লি কুয়ানের কাছে মনে হয়েছিলো এ তো শরীর ছাড়া হৃৎপি-ইট বিকাম এ হার্ট উইদাউট বডি।

অথচ সেই সিঙ্গাপুর এখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরের সাফল্যের পেছনে একটি বড় কারণ সম্ভবত এই যে, সেখানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার একেবারেই নেই। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন লি কুয়ান। সব ধরনের অপরাধ ও দুর্নীতি বন্ধে নেয়া হয় শক্ত অবস্থান। নিষিদ্ধ করা হয় চুইংগাম, দেয়াল লিখন, পর্নোগ্রাফি। সিঙ্গাপুরকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ রাষ্ট্রে পরিণত করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম একটি বাসযোগ্য শহরে পরিণত করার একক কৃতিত্ব লি কুয়ানের। তিনি আধুনিক সিঙ্গাপুরের ‘জনক’ বা ‘স্থপতি’।

আমরা অনেকেই এখন সিঙ্গাপুর যাই। কিন্তু আমাদের চেয়ে সবদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা এতো ছোট এবং স্বল্প জনসংখ্যার একটি দেশ কীভাবে, কোন কৌশলে, কোন রাজনীতি অনুসরণ করে এতো সাফল্য পেলো তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো প্রশ্ন বা আত্মজিজ্ঞাসা আছে বলে মনে হয় না। আমরা গণতন্ত্র নিয়ে, ভোট নিয়ে, গদি দখল নিয়ে যতো সোচ্চার ও বিচলিত, মানুষকে মানুষের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে ততোটাই নীরব এবং নিষ্ক্রিয়।

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়