আর রাজী : স্বাধীনতার ব্যাপারটি নিয়ে আমার উৎস আজ, এখন এতোই কম যে নিজেই লজ্জা পাচ্ছি। এতো রক্ত, এতো ত্যাগ- সব যেন বৃথা যেতে বসেছে। এ দেশের মানুষ দিনের বেলা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রের পরিচালক নিযুক্ত করার স্বাধীনতা পর্যন্ত হারাতে বসেছে। ‘স্বাধীনতা তুমি যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’- এমন কথা তো এখন অচিন্তনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, আজকাল রাজনীতি/স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে যা লেখেন সেসব যে কী জিনিস তা তো নিজ চোখেই দেখছি। ২৬ মার্চ একই সাথে জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস। বিরাট ব্যাপার। দু’চার জন তরুণকে জিজ্ঞেস করি, ২৬ মার্চ ‘জাতীয় দিবস’ কবে, কে ঘোষণা করেছেন? তারা জানে না। জিজ্ঞেস করি, ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতা দিবস’ কবে ঘোষিত হয়েছে? তাও তারা ঠিক ঠাক জানে না। এসব জানার দরকার তেমন নাই। তবে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসে- তাই তরুণরা জানবে ভেবেছিলাম। আর একটা কারণ আছে জিজ্ঞাসার। ২৬ মার্চ যে জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস- এই নিয়ে কিছু জটিলতা আমার স্মৃতিকেও অস্বচ্ছ করে রেখেছে।
১৯৮০ সালের সালের অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়া যখন ২৬ মার্চকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন তখন আমার বাবা-চাচারা যে বিরক্ত হয়েছিলেন তা আমার মনে দাগ ফেলে রেখেছে। আওয়ামীপন্থী, বাম রাজনীতির সমর্থক ছিলেন তারা। জিয়াউর রহমানের কোনো কাজকেই ভালোভাবে দেখতে পারতেন না। সুতরাং ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু যে ২৬ মার্চকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন সেই দিনটিকেই আবার ১৯৮০ সালে এসে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবেও পালনের ঘোষণা- জিয়া নিশ্চয়ই কোনো দূরভিসন্ধি থেকে দিলেন- এই ছিলো তাদের অভিমত। উল্টোটাও হতে পারে, স্বাধীনতা দিবসকে একই সাথে জাতীয় দিবস হিসেবেও পালনের ঘোষণা- যেটাই হোক জিয়াউর রহমান একটা ‘খারাপ কাজ’ করেছিলেন- এই ভাব মনে গেঁথে গেছিলো।
আজ ভাবছি, জিয়াউর রহমান আসলেই কাজটা ঠিক করেননি। আমাদের গণহত্যা দিবস, জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস - এই সব দিবস পালন করার একটা অর্থ আছে বটে কিন্তু ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালনের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? আমরা বিজয়ী হয়েছি বটে কিন্তু স্বাধীনতা কি পেয়েছি? লেখক : বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :