শিরোনাম
◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত

প্রকাশিত : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:৩৮ দুপুর
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:৩৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলায় আন্দোলনের সূত্রপাত,ভিসি’র পদত্যাগের দাবী

খোকন আহম্মেদ হীরা : ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ মার্চ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে উদ্ভূত অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার স্বার্থে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিধি ২০১৩ এর ১১(১০) ধারা অনুযায়ী উপাচার্যকে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ২৮মার্চ থেকে বরিশাল বিশ্বাবিদ্যালয়ের সব ক্লাস, পরীক্ষাসহ যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।

একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেল পাঁচটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হলো। তবে নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তৃতীয়দিনের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা করেছেন। এদিকে বুধবার মধ্যরাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশের পর রাত তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা সবাই হল ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করে নোটিশের প্রতিবাদ করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলন থামাতে ভিসি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষনা করেছেন। ভিসির নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তার পদত্যাগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবীগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২৮ মার্চ সকাল থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ি একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছেন। পাশাপাশি আবাসিক ছাত্ররা কেউ হল ছাড়বে না বলেও বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন \ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা। লিখিত বক্তব্যে তারা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, গত তিন বছর যাবত বর্তমান উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেননি। উপাচার্য সামিয়ানা ঘেরাউ প্যান্ডেলে বসে চা চক্র করেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবী ছিলো জাতীয় দিবসগুলোতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়। গত ২৬ মার্চ উপাচার্য’র এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন। যার প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অন্যায় এবং স্বাধীনতা বিরোধী আয়োজনের প্রতিবাদ করেছেন। ধারাবাহিকতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বক্তব্য প্রত্যাহারের মুখ্য দাবীসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ২৫ মার্চ বাঙালির ইতিহাসে এক কালো দিন। এই কালো রাতেই পাকিস্তানী হানাদারদের পৈশাচিক ও নির্বিচারে হামলায় শত-সহ¯্র মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার রাজপথ। এটি বাঙ্গালির বেদনার, দুঃখের ও বিলাপের দিন। এমন একদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মাউন্টেন ডিউ নামের বহুজাতিক কোম্পানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে হিন্দি গান বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে তাদের বিপণন প্রচারনার সুযোগ করে দিয়েছে। এমন কর্মকান্ডে আমরা (শিক্ষার্থী) ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়েছি। অথচ একইস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অনুমতি দেয়া হয়না।

বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিকে বাঁধাগ্রস্থ করার লক্ষ্যে, ভয় পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে চোরের মত কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম এবং হল বন্ধ ঘোষনা করেন। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি বলতে চাই-হল ছেড়ে একজন ছাত্র-ছাত্রী কোথাও যাবেনা। তারই প্রেক্ষিতে যদি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, এই স্বাধীনতা বিরোধী উপাচার্যকে অবশ্যই তার বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্য ক্ষতা চাইতে হবে এবং তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতায় তিনি (উপাচার্য) পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, উপাচার্য’র অনৈতিক কর্মকান্ড এখানেই শেষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি এক অর্থ আত্মসাতের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছেন। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক ও তার সিন্ডিকেটের তিন বছর ১০ মাসের বিভিন্ন দুর্নীতির খন্ডচিত্র লিখিত আকারে ১১টি পয়েন্টে তুলে ধরেন। যারমধ্যে টিএ/ডিএ ও আপ্যায়ন বাবদ অর্থ হাতিয়ে নেয়া, উপাচার্য’র তিনজন গাড়িচালক ব্যবহার করা, গেষ্ট হাউস হিসেবে ভবন ভাড়া নিয়ে গেষ্ট না রেখে কক্ষগুলো নিজ দখলে রাখা, অবৈধভাবে ও অনিয়মের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক, দৈনিক ভিত্তিকসহ বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ দেয়া, পদোন্নতি দেয়া, স্নাতক শ্রেনির ভর্তির টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করা, শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট ক্লাশ রুম না থাকার পরেও ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিসির নতুন অফিস বানানো ইত্যাদি।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, জরিমানার নামের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযৌক্তিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে আসছে। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম, সিফাত আহমেদ, আলামিনসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। পরে তারা হল ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ক অনুযায়ী স্ব-স্ব হলে গিয়ে অবস্থান করেন।

তবে বিকেল পাঁচটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশে অনর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য বৃহস্পতিবার ঢাকায় অবস্থান করলেও তিনি সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস শিক্ষার্থীদের ব্যতিরেকে পালনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল হলের খাবার বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা পাঁচ দফা দাবী পেশ করেন। আন্দোলনকারীরা জানায়, ২৬ মার্চ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ভিসি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বললে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিসহ পূর্বের পাঁচ দফাসহ নতুন আরও পাঁচ দফা দাবী পেশ করেন এবং দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা করেন। যে আন্দোলন অদ্যবধি চলমান রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা এক দফা এক দাবী অর্থাৎ ভিসির পদত্যাগের দাবী জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক বলেন, যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে, সে রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। যেকারণে ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভবিক ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়