আবদুন নূর তুষার
জাসিন্ডা আরডার্ন হিজাব পড়েছেন। রেডিও-টিভিতে আজান প্রচারিত হয়েছে। বন্দুক নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন। বলেছেন সন্ত্রাসীর নাম তিনি মুখে নেবেন না। মোটর বাইক গ্যাং বলেছে তারা মুসলমানদের নামাজের নিরাপত্তা দেবে। খুশিতে বাগবাগ পৃথিবী।
১. জাসিন্ডা একবেলা হিজাব পড়লেই হিজাবের প্রতি বিদ্বেষ দূর হয় না। গোটা শ্বেতবিশ্বজুড়ে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ দূর হবে না। তাছাড়া একাত্মতা প্রকাশের জন্য অন্যের ধর্মীয় লেবাস পরতে হবে কেন? ধরা যাক একদল শিখ নিহত হলো, তাহলে কী দাড়ি রেখে পাগড়ি পরে শোক দেখাতে হবে? লেবাসী একাত্মতা একেবারেই লোক দেখানো প্রচারণা।
২. বন্দুকের আইন এতোদিন ছিলো কেন? কেন অনলাইনে বন্দুক বিক্রি হতো। কেন নিউজিল্যান্ডে আটচল্লিশ লাখ লোকের জন্য পনেরো লাখ বন্দুক আছে সাধারণ মানুষের কাছে? কেন টারান্টকে এ ক্যাটাগরি লাইসেন্স দেয়া হয়েছিলো? কারা দিয়েছিলো? তাদের শাস্তি হবে না কেন? আরামোয়ানা ম্যাসাকারের পরেও কেন সেমি অটোমেটিক ব্যান করা হয়নি? পুরো নিউজিল্যান্ড কেন এক মিনি সেনানিবাস? কেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনলাইনে অন্তর্বাস কেনার মতো সেমি অটোমেটিক ত্রিশ গুলির ম্যাগজিনসহ বন্দুক কেনা যায়। ৫টা আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো টারান্টের। আইনে বলা আছে বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নাকি বন্দুক কেনা যাবে। কোনো প্রাণীর জন্য একজনে কেনে পাঁচটা ও সবে মিলে পনেরো লাখ বন্দুক?
৩. রেডিও-টিভিতে আজান প্রচার করলে কী ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ কমবে? নাকি এতে শ্বেত ইসলামোফোবরা আরো গোস্বা হবে? এটা কী নিয়মিত হবে? যদি না হয় তবে এটা করে কী কোনো লাভ হবে?
৪. মোটরবাইক গ্যাংগুলো কী কোনো অনুকরণীয় কিছু? এ যেন গু-া দিয়ে মসজিদ পাহারা! মসজিদ পাহারা দিলে সেটা পুলিশের দেয়া উচিত। মাস্তান মার্কা বাইকার কেন?
৫. তিনি সন্ত্রাসীর নাম মুখে নেবেন না। কেন? যাতে সবাই ভুলে যায় তার নাম? কোনো মুসলিম সন্ত্রাসী হলে তার নাম ছবি সবই বলা ও ছাপা হয়। তিনি তাকে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সন্ত্রাসী বলতেও নারাজ। তিনি তাকে ক্রিশ্চিয়ান সন্ত্রাসী বলতেও নারাজ। তিনি তাকে নাম উহ্য রেখে কেবল সন্ত্রাসী বলবেন। কেন টারান্টকে ইসলামোফোব বলা হবে না। কেন তার বিচার নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট কথা হচ্ছে না?
সাদা শ্রেষ্ঠত্ব তথা নিও নাজীজমে বিশ্বাসী বিরাট জনগোষ্ঠীকে সশস্ত্র করে রেখে অন্যদের নিরাপত্তা দেয়া কী সম্ভব? যারা মরেছেন তাদের বারবার সংখ্যালঘু, মুসলিম বা অভিবাসী বলার মধ্যেই বর্ণবাদ লুকিয়ে আছে। আপনি সাদা চামড়া হলে আপনাকে এভাবে বলা হতো না। নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব দেবার পর নিহতদের পরিচয় হওয়া উচিত তারা নিউজিল্যান্ডার। অথচ বংশ পরম্পরায় তাদের ইমিগ্র্যান্ট বলা হবে। যেমন এতো ভালো খেলার পরেও এমবাপ্পেকে ফরাসিরা ইমিগ্র্যান্ট বংশ বলে পরিচয় দেয়। মানুষ হত্যাকে, মুসলিম হত্যা বলার মধ্যেও বর্ণবাদ আছে। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কেন হবে মৃতের ট্যাগলাইন। মানুষ মারলে সেটা অন্যায়। সে সংখ্যালঘু না গুরু, মুসলিম না শিখ , এটা বিবেচ্য হতে পারে না। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা সাদাদের ছিলো না। তারা দখল করেছে। তারপর এখন অন্যদের সেখানে ইমিগ্র্যান্ট বলে প্রবেশাধিকার রহিত করছে। আফ্রিকা, এশিয়াতে কলোনি করেছে, শোষণ করেছে।
এখন আবার সন্ত্রাস করছে শ্বেত শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করে। জাসিন্ডা যতোক্ষণ টারান্টের বিচার নিশ্চিত না করছেন, ততোক্ষণ এসব হিজাব পরে সালাম দিয়ে মন ভোলানোতে খুশি হয়ে লম্ফঝম্ফ করে তাকে নোবেল দেয়ার দাবি তোলা গড্ডলের কাজ, গড্ডলিকা প্রবাহ। (গড্ডল মানে ভেড়া, এক ভেড়া যেদিকে যায়, বাকিরাও সেদিকে যায়!)
টারান্টের বিচার করা ও শ্বেত বর্ণবাদিতা রোধে ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাওয়া, এই দুটি কাজ করা উচিত জাসিন্ডার। গণহত্যার দায়ে ব্রেন্টন টারান্টের বিচার করুন তিনি। জাপানি হলে বহু আগে পদত্যাগ করতে হতো তাকে। লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :