শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০১৯, ০২:১৯ রাত
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০১৯, ০২:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিঙ্গাপুরে আইন না মানা বা অমান্য করার সুযোগ কারো নেই

বিভুরঞ্জন সরকার : স্বল্প সময়ে অবস্থানকালেই সিঙ্গাপুরের বিস্ময়কর পরিবর্তন সম্পর্কে নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজটি খুব সহজ ছিলো না। সিঙ্গাপুরে পূর্ব পরিচিত কেউ না থাকায় কাজটি আরো কঠিন হয়েছে। শ্রমজীবী যেসব বাঙালি সিঙ্গাপুরে আছেন তারা সেখানকার সরকার ও রাজনীতি সম্পর্কে খুববেশি উৎসাহী বলে মনে হয়নি। দশ বছর ধরে সিঙ্গাপুর আছেন এমন একজন বাংলাদেশির কাছে সেদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নাম জানতে চেয়েছি। তিনি বলতে পারেনি। তারপরও আমার আগ্রহ থেকে যতোটুকু জানতে পেরেছি তাই পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।

আগেই বলেছি, সিঙ্গাপুর একটি ছোট্ট নগর রাষ্ট্র। বর্তমানে জনসংখ্যা ৫৫ থেকে ৬০ লাখের মতো। ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট মালয় ফেডারেশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিঙ্গাপুর যখন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন এটি ছিলো একটি জেলে পল্লি মাত্র। এই জেলে পল্লিসম দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ। তিনি তখন ছিলেন ২০ লাখ মানুষের নেতা। মূলত লি কুয়ানই হচ্ছেন আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ সিঙ্গাপুরের স্রষ্টা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে সিঙ্গাপুর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই প্রথমে উন্নয়নশীল এবং বর্তমানে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে চলে আসে। লি কুয়ান ন্যায়সঙ্গত শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে পুঁজিবাদী ধাঁচে সিঙ্গাপুরকে একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনি একজন শক্তিধর রাষ্ট্র নায়ক তথা সফল সরকার পরিচালক হিসেবে দুনিয়াজুড়েই পরিচিতি অর্জন করেছিলেন।

লি কুয়ান মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯৫৯ সালে স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীন সিঙ্গাপুরের যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ৪২ বছর। তার সহকর্মীদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী।

লি কুয়ান পরবর্তী সময়ে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন : ‘আমি তাদের সকলের চেয়ে বয়সে কনিষ্ঠ ছিলাম। তারপরেও তারা কখনো আমার কোনো কাজে বাধা দেননি। নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়েও দেননি। এমন কি আমি যখন কোনো ভুল করেছি, তখনও তারা আমার বিরোধিতা করেননি। তারা সব সময় আমাকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে অবস্থান করতে সহায়তা করেছেন এবং আমার ভেতরে যেন ‘মুই কি হনু রে’ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আত্মম্ভরিতার প্রকাশ না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন থেকেছেন’। অর্থাৎ লি কুয়ানের সাফল্যের পেছনে একটি বড় কারণ তিনি একদল বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সহকর্মী পেয়েছিলেন। তাদের সমর্থন-সহযোগিতা তার পথ চলায় শক্তি যুগিয়েছিলো।

শুধু কি তাই? লি কুয়ান সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বুঝেছিলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিরতা একটি জরুরি বিষয়। তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যেকোনো ধরনের কঠোরতা দেখাতে পিছ পা হননি।

উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন তিনি। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো দ্বিধা করেননি, কোনো ধরনের ছাড় দেননি।

ইউরোপ-আমেরিকার মতো সিঙ্গাপুরে এতো মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদির চর্চা নেই। সেখানে গণতন্ত্রের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হয় না কাউকে। বিশৃঙ্খলা কঠোর হাতে দমন করা হয়। সিঙ্গাপুরে রাজনৈতিক দল আছে অনেক। কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একটি দলই শাসন ক্ষমতায় আছে। ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতাসীন দল সরকার গঠন করে। বিরোধী দলের জনসমর্থন একেবারেই কম। ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়ার জন্য প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। পুরো নগর রাষ্ট্রটি কঠোর নিয়ম-নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত।

আইনের কড়াকড়ি সিঙ্গাপুরে প্রবল। আইন না মানা বা অমান্য করার সুযোগ কারো নেই। আইনের প্রশ্নে কারো কোনো ছাড় নেই, কোনো নমনীয়তা নেই। এখনও বেত্রাঘাত, মৃত্যুদ-ের মতো কঠিন শাস্তি বহাল আছে। নিজেদের ভালোমন্দের ব্যাপারে সিঙ্গাপুর পরদেশের পরামর্শ শোনে না, গ্রাহ্য করে না।
উন্নয়নের জন্য লি কুয়ান বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েও ‘মানবাধিকার’ প্রশ্নে সমালোচিত কিন্তু বাইরের সমালোচনায় হলেও শক্ত হাতে দেশ শাসনের নীতি থেকে তিনি পিছু হটেননি। তিনি ছিলেন তার ভেতরের শক্তিতে বলীয়ান। বিরোধীদের ব্যাপারে তার উদারতা, সহনশীলতা ছিলো কম। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণবিক্ষোভ, মিছিল-সমাবেশ ইত্যাদি নিয়ে কাউকে খুব উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় না। তারপরও সিঙ্গাপুরের মানুষ কেন সরকারবিরোধী নয়? এক দলকেই কেন বারবার ক্ষমতায় রাখা হচ্ছে? মানুষ কেন পরিবর্তন-প্রত্যাশী নয়?

এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করবো পরে।

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়