আশরাফুল হক : ২০০২ সালে বিশ্বের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের বিচারে সর্বকালের সেরা ১০ পরিচালকের মধ্যে তার স্থান সপ্তম, সে তালিকায় তার অবস্থান ইঙ্গমার বার্গম্যান ও জঁ রেনোয়ার উপরে। বিলি ওয়াইল্ডার সিনেমায় কমেডি, সাসপেন্স ও ড্রামার অসাধারণ সমন্বয় ঘটাতেন। তার সময়ে তিনি ছিলেন হলিউডের সবচেয়ে দর্শকনন্দিত পরিচালকদের একজন।
তার বিভিন্ন ছবি ব্যাপক বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিলো। হ্যাঁ, অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক বিলি ওয়াইল্ডারের কথাই বলা হচ্ছে। ১৯০৬ সালের ২২ জুন পোল্যান্ডে তার জন্ম। আইনের ছাত্র ছিলেন, কিন্তু পড়াশোনা শেষ না করেই সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। পরে ১৯২৯ সাল থেকে বিভিন্ন জার্মান সিনেমার চিত্রনাট্য লিখতে থাকেন, কিন্তু হিটলার ক্ষমতায় এলে ইহুদি ওয়াইল্ডারকে ১৯৩৩ সালে জার্মানি ছাড়তে হয় এবং তিনি প্রথমে প্যারিস ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে যান। হলিউডে চার্লস ব্র্যাকেট ও বিলি ওয়াইল্ডার ‘মিডনাইট’ (১৯৩৯), ‘নিনোৎচকা’ (১৯৩৯), ‘বল অব ফায়ার’ (৪২) প্রভৃতি সিনেমার যুগ্ম চিত্রনাট্যকাররূপে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা পান।
পরে ‘ফাইভ গ্রেভস টু কায়রো’ (১৯৪৩), ‘ডাবল ইনডেমনিটি’ (১৯৪৪), ‘দি লস্ট উইকএন্ড’ (১৯৪৫), ‘সানসেট বুলভার্ড’ (১৯৫০), ‘সাম লাইক ইট হট’ (১৯৫৯), ‘দি অ্যাপার্টমেন্ট’ (১৯৬০) প্রভৃতি সিনেমার মধ্য দিয়ে বিলি ওয়াইল্ডার হলিউডের সবচেয়ে পরিশীলিত পরিচালকদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। হলিউডের সিনেমায় বিলি ওয়াইল্ডার নিয়ে এসেছিলেন এক বহিরাগতের দৃষ্টিভঙ্গি, তীক্ষè এ দৃষ্টি, সরসভাবেও কখনও কখনও হয়তো তিক্ত সরসভাবেই, মার্কিন সমাজের অন্তর্গত নিষ্ঠুরতা ও প্রচ্ছন্ন অ্যাবসার্ডিটিকে সুলিখিত চিত্রনাট্যের মধ্য দিয়ে অসাধারণ বৈচিত্র্যের সঙ্গে পর্দায় তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে একজন কর্নেল হিসেবে বার্লিনে থাকার সময় তিনি ‘এ ফরেন অ্যাফেয়ার’ (১৯৪৮) নামে যে সিনেমাটি করেন, তা তৎকালীন জার্মানির এক অতি বিশ্বস্ত চিত্ররূপ হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা পায়। দু’একটি সিনেমাতে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। তার শেষ দিককার সিনেমাগুলোয় তিনি সমকালীন ড্রামা ও তিক্ত কমেডি থেকে সরে এসেছেন ভারি প্রহসনের দিকে। যেমন ‘বাডি বাডি’ (১৯৮১)। তবু সেসব সিনেমায়ও তার আপন বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট পরিচয় মেলে। বিলি ওয়াইল্ডার ২০০২ সালের ২৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে মারা যান। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :