শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০১৯, ০৪:২৫ সকাল
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০১৯, ০৪:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানবিক পৃথিবী, জাসিন্ডা আরডার্ন, ফরিদ আহমেদ ও সানি লিওন

কাকন রেজা : দক্ষিণ এশিয় রাজনীতি সবসময়ই চমকদার। চমকিত হয়েছিলাম তেমনি একটি খবরের শিরোনামে। ‘এবার রাজনীতিতে সানি লিওন’, এমন শিরোনামে চমকিত হওয়ারই কথা। তবে গণমাধ্যম জানালো, সানি দক্ষিণ ভারতীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চরিত্রে অভিনয় করবেন। মনে হলো ঠিকই আছে, দক্ষিণ এশীয় অনেক রাজনীতিবিদের সঙ্গে সানির অনেকটাই মিল আছে। সুতরাং চরিত্র বুঝতে সানির খুব একটা অসুবিধা হবে না। সানিও অভিনয় করেন, অনেক রাজনীতিকরাও তাই করেন। নচিকেতার একটা গান আছে ‘তোকে মন্ত্রী বানাবো’, সেখানে বলা হয়েছে কীভাবে মন্ত্রী হতে হয়। গানটি শুনলে বোঝা যায়, অভিনয় শেখাটা হালের রাজনীতির জন্য অনেকটাই জরুরি।

সানি উপার্জনের জন্য আগে যা করতেন তাকে স্খলিতদের পেশা হিসাবে আখ্যা দেয়া যায়। সানির তো শরীরের স্খলন ছিলো, কিন্তু রাজনীতির স্খলন হয় মানসিকতার। সানির সঙ্গে অমনসব রাজনীতিবিদদের পার্থক্য এখানেই। তবে কমন বিষয়টি হলো ‘স্খলন’। এই ‘কমন’টুকু রাজনীতিবিদের চরিত্রে কাজ করা সানির জন্য খুব সহায়ক হবে। তবে উন্নত বিশ্বের রাজনীতিও বোধহয় অন্য রকম উচ্চতার, কিছু উদাহরণ অন্তত তাই বলে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কথাই ধরুন। তিনি তো সবার মন জিতে নিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে টেররিস্ট হামলার পরবর্তী কার্যক্রমে। তিনি নিজ দেশের মুসলিম কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছেন তার দায়িত্ব হিসাবে, এখানে রাজনৈতিক কোনো স্টান্টবাজি নেই।

নেই গিøসারিন দিয়ে চোখ ভেজানোর কোনো সিকোয়েন্স। ভারতে ময়লা ফেলে ময়লা পরিষ্কারের একটি ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো, সম্প্রতি আমরা তার সিক্যুয়াল করেছি এবং সে সিক্যুয়ালও যথারীতি ভাইরাল। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এমন স্টান্টবাজির বিপরীতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। মুসলমানদের বুঝিয়েছেন, তিনি তাদের পাশে আছেন। তার কাজকর্ম মুসলমানদের তো আপ্লুত করেছেই, সারাবিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের কাছেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।

এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিশ্ব নেতাদের শেখার অনেক কিছুই রয়েছে। শেখার রয়েছে নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলমানদের কাছ থেকেও। টেররিস্ট অ্যাটাকে নিহত হয়েছেন ফরিদ আহমেদের স্ত্রী। যিনি নিজে পঙ্গু, যার দেখভাল করতেন হামলায় নিহত স্ত্রী। সেই ফরিদ আহমেদ বলেছেন, তিনি তার স্ত্রীর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সেই হত্যাকারীর জন্য প্রার্থনাও করবেন। এ নিয়ে বিবিসি নিউজের ১৮ মার্চের টপ স্টোরিতে ছিলো, ‘ঈযৎরংঃপযঁৎপয ংযড়ড়ঃরহম ংঁৎারাড়ৎ ংধুং যব ভড়ৎমরাব যরং রিভবং শরষষবৎ’, এটাই ইসলাম, যার পরতে পরতে রয়েছে শান্তির আহŸান। রয়েছেন ফারুক আহমেদের মতো মুসলমানরা, রয়েছেন জাসিন্ডা আরডার্নের মতো সরকারপ্রধান, যারা ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার চর্চা করেন, মানবতাকে আদর্শ ভাবেন।

সানি লিওনের কথা বলছিলাম, তিনি হয়তো দক্ষিণ ভারতীয় কোনো রাজনীতিবিদের চরিত্রায়ন করতে পারবেন, কিন্তু জাসিন্ডা আরডার্নের চরিত্র তুলে ধরা একজন পারফেকশনিস্টের পক্ষেই সম্ভব। নারীবাদীরা হয়তো বলবেন, এতে সানি লিওনের অবমাননা হয়েছে। গড় অর্থে অর্থাৎ সবাই সমান এমন স্থ‚ল চিন্তায় অবমাননার বিষয়টি হয়তো আপাত ঠিক। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, সবাইকে দিয়ে কিসব কাজ হয়? হয় না। আমির খানের কাজ হালের টাইগারকে দিয়ে হবে না। কাজের ক্ষেত্রে সবারই একটি নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাই। প্রতিটি মানুষই তার চিন্তার স্বকীয়তায় নিজ জায়গা করে নেন। সব বিপ্লবীই সূর্য সেন কিংবা সিরাজ শিকদার হতে পারেন না। সব সরকারপ্রধান হতে পারেন না ‘জাসিন্ডা আরডার্ন’। শান্তির ধর্মের অনুসারী হয়েও সব মুসলিম হয়ে উঠতে পারেন না ‘ফরিদ আহমেদ’। ঘৃণার চর্চার বিপরীতে ভালোবাসা চাষেÑএকজন জাসিন্ডা আরডার্ন, একজন ফরিদ আহমেদ সবখানে দরকার। চিন্তার উৎকর্ষতায় যার যার জায়গা থেকে নিজেকে তেমন করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। যেমন নেই নিশ্চিত জীবনযাপনে মানবিক পৃথিবীর বিকল্প।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়