জিয়ারুল হক : বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ির কাছেই ছিলো লন্ডন প্রবাসী নাজমা কবিরের বাড়ি, ধানমন্ডির ২৯ নম্বর রোড। ৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে তিনি পাকবাহীনির যাবতীয় নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছেন। বিবিসি বাংলা
২৫ মার্চের ঘটনা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২৫শে মার্চ ছিলো আমার ছোট বোনের জন্মদিন। তখন আমার বয়সও বেশি নয়। অনুষ্ঠান শেষে সবার ফিরে যেতে কিছুটা দেরিই হলো। আমরাও এক পর্যায়ে ঘুমোতে যাই। হঠাৎ কয়েকজন লোক দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। তারা আমাদের বাড়িতে আশ্রয় চাইলো এবং আশ্রয়ও পেলো। আব্বা আম্মা ফাঁকে আর্মির নানা আয়োজন কিছুটা আন্দাজ করেছিলেন। তারা অনুমান করলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কিছু একটা ঘটছে অথবা ঘটতে চলেছে। তার বাড়িতে যে আক্রমন হবে তা আমরা ছোটরাও বুঝতে পারছিলাম। আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ মাস আমাদের বাড়িতেই ছিলাম। আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার কোন সুযোগ ছিলো না। ফলে অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছি।
যাহোক, আমরা নিশ্চিত ছিলাম, হয় বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যাবে অথবা এর চেয়েও খারাপ কিছু ঘটবে।
কেমন ছিলো ২৬ মার্চের সকাল ? বিবিসির এ প্রশ্নে ড. নাজমা কবির বলেন, সকাল হতেই পাক আর্মি মাইকিং করে সকলকে তাদের বাড়ি থেকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলো। পতাকা না নামালে বাড়ি পুড়িয়ে ফেলবে। আমাদের বাড়ির ছাদে টানানো পতাকা আমাকেই নামিয়ে আনতে বললেন আব্বা। তখন ছাদের সিঁড়ি ছিলো না। খুব কষ্টে ছাদে উঠে দেখি আজিমপুর, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলছে। আমরা জানি না ঢাকা জুড়ে কি হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে কী মেরে ফেলেছে পাকিস্তানিরা ?
সাধের ও স্বপ্নের পতাকা নামাতে গিয়ে কি অনুভুতি হলো, বিবিসির এ প্রশ্নে ড. নাজমা বলেন, সে অনুভুতির কথা বলে বোঝানো যাবে না। তিনি বলেন, পতাকা উত্তোলনের সময় যে আবেগ ও আনন্দ ছিলো নামানোর সময় মনটা ভীষণ ভেঙ্গে যায়। সে যে কী গভীর কষ্ট। ওই পতাকা আমরা ঘরে বানিয়েছিলাম। সেই স্বপ্ন আমাদের চুরমার হয়ে গেল।
আপনার মতামত লিখুন :