শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫২ রাত
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২০৪১ সালের মধ্যে হয়তো আমরা উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো

প্রফেসর ড. এম এ মাননান : স্বাধীন আমরা, স্বাধীনতা আমাদের সে তো অনেক বছর হয়ে গেছে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী। এর মধ্যে আমাদের অনেক অর্জন আছে, আছে ব্যর্থতাও। তবে অর্জনগুলোর দিকে যদি একটু তাকাই তাহলে প্রথমে আসবে আমাদের স্বাধীনতা লাভ। আমরা একটি স্বাধীন মানচিত্র পেয়েছি, যা বাঙালিদের জন্য প্রথম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ত অহংকারের জায়গা বা অর্জন হচ্ছেÑবিশ্বজুড়ে এখন বাংলাদেশ। এই একটা স্লোগান এখন রীতিমতো প্রায় সব জায়গাই প্রচারিত হচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইউনেস্কো কর্তৃক এই স্বীকৃতি মিলেছে। প্রায় এক কোটি মানুষ এখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাস করছে। বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরছে। যা আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। অনেক বড় পাওয়া। আনন্দের, ভালোলাগার ও গর্বের।

আমরা এখন নি¤œ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের জিডিপি যেখানে তিন থেকে চার পারসেন্ট ছিলো, এখন সাত পারসেন্টের ঘরে। এই জায়গায় কয়েক বছরে ধরেই আমরা অবস্থান করছি। আমাদের জিডিপি ভালো। পৃথিবীর দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম দেশ হিসেবে স্বীকৃত। এখানে দারিদ্র্যের হার অনেক দ্রুত কমছে। ২২-২৫ পারসেন্টের মধ্যে এখন আমাদের দারিদ্র্যের হার। কয়েক বছর আগেও যা অনেক বেশি ছিলো। বাংলাদেশ ডিজিটাল, সব জায়গায় তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া। তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেকে উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করেছে। দেশও এগিয়ে যাচ্ছে তার কাক্সিক্ষত গন্তব্যে।

এককালে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কেউ চিন্তা-ভাবনাই করতো না, এখন তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে একটা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। প্রায় প্রত্যেকটি সেক্টরেই তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। বিশেষ করে মুঠোফোন এবং ইন্টারনেট ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে, যেটি আগে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। যদি দেশ স্বাধীন না হতো হয়তো আমরা এ রকম পর্যায়ে পৌঁছতে আরও একশো বছরেও পারতাম কিনা সন্দেহ। স্বাধীনতা লাভের ফলেই শিক্ষা ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। যেটি পৃথিবীর খুব কম দেশই পেরেছে। যেমন প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি আমরা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করেছি। প্রাথমিক, মাধ্যমিকে অনেক আগেই আমাদের জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে। আর উচ্চ শিক্ষায় মেয়েদের ভর্তির হার প্রায় ৪৪ শতাংশ। এটা স্বাধীনতার পরে ২ অথবা ৩ পারসেন্ট ছিলো। পৃথিবীর কোনো দেশেই ৩৬ কোটি পাঠ্যবই বছরের প্রথমদিনেই বিনামূল্যে সরবরাহ করতে পারেনি, পারবেও না। কিন্তু বাংলাদেশ পেরেছে। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ একটা রোল মডেল। এটা একটা অকল্পনীয় অর্জন বলে মনে হয় আমার।

দেশে উচ্চ শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। এখন প্রায় ১৩০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে এমনটি পাকিস্তান আমলে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। এগুলো বিশাল অর্জন। একসময় লোডশেডিং আমাদের দুর্ভোগের আরেক নাম। সেই দুর্ভোগ এখন হাওয়া। ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুৎ। লোডশেডিংও প্রায় উধাও। কোথাও লোডশেডিং নেই বললেই চলে। পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের মাত্রা বহু অংশে হ্রাস পেয়েছে। আর সৌর বিদ্যুতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এই সময়ের মধ্যে। ৪৬ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে।৭২ সালে যেখানে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প দু’একটা কোম্পানি দিয়ে শুরু হয়েছিলো এখন এখানে সাড়ে চার হাজারের বেশি গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছি আমরা সারা পৃথিবীতে। বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। পাকিস্তান আমলে এটি আমরা কল্পনাও কী করতে পেরেছি?

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এটি আরেকটি বিপ্লব।প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সারা পৃথিবীতে ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে আমাদের। ৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলো, ৮৫-এর প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কয়েক লাখ মানুষ মারা যায়, কিন্তু এখন খুব বেশি লোক মারা যায় না বললেই চলে। কারণ বিশেষ কতোগুলো কৌশল উদ্ভাবন হয়েছে এখানে। টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের কারণে যথাযথভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা হচ্ছে। জঙ্গি দমনেও আমাদের অনেক সাফল্য রয়েছে, যা পৃথিবির কোনো দেশে এতো সাফল্য পায়নি। যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পেরেছি এবং ইতিহাস বিকৃতি ঠেকাতে পেরেছি।সফলতার পাশাপাশি আমাদের বেশ কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। একটা দেশে সবকিছু সফল হবে এমনটি আশাও করতে পারি না আমরা।

যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের জেন্ডার সমতা বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু প্রাইমারিতে ড্রপআউটের হারটা আমরা কমাতে পারছি না। ড্রপআউটের হার এখনো ৪০-এর ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এখানে আমাদের একটা বিশেষ উদ্যোগ নেয়া দরকার। আর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছেÑখাদ্যে ভেজাল একেবারেই কমানো সম্ভব হয়নি। যেসব উদ্যোগ নেয়া হয় সেগুলো সঠিক বলেও মনে হয় না। বাস্তবায়নও সঠিকভাবে হয় না। আইন আছে, আইনের প্রয়োগ হয় না। অথচ এই ভেজাল খাদ্যের কারণে আমাদের কয়েক কোটি লোক বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের জীবনশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে একটু মনোযোগ দেয়া দরকার।বাংলাদেশের সম্ভাবনা বিপুল। শিল্প ক্ষেত্রে যেভাবে বৈদেশিক সাহায্য নেয়া হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, যদি সঠিকভাবে তাদের সুযোগ-সুবিধা সরকার দিতে পারে তাহলে এখানে শিল্পায়নটা খুব ভালোভাবে হবে। শিল্পায়ন হলেই আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও অনেক বেড়ে যাবে।

২০৪১ সালের মধ্যে হয়তো আমরা উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো। এখন যেভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে এটা তেমন আশানুরূপ নয়। ভবিষ্যৎ আছে। অনেক দেশ অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আসছে বাংলাদেশে তাদের জন্য একটা শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা খুব দরকার। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ব্যাংকিং সেক্টরের শৃঙ্খলার যে অভাব দেখি আমরা, এটাকে যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না করা যায়, ঠিক না করা যায় তাহলে আমাদের অগ্রগতি অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে। চ্যালেঞ্জ তো বিভিন্ন রকম হয়। যেমন আমি মনে করি রাজনৈতিক ঐকমত্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব মানুষ সব দল মিলে যদি আমরা শুধু দেশের উন্নতির কথা ভাবী, দেশের শান্তির কথা ভাবী, একটি অখ- বাংলাদেশের কথা ভাবী, একটি সুন্দর বাংলাদেশের কথা ভাবী তাহলে এ দেশের গণতন্ত্র যেমন পাকাপোক্ত হবে, ঠিক তেমনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারবো। তাই উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সবার ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিকল্প নেই।পরিচিতি : ভিসি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়