শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৩৯ রাত
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এরশাদ : দো দেল বান্দা কলেমা চোর

বিভুরঞ্জন সরকার : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পেন্ডুলামের মতো দুলছেন। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্তেই তিনি স্থির থাকতে পারেন না। এই একটা বলছেন তো পরমুহূর্তেই বলছেন ভিন্ন কথা। কথা বদলের রেকর্ড করে ফেলেছেন তিনি। ফলে তার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। তিনি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে আট বছরের বেশি সময় দোর্দ-প্রতাপের সঙ্গেই দেশ শাসন করেছেন। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। ক্ষমতা ছাড়ার পর যেন তিনি বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। নিজের জেলা রংপুরের মানুষ তাকে ভালোবাসা উজাড় করে দেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাঁচটি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহৎ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেশের ক্ষমতার রাজনীতির জন্য একটি বড় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়ান। ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরোধিতা তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি এই দু’দলের কাছেই আদরণীয় হয়ে ওঠেন। তার দোলাচল চিত্তবৃত্তিও বেড়ে যায়। একবার এদিকে হেলে পড়েন, আবার ওদিকে। যাক, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকাটাকেই তিনি নিরাপদ মনে করেন। আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়ার পরও বিএনপি তাকে নিয়ে টানাটানি কম করেনি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এরশাদের সমর্থন একটি বড় ব্যাপার হওয়ায় এরশাদ নিজেই আবার ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপরে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে এরশাদ নিজেকে একজন পাকা খেলোয়াড় ভাবতে থাকেন।

রাজনীতিতে এরশাদ হয়তো আরো ভালো করতে পারতেন, কিন্তু তাকে ডুবিয়েছে তার অস্থিরতা। নারী নেত্রী নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে তেমন উচ্ছ্বাস ছিলো না। হাসিনা-খালেদার হাত থেকে বেরিয়ে আসার আগ্রহ যাদের মধ্যে ছিলো প্রবল তারা এরশাদের পেছনে হয়তো সমবেত হতো, যদি এরশাদ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারতেন। অস্থিরমতি এরশাদ নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছেন। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘দো দেল বান্দা কলেমা চোর, না পায় শ্মশান না পায় গোর’। এরশাদ যদি মনস্থির করে রাজনীতির মাঠে থাকতেন তাহলে জাতীয় পার্টিতে আজ যে গৃহদাহ চলছে তা হয়তো হতো না।

এরশাদের বয়স হয়েছে। এখন তিনি ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সম্ভবত এ কারণে তার অস্থিরতাও বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে তিনি ছোট ভাই জি এম কাদেরকে তার উত্তরসূরি মনোনীত করেন। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব দেন। স্ত্রী রওশন এরশাদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়। এতে নিশ্চয়ই তার গৃহবিবাদ চরম আকার ধারণ করে। ভাইকে ক্ষমতায়িত করাটা জাতীয় পার্টির অনেকেই পছন্দ করেনি। রওশন তো নয়ই। ভেতরে ভেতরে পানি গরম হচ্ছিলো, যার উত্তাপ এখন বাইরে ছড়িয়েছে। তিন মাস যেতে না যেতেই জি এম কাদের তার দায়িত্ব থেকে অপসারিত হয়েছেন। রওশন এরশাদকে করা হয়েছে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা। বেচারা জি এম কাদের! গণমাধ্যমে খবর হওয়ার আগে জানতেও পারলেন না বড় ভাই তাকে এভাবে ‘দুর্বল’ করে তার চেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল ভাবিকে ‘সবল’ করে তুলবেন!

কেন এরশাদ এই পরিবর্তন আনলেন? এতে কী জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে কোনো বিশেষ সুবিধা পাবে? জি এম কাদেরের চেয়ে রওশন কী বেশি সক্ষম? না, এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর কারো জানা নেই। যা জানার তা জানেন শুধু এরশাদ। তার মনের কথা অন্য কারো জানার উপায় নেই। এরশাদ নাকি ছোট ভাইকে বলেছেন, ‘চিন্তা করার দরকার নেই। আমি দেখবো’। এরশাদের এই আশ্বাস কী জি এম কাদেরকে আরো বেশি চিন্তায় ফেলবে না? কারণ তিনি দেখতে দেখতে এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছেন যে, তার আর দেখার খুব সময় নেই। তবে আশার কথা এটাই যে, জাতীয় পার্টির এই গৃহবিবাদ এখন আর জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে না।

লেখক : যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়